হৃদরোগের চিকিৎসায় পেসমেকার নিয়েও সরকারের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন
রিকু আমির : দীর্ঘদিন পর হৃদপি-ে স্ট্যান্ট বা রিং পরানোর উপর সরকার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলেও পেসমেকার নিয়ে মনমতো বাণিজ্যের সুযোগ থেকেই যাচ্ছে। অধিকাংশ হৃদরোগী পেসমেকার সম্পর্কে অজ্ঞ হওয়ার সুযোগে কিছু চিকিৎসক, আমদানিকারক লাগামহীনভাবে দীর্ঘদিন রোগীদের পকেট কাটছে বলে অভিযোগ আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কার্ডিয়াক সার্জন বৃহস্পতিবার এ প্রতিবেদককে বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পেসমেকার কোনটা ভালো, মন্দ, দরদাম এসব নির্ভর করতে হয় চিকিৎসকদের উপর। এক্ষেত্রে কেউ কেউ বাণিজ্য করাটা অস্বাভাবিক নয়।
পেসমেকার এক ধরনের ডিভাইস, যা অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশে এটি সম্পূর্ণ আমদানি নির্ভর। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালসহ দেশের বেশ কিছু হাসপাতালে পেসমেকার স্থাপন করা হয়। তবে সরকারি পর্যায়ে এই সুবিধা খুবই সীমিত। বেসরকারি হাসপাতাল থেকে এই সুবিধা গ্রহণ করা গেলেও গুনতে হয় মোটা দাগের অর্থ। বিভিন্ন ধরনের পেসমেকার পাওয়া যায়। রয়েছে তারবিহীন, তারযুক্ত ডিভাইস। আবার আছে আরসিটি ডিভাইস। এটি অত্যাধুনিক। মান ভেদে শুধু ডিভাইস ক্রয়েই খরচ পড়ে ৮০ হাজার থেকে ২১ লাখ টাকা পর্যন্ত। এটি স্থাপন করতেও নেওয়া হয় চার্জ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে নেওয়া হয় ১০/১২ হাজার টাকা, ইব্রাহিম কার্ডিয়াক, ইউনাইটেড হাসপাতালসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে স্থাপন খরচ নেওয়া হয় ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে মানভেদে খরচ পড়ে ৩০ হাজার রূপি থেকে এক লাখ রূপি বা তার চেয়ে কিছু বেশি।
৫০০ শয্যার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের প্রধান ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আসাদুল মিল্লাত বৃহস্পতিবার বিকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, স্ট্যান্ট-এর মূল্যের মত পেসমেকারের মূল্যও বেঁধে দেওয়া সময়ের দাবি। সবার পক্ষে সম্ভব হয় না খুব দাম দিয়ে পেসমেকার ব্যবহারের।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন কার্ডিওলজিস্টের দাবি- পেসমেকারের মূল্য বেঁধে দেওয়ার আগে উৎপাদকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি। এর মাধ্যমে জানা প্রয়োজন, তাদের উৎপাদন ব্যয় কত, মান কেমন ও বাংলাদেশে আমদানি করতে খরচ কেমন লাগে। এর উপর ভিত্তি করে মূল্য নির্ধারণে যাওয়া ভালো। এটা যদি স্ট্যান্ট (রিং)-এর ক্ষেত্রে করা হতো আরও ভালো হতো।
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের একজন সহকারী অধ্যাপক জানান, অনেক সময় চিকিৎসকরাও আন্দাজের উপর বিভিন্ন ধরনের পেসমেকার সম্পর্কে রোগীদের বলে থাকেন ও লাগানোর উপদেশ দেন। আন্দাজের কারণ, এর প্যাকেটের গায়ে গুণগতমান সম্পর্কে পরিষ্কারভাবে কিছু লেখা থাকে না, যেটা একজন চিকিৎসক ও ভোক্তাকে স্বচ্ছ ধারণা দেবে। এটা খুব ভয়ঙ্করও বটে। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত