কর্মীর যোগ্যতা ব্যাংকিং খাতের প্রধান শক্তি
সেমিনারে বক্তারা
জাফর আহমদ: ব্যাংকিংখাতে কর্মকর্তার যোগাযোগ, সততা, আন্ত:ব্যক্তিক যোগাযোগ, ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতার জোর দিয়েছেন বক্তারা। তারা বলেছেন, কোন ব্যাংকে কর্মীরা যদি দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন হয় তাহলে ব্যাংকের মূলধন, তারল্যসহ অন্য কিছু ঘাটতি থাকলেও তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। কিন্তু জনবল যদি দক্ষ না হয় তাহলে অন্য সবকিছু বৃথা হয়ে যায়।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম মিলনায়তনে ‘ব্যাংকের মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা-২০১৬ সালের ওপর পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইবিএমের সহযোগি অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মূল প্রবন্ধে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে হার্ড স্কিল হল ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড পেমেন্ট, ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, শিক্ষাগত সনদ, ট্রেজারি অপারেশন, ঋণ ব্যবস্থাপনার মতো দক্ষতা। যা ব্যাংকিং খাতের একজন কর্মীর মোট দক্ষতার ২০ শতাংশ হতে হবে। কিন্তু বাংলাদেশের এক্ষত্রে উল্টো চিত্র। এতে আরও বলা হয়েছে, সিআইবির আদলে ব্যাংক কর্মীদের তথ্য ভান্ডার গড়ে তুলতে হবে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেয়ার পাশাপাশি নৈতিকতা যাচাই করতে হবে। একই সঙ্গে মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমন্বিত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা যেতে পারে। বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরীর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ, পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী, বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক ইয়াছিন আলি, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম. এহসানুল হক এবং ওয়ান ব্যাংকের অতিরিক্ত উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক জন সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকিং খাতের মানব সম্পদ সঠিকভাবে ব্যবহারের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে কয়েকটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এর বাইরে ব্যাংকের নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি, উৎসব ভাতা এবং দিবা যত্ম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করেছে। তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে মানব সম্পদ বিভাগ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০০৭-০৮ সালে আর্থিক সংকটের পিছনে মানব সম্পদ বিভাগের কিছু ভুল নির্দেশনা অনেকাংশে দায়ী।
বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, মানব সম্পদ বিভাগকে শুধু বদলির জন্য ব্যবহার না করে ব্যাংকিং খাতের গুরুত্বপূর্ণ আরও অনেক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাতের মানব সম্পদ বিভাগের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করছে বিআইবিএম। যা আগামী দিনে গতিশীল ব্যাংকিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এবং বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে সৎ লোক প্রয়োজন। খারাপ ব্যাংকে ভালো লোক নিয়োগ পেলে মুনাফায় ফিরতে পারে। আবার বেসিক ব্যাংকের মতো ভালো ব্যাংকে খারাপ ব্যবস্থাপক নিয়োগ দেয়ায় ক্ষতি হতে পারে। তিনি ব্যাংকের নতুন নিয়োগ পাওয়ায় কর্মকর্তাদের দীর্ঘ মেয়াদে প্রশিক্ষণের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি একটি নির্দিষ্ট সময় পর ব্যাংকারদের পুনরায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার কথা বলেন। পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, ব্যাংকিং খাতে গতিশীলতা আনতে প্রশিক্ষণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেক ব্যাংকের ট্রেনিং ইনস্টিটিউটকে সকল সুবিধাসহ মেধা সম্পন্ন অনুষদ নিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকারদের জ্ঞান এবং দক্ষতা বাড়াতে ডিপ্লোমা এবং অন্যান্য প্রফেশনাল পরীক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। ব্যাংকারদের নীতি-নৈতিকতা মেনে কাজ করার ওপর জোরারোপ করেন তিনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকিং খাতে চাকরি অনিশ্চয়তা এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।