শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কোচিং সেন্টারের ৫০ শিক্ষক গোয়েন্দা জালে ‘সৃষ্টি শিক্ষা পরিবার’নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সারাদেশে প্রশ্ন ফাঁস করে
বিপ্লব বিশ্বাস : প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূল হোতাদের ধরতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এরই মধ্যে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের কর্ণধার ছাড়াও শিক্ষা কর্মকর্তাসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দারা। আরও কয়েকটি চিহ্নিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে তলব করা হয়েছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সিন্ডিকেটে ১২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২৪টি কোচিং সেন্টার ও ৫০ জন শিক্ষকের জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে বিজি প্রেসের কর্মচারী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের কয়েকজন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতারও তথ্য পেয়েছেন তারা। যাদের পর্যায়ক্রমে গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রাজধানীর কমলাপুর রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মানিকনগর আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল কলোনি হাইস্কুল, শাজাহানপুর রেলওয়ে হাইস্কুল, মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইল স্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও সাভারের টাঙ্গাইল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অন্যতম। কোচিং সেন্টারের মধ্যে জ্ঞানকোষ একাডেমি, মানিকগঞ্জ জেলার জয় একাডেমি, গাজীপুর জেলার কোনিয়া কোচিং ও অভিনব কোচিং সেন্টার গোয়েন্দাদের নজরদারিতে রয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সন্ধানে কাজ করছেন এমন কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি সাভার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহরিয়ার মেন্দিসকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে ডেকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া কয়েকজনের মোবাইল ফোনের কললিস্টে তার সঙ্গে যোগাযোগের তথ্য পাওয়া যায়। একাধিকবার ওইসব প্রতারকের সঙ্গে তার যোগাযোগের বিষয়টি কললিস্টেও পাওয়া গেছে। ‘সৃষ্টি শিক্ষা পরিবার’ নামে একটি কোচিং সেন্টারের চেয়ারম্যান ড. শফিকুল ইসলাম রিপনকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এছাড়া আরও এক ডজনেরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুই ডজন কোচিং সেন্টার ও অর্ধশত শিক্ষক-কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে।
‘সৃষ্টি শিক্ষা পরিবার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান অনেক আগে থেকেই প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে গোয়েন্দারা তথ্য পান। সারাদেশে প্রতিষ্ঠানটির ১৫টি শাখা রয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীতে একটি, আশুলিয়া, খুলনা, জামালপুর, গাজীপুর, রাজশাহী ও সিরাজগঞ্জে একটি করে শাখা এবং টাঙ্গাইলে আটটি শাখা রয়েছে। এসব শাখায় অন্তত এক হাজার শিক্ষক-কর্মচারী ও ১০ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। এই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে সারাদেশে তারা প্রশ্ন ফাঁস করে। গোয়েন্দাদেরকে এই তথ্য জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ঢাকা শাখার গ্রেফতার হওয়া শিক্ষক জাহাঙ্গির আলম।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও জানান, চলমান এইচএসসি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ও এর আশপাশের এলাকা সাভার, আশুলিয়া, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর ও টাঙ্গাইলের বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহমুদ নাসের বলেন, আমরা বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টারের তথ্য পেয়েছি। তদন্ত ও অনুসন্ধানের স্বার্থে এখনো এ ব্যাপারে বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু