জঙ্গি দমনকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে পুলিশে যুক্ত হচ্ছে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট
আজাদ হোসেন সুমন ও সুজন কৈরী : অপরাধের ধরন বদলাচ্ছেÑ সেই সঙ্গে তাল মিলিয়ে পুলিশেও যুক্ত হচ্ছে নিত্যনতুন ইউনিট। কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট ও কমান্ডো ইউনিটের পর খুব শিগগিরই পুলিশে যুক্ত হচ্ছে এন্টি টেরোরিজম ইউনিট নামে আরেকটি ইউনিট। এ ইউনিট গঠনের প্রাথমিক প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু করেছে পুলিশ সদর দফতর। অর্থ মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদন পেলেই এন্টি টেরোরিজম ইউনিট আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, পুলিশ অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট ৫৯২ সদস্যের এই দলের নেতৃত্বে থাকবেন পুলিশের একজন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অতিরিক্ত আইজিপি)। এই ইউনিট সারাদেশে সমন্বিতভাবে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে দায়িত্ব পালন করবে।
আগামী এক মাসের মধ্যেই ‘পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিট’ কার্যক্রম শুরু করার কথা রয়েছে। নতুন এ ইউনিটের সদর দফতর হবে ঢাকায়। প্রয়োজন অনুসারে বিভাগীয় পর্যায়েও কার্যালয় থাকতে পারে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গি তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় পুলিশ সদর দফতরের অধীন নতুন ইউনিট গঠনের প্রক্রিয়া জোরালো হয়। নতুন এ ইউনিট গঠনের প্রস্তাব এরই মধ্যে পুলিশ সদর দফতর হয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। প্রস্তাবটি এখন অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখান থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদন পেলেই পুলিশ বিভাগের বহু কাক্সিক্ষত এ ইউনিট কার্যক্রম শুরু করতে পারবে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গোপনীয়) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের জন্য ৫৯২ জন জনবলের প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন এ ইউনিটের প্রধান হবেন একজন অতিরিক্ত আইজিপি। এছাড়া এ ইউনিটে একজন ডিআইজি, একজন অতিরিক্ত ডিআইজি ও ৮ জন পুলিশ সুপার থাকবেন। এর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জঙ্গি দমনে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অধীন ‘কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)’ নামে বিশেষ ইউনিট যাত্রা শুরু করে। পুলিশ সদর দফতরের অনুমতি নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায়ও জঙ্গিবিরোধী বেশ কয়েকটি অভিযানে সফলতা পায় সিটিটিসি। পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, নতুন এই ইউনিটে খাগড়াছড়িতে বিশেষায়িত ট্রেনিং সেন্টারে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেওয়া পুলিশের ২০ সদস্যকে যুক্ত করা হবে। এ ছাড়া ওই ট্রেনিং সেন্টারে নিয়মিতই নতুন সদস্যদের কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। পুলিশের ৫২ সদস্য বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণে রয়েছে। দেশে ফেরার পর তাদের পুলিশ এন্টি টেরোরিজম ইউনিটে যুক্ত করা হবে। এর আগে ভারত থেকে কমান্ডো প্রশিক্ষণ নেওয়া ৪০ সদস্যও নতুন ইউনিটে যুক্ত হবেন। পুলিশ সদর দফতরের অতিরিক্ত ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়িতে প্রশিক্ষণ নেওয়া ২০ জন কমান্ডোকে আপাতত খুলনা ও রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশে যুক্ত করা হয়েছে। বিশেষায়িত নতুন ইউনিটের কার্যক্রম শুরু হলে প্রয়োজনে তাদের সেখানে যুক্ত করা হবে।
এক কর্মকর্তা বলেন, ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট এরইমধ্যে জঙ্গি দমনে ব্যাপক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। নতুন ইউনিটটি যাত্রা শুরু করলে ডিএমপির সিটিটিসির অভিজ্ঞতা ও তাদের জ্ঞান কাজে লাগানো হবে। পুলিশ সূত্র জানায়, দেশব্যাপী জঙ্গি সন্ত্রাস দমনে ২০১১ সালের আগস্টে ‘পুলিশ ব্যুরো অব কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট’ নামে আলাদা একটি ইউনিট গঠনের প্রস্তাব দেয় পুলিশ সদর দফতর। প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনও পায়; কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয়ে সেটি আটকে থাকে। গত বছর নতুন করে জঙ্গি দমনে পুলিশের আলাদা ইউনিট গঠনের প্রস্তাব পাঠানো হয়।
দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা এবং কর্মপন্থা নির্ধারণে পুলিশ সদর দফতরে বিশেষ বৈঠক হয়। আইজিপি এ কে এম শহীদুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট গঠন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ওই বৈঠকে পুলিশের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কর্মকর্তারা জঙ্গি দমনে ওই ইউনিট গঠনের বিষয়ে একমত হন।
এ ব্যাপারে পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি ক্রাইম হুমায়ুন কবীর বলেন, একের পর এক অভিযানে সফলতা এলেও নব্য জেএমবি এখনো নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় হুমকি। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাদের আস্তানার খোঁজ ও অভিযান তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছে। ভবিষ্যতে জঙ্গিরা বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। তাই জঙ্গি দমনে দেশব্যাপী সমন্বিত ইউনিট গঠন বিশেষভাবে প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, আইজিপি মহোদয় জঙ্গিবিরোধী পুলিশি তৎপরতা আরও গতিশিল করার লক্ষ্যে যারপরনাই চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। ফলে মাঠ পর্যায়ে কর্মরত পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিদমনে অংশ নিচ্ছে। সম্পাদনা : এনামুল হক