তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ কি আসন্ন?
ডা. জাকির হোসেন
ডোনাল্ড ট্রাম্প, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। তাকে কি আপনি দায়িত্বজ্ঞানহীন রাষ্ট্রনেতা বলবেন? যদিও ইতোমধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নানা উপাদি দেওয়া হয়েছে। তার অনেক সমালোচনাও হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে কিংবা বলাই হচ্ছে তিনি সম্ভব যুদ্ধবাজ। এখন ধরুন ট্রাম্পের হঠকারি সিদ্ধান্তে যদি কোরিয় উপদ্বীপকে ঘিরে যুদ্ধ শুরুই হয়ে যায় আর তা যদি মারাত্মক যুদ্ধে রূপ নেয়, তবে তা কততম বিশ্বযুদ্ধ হবে? জানি এক বাক্যে সবাই বলবে এটি হবে বিশ্বের তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। তবে এটি কী সত্যিই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে? ইতিহাসকে খুব মনোযোগ আর বিচারবুদ্ধি দিয়ে বিশ্লেষণ করলে এটা হবে চতুর্থ বিশ্বযুদ্ধ। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একক পরাশক্তি হিসেবে বিশ্বে আবির্ভূত হয়। সোভিয়েত ১৫ রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে রাশিয়া সর্ববৃহৎ রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বে রয়ে গেলেও কার্যত পরাশক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কখনই টেক্কা দিয়ে নিজের শক্তি সামর্থ্যরে জানান দিতে পারেনি। যদিও সোভিয়েতের বেশিরভাগ মরণাস্ত্রের মালিকানা উত্তরাধিকার সূত্রে রাশিয়া পেয়ে যায়। তথাপিও রাশিয়া বিধ্বংসী সব মরণাস্ত্রের ভাগিদার হয়েও এতদিন কার্যত কোনো পরাশক্তি ছিল না। এর অন্যতম কারণ ছিল খুব কৌশলে রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করে রাখা, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের গোপন প্রভাব বলয় বিস্তার করে রাখা, বিশ্বে রাশিয়ার বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্রগুলোকে আমেরিকার কূটকৌশলের মাধ্যমে রাশিয়া বিমুখ করে রাখা এবং ন্যাটো এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইত্যাদি শক্তিশালী জোট গঠন করে রাশিয়াকে সামরিক দিক দিয়ে চাপে রাখা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমগ্র বিশ্ব যখন যুক্তরাষ্ট্রের ভয়াবহ পারমাণবিক হামলার নিন্দায় মুখর ছিল। তখন আমেরিকা খুব ভালভাবেই তাদের কূটনীতির মাধ্যমে এই নিন্দাকে জয় করতে পেরেছিল। তারা এই নিন্দাকে জয় করেই ক্ষান্ত হয়নি। আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপনিবেশবাদের পটভূমি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে, তারা যে নব্য উপনিবেশবাদের পথ বেছে নিয়েছিল তাতে যুক্তরাষ্ট্র যে সফলতা পেয়েছে সেই সফলতাকে তারা তাদের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিণত করেছিল। যার ফলে রিপাবলিকান কিংবা ডেমোক্রেট যারাই ক্ষমতা গ্রহণ করেছে কোনো রাষ্ট্র নেতাই তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি থেকে সরে আসতে পারেননি। আবার যুক্তরাষ্ট্রের এই নব্য উপনিবেশবাদের মাধ্যমে এক ঢিল ছুঁড়ে বহু পাখি শিকার করলেও অনেক দেশের রাজনীতিবিদরা যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি সম্পর্কে ঘুনাক্ষরেও টের পাননি। আবার রাশিয়ার মতো যে সকল দেশের রাষ্ট্র নেতারা টের পেয়েছে তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র নিষ্ক্রিয় করে রেখেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা তাদের একটি মাত্র নীতির মাধ্যমে পুরাতন রীতির মতো সরাসরি কোনো রাষ্ট্রকে দখল না করে পুতুল সরকার বসিয়ে বহু দেশকে তাদের পরোক্ষ উপনিবেশ বানিয়ে রেখেছে। আবার সমুদ্র পথ ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী সব অত্যাধুনিক সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে ইরাক, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং সর্বশেষ সিরিয়ায় হামলা করে এতদিন নতুন রূপে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে গেলেও কোনো রাষ্ট্রই তাদের বিরুদ্ধে জোরালো কোনো প্রতিবাদ কিংবা প্রতিরোধ গড়তে পারেনি বরং কেউ টেরই পায়নি যুক্তরাষ্ট্র সমগ্র বিশ্বজুড়ে একটি অঘোষিত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।
উল্টো এই সকল হামলার পরপর আমেরিকার মুকুটে যুক্ত হয়েছে পৃথিবীকে অধিক নিরাপদ এবং মানবাধিকার রক্ষার্থে আমেরিকার হামলা প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। এবার যদি সিরিয়া কিংবা কোরিয় উপদ্বীপ নিয়ে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায় তাহলে সবাই একে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবে চালিয়ে দিবে। আর যুক্তরাষ্ট্রও এতদিন ধরে তাদের চালিয়ে যাওয়া প্রকৃত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস থেকে ক্ষমা পেয়ে যাবে। ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে না মানবাত্মার বিরুদ্ধে এতদিন ধরে চালিয়ে নেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রকৃত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস।
লেখক: চিকিৎসক ও কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান