জয় ছাড়া আমরা ঘরে ফিরব না
কামাল পাশা চৌধুরী
চট্টগ্রাম চারুকলা ইনস্টিটিউটের মঙ্গল শোভাযাত্রার প্রতীকী ছবিগুলো মুছে দেওয়া হয়েছিল কালি দিয়ে। তার উপরে কালি লেপন করা হয়েছিল। চারুশিল্পীদের পক্ষ থেকে আমরা সেদিনই বলেছিলাম, তোরা যত মুছবি, আমরা তত আঁকব। সারা দেশে ভরে ফেলব এঁকে। সারাদেশের দেয়ালে দেয়ালে আমরা ছবি আঁকব। তোদের মনের ভেতরে কত কালি জমা আছে আমরা দেখব। কত কালি তোরা ঢালতে পারিস দেখব। রঙ আমরা ঢালবই। রঙে আর কালিতে লড়াই হবে। সেই লড়াই চলছে, যে লড়াই আমরা শুরু করেছিলাম বহু আগে। আশা ছিল এই লড়াইটা হয়তো একসময় থেমে যাবে। আমরা একটি সুন্দর দেশে শান্তিতে বসবাস করব। কিন্তু আজকে বুঝতে পারছি তা আর হবে না।
কিছুদিন আগে শিক্ষা কারিকুলাম হয়েছে, এটা পাকিস্তানের শিক্ষা কারিকুলামকেও হার মানিয়েছে। বর্তমান যে অবস্থা চলছে, মূর্তি, ভাস্কর্যের উপর আঘাত আসছে। সেগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব আসছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমরা ক্রমান্বয়ে নতজানু হয়ে যাচ্ছি সেই পাকিস্তানি পরাজিত শক্তির কাছে। সেই পাকিস্তানি চেতনার কাছে, সেই দ্বিজাতির কাছে আমরা ক্রমান্বয়ে পরাজিত হয়ে যাচ্ছি। আমরা কি এভাবেই পরাজিত হতে থাকব? গত সপ্তাহে একটি নোটিস জারি হয়েছে, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে চারুকলা শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আপনারা জানেন সারা পৃথিবীতে চারুকলা শিক্ষা দেওয়া হয়। শুধু ছবি আঁকা শেখানোর জন্য নয়, শিশুদেরকে মনস্তাত্বিকভাবে ক্রিয়েটিভ করার জন্য, সৃজনশীল করার জন্য চারুশিল্প শিক্ষা দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন আগে চারুকলা শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হয়েছে সমস্ত শিক্ষাব্যবস্থা থেকে। আমরা বলছি, অসাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আমরা কোনোকিছুই মানি না। মানব না।
সারাদেশে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মৌলবাদীরা যা করছে তা মেনে নেওয়া যায় না। প্রগতিশীল, মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশকে সুরক্ষা করতে, শিল্প-সংস্কৃতিকে বাঁচাতে আমরা রুখে দাঁড়াব। বাঙালি জাতি রুখে দাঁড়াবে। সাংস্কৃতিক কর্মীরা রুখে দাঁড়াবেন। রাস্তা থেকে বিজয়ী না হয়ে আমরা কখনো ঘরে ফিরি না। জয় ছাড়া এবারও আমরা ঘরে ফিরব না। জয় আমাদের হবেই।
পরিচিতি: চারুশিল্পী
অনুলিখন: মাহাদী হাসান/সম্পাদনা: আশিক রহমান