ফেসবুকে উগ্র মতাদর্শ প্রচার করতে ‘নতুন দিগন্ত’ নামে অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসা থেমে নেই জঙ্গিদের গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণ, চলছে সদস্য সংগ্রহের কাজ
বিপ্লব বিশ্বাস : বিভিন্ন বাহিনীর কাছে একের পর এক জঙ্গি ধরা পড়লেও থেমে নেই তাদের কার্যক্রম। ভেতরে ভেতরে সংগঠিত করার কাজ চলছে জামাআতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশে (জেএমবি)। তারা নানা কৌশলে ও ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে উগ্রবাদীরা নিজেদের পরিচয় আড়াল করে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারা কেউবা সদস্য সংগ্রহ, কেউবা গোপন প্রচারণা, কেউবা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। একটি গ্রুপ গোপনে সামরিক প্রশিক্ষণও নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অতি গোপনে এসব প্রশিক্ষণ চলছে। গত এক মাসে গ্রেফতার জঙ্গিদের কাছে থেকে এসব তথ্য জানতে পেরেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
গত ২০ ফেব্রুয়ারি সোনারগাঁও ও মোগড়াপাড়া এলাকা থেকে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়। তারা হলো ময়মনসিংহ জেলার মুক্তগাছা থানার মো. মোস্তফা (২৫), একই জেলার ফুলবাড়িয়া থানার আবু রায়হান ওরফে হিমেল (২৪) ও ঢাকার ধামরাইয়ের মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে শাহীন (২১)। তাদের কাছ থেকে ৭টি জিহাদি বই, ৪৬টি লিফলেট, ৫টি চাকু ও চাপাতি, ৫টি ককটেল, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে তিনজনই জানিয়েছে জেএমবির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রাক্তন আমির এবং মৃত্যুদ- কার্যকর হওয়া শায়েখ আব্দুর রহমানের মতের অনুসারী। তিনজন নিজ নিজ এলাকা ও এলাকার বাইরেও সাংগঠনিক বিভিন্ন ছদ্মনাম ব্যবহার করে সংগঠনের কার্যকলাপ চালিয়ে আসছিল। আবু রায়হান ওরফে হিমেল আড়াই হাজারে সরকারি সফর আলী কলেজে সমাজকর্ম বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করতো। ২০১৪ সালের শেষে সে তৌহিদ নামের একজনের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান ও ২০১৫ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়। মোস্তফা ২০১৪ সালের শেষের দিকে তার নিজ গ্রামের সাকিবের মাধ্যমে জেএমবিতে যোগদান করে। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে সাকিবের মাধ্যমে গাজীপুর শালবাড়ী ও শালনা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় সে সহ মোট ৬ জন মিলে ২৫ দিনের জিহাদি প্রশিক্ষণ নেয়। ২০১৫ সালের শেষের দিকে চট্টগ্রামে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নেয়। শরিফুল ইসলাম শাহীন ২০১৫ সালে মোস্তফা ও সাকিবের মাধ্যমে সংগঠনে যোগদান করে এবং সংগঠনের সিদ্ধান্তে সে গ্রেফতার মোস্তফার শালিকাকে বিয়ে করে।
গত ৬ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে থানার সাইনবোর্ড এলাকার একটি মার্কেট ও কুমিল্লা জেলার গৌরিপুর এলাকা থেকে জেএমবির (সরোয়ার-তামিম গ্রুপের) ৮ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে, গত দেড় বছর ধরে তারা একত্রিত রয়েছে। তাদের প্রধান সমন্বয়ক হলো গ্রেফতর রাসেল। দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার জন্য তারা বেশকিছু বিস্ফোরক মজুদ রেখেছিল। তারা বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়া নেওয়ার জন্য ভুয়া জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করতো ও ফেসবুকে উগ্র মতাদর্শ প্রচার করতো। সম্প্রতি ‘নতুন দিগন্ত’ নামের একটি অনলাইন ই-কমার্স ব্যবসা চালু করে। ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্নজনকে ফেসবুক থেকে ‘ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট’ পাঠিয়ে বন্ধুত্ব তৈরি করে পরে উগ্রবাদী পোস্ট পাঠানো হতো। জামাল ওরফে রাসেল সে মূল দলটির প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করে ও এমএসএম কোম্পানিটি পরিচালনা করে থাকে। সে ছাত্রাবস্থা শিবিরের সঙ্গে জড়িত ছিল। ২০১৫ সালের শেষের দিকে কথিত ‘বড় ভাই’ হুজুরের মাধ্যমে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপে অন্তর্ভুক্ত হয়। ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে বিস্ফোরক তৈরির ওপর চট্টগ্রামে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল কামরুল হাসান জানান, জঙ্গিবাদ ইস্যুতে আমরা শুরু থেকেই সক্রিয়। আমাদের একাধিক টিম এসব নিয়ে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজনকে আমরা গ্রেফতার করতেও সক্ষম হয়েছি। যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা নানাভাবে এসব জঙ্গি কার্যক্রমে জড়িত। তাদের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য আমরা সংগ্রহ করে অভিযানে কাজে লাগাচ্ছি।
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি কামালউদ্দিন জানান, ফতুল্লায় গ্রেফতার তিন জঙ্গি নেতা স্বীকার করেছিল তারা নানা উপায়ে দল ভারি করছিল। আমরা খবর পেয়েই তাতে রণেভঙ্গ করে দেই। সম্পাদনা : শাহানুজ্জামান টিটু