বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত হচ্ছে : পানিসম্পদমন্ত্রী
তরিকুল ইসলাম সুমন : বাঁধের উচ্চতার চেয়ে পানি বেশি হওয়ায় হাওর এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। গতকাল হাওরের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা জানান।
তিনি বলেন, এবারের মতো ব্যাপক আকারের বন্যা কখনো হয়নি। এই বন্যা কোনোভাবেই বাঁধ ঠেকাতে পারবে না। কারণ বাঁধের উচ্চতা হচ্ছে সাড়ে ছয় মিটার। আর পানির উচ্চতা হচ্ছে ৮ দশমিক ১ মিটার। সুতরাং বাঁধা কোনোভাবেই এই পানি প্রোটেক্ট করতে পারবে না। গত ২০ বছরে এমন হয়নি।
আনিসুল ইসলাম বলেন, গত ২৯ মার্চ থেকে ১ এপ্রিল পর্যন্ত ৪ দিনে পানির সমতল সিলেটে প্রায় সাড়ে ৮ মিটার ও সুনামগঞ্জে ৫ মিটার বেড়েছে। আর কখনো এমনটা বাড়েনি। পানির উচ্চতার জন্য বন্যা হয়েছে।
জাতিয় পার্টির নেতা আনিসুল ইসলাম বলেন, এই মুহূর্তে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় যা করতে পারে- টু লার্ন দ্য লেসন হোয়াট ইজ হ্যাপেন্ড। এর বাইরে বর্তমানে করার কিছু নেই। যেটা আমরা করতে পারি এখন যে ক্ষতিটা হয়েছে, এর থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপার আসছে, সুতরাং এগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পুরো বিষয়টি আবার পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে যে আমরা বাঁধের উচ্চতা কতটুকু রাখব। ভবিষ্যতে যাতে এমন না নয়। আমরা এক মিটার উচ্চতা বাড়াবো কি না, বাড়ালে আবার পরিবেশগত কি কি অসুবিধা হতে পারে সেগুলো আমাদের দেখতে হবে।
পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ সাংবাদিকেদের জানান, হাওরে বাঁধের উচ্চতা সাড়ে ছয় মিটার উঁচু। কিন্তু এবার পানির উচ্চতা ছিল আট মিটারেরও বেশি। এর ফলে হাওর অধ্যুষিত সিলেট বিভাগের চার জেলা, বৃহত্তর ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাওর এলাকা অকাল বন্যায় ডুবে যেতে থাকে। এক পর্যায়ে বিস্তীর্ণ হাওর এলাকার ৯০ শতাংশই ডুবে যায়। ফসল হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যায় চাষী। সেই সঙ্গে শুরু হয় মাছের মড়ক, মরতে শুরু করে হাঁসও।
আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগের এখন পর্যন্ত প্রমাণ তারা পাননি। বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্ত শেষ হওয়ার আগে দুর্নীতির বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত কাগজে-কলমে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। বাঁধ ভাঙার কারণ দুইটি। একটি হচ্ছে বন্যা। অন্যটি দুর্নীতি। দুইটি ভিন্ন বিষয়। আমরা যে বাঁধগুলো করি সেগুলো ফুললি প্রোটেকশনের জন্য নয়। এগুলো সেফটি মেইনটেইন করে।
বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, গত বছর বাঁধ নির্মাণের কাজ বুঝিয়ে না দেওয়ার কারণে অর্ধেক বিল পরিশোধ করা হয়নি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, সারাদেশে ৮২০টি বাঁধ সংস্কারের জন্য চিহ্নিত হয়েছে। এর মধ্যে ৫২০টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সাধারণ মানুষের দ্বারা। অনেক সময় কৃষকরা নৌকায় করে ধান নিয়ে যাওয়ার সময় বাঁধ কেটে ফেলে। এটাও একটা সমস্যা। ৪০টি নদীর মুখে বাঁধ থাকে, যেগুলো ভেঙে দিতে হয়। ২৭০টি জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত নদী ঠিক করতে হয়। বাঁধের এই ক্ষতি আমরাও করি এবং করতে বাধ্য হই। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ