জঙ্গি ও মাদক পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ : আইজিপি
আজাদ হোসেন সুমন : জঙ্গি এবং মাদক আমাদের মূল সমস্যা। জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক নির্মূল বর্তমানে পুলিশের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক। গতকাল সোমবার পুলিশ সদরদফতরের সম্মেলন কক্ষে ত্রৈমাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় (জানুয়ারি-মার্চ) সভাপতির বক্তৃতায় এমন করেন তিনি। আইজপি জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে আইজিপি জঙ্গিবাদ দমন এবং মাদক নির্মূলে সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভাল। তিনি এ অবস্থা ধরে রাখতে পেশাদারিত্বের সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান।
পুলিশ প্রধান বলেন, মাদক দ্রব্যের কুফল সম্পর্কে সর্বস্তরের জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যক্তিরা যে দলের সদস্য হোক না কেন তাদেরকে ছাড় দেয়া হবে না। তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, মাদক ব্যবসায়ীর সাথে পুলিশের কোন সদস্যের যোগাযোগ থাকতে পারবে না। কোন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীর সাথে যোগাযোগ রয়েছে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে মাদকের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালিয়ে মাদক বিরোধী আন্দোলনকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।
সভায় আইজিপি প্রতিটি অপহরণের ঘটনার মামলা রেকর্ড এবং তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, আমাদের সমাজে মেয়েরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হন। তাদের পাশে দাঁড়াতে হবে। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে। আইজিপি নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা নিবিড়ভাবে নিয়মিত মনিটর করার জন্য জেলা পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলার হয়রানি বন্ধ করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে কমিউনিটি পুলিশিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তিনি কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করে এবং জনসম্পৃক্ততা বাড়িয়ে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশসহ থানায় আসা সেবা প্রত্যাশীদের সাথে ভাল আচরণ করারও নির্দেশ প্রদান করেন।
সভায় পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (ক্রাইম ম্যানেজমেন্ট) মো. হুমায়ুন কবির গত তিন মাসের (জানুয়ারি-মার্চ) সার্বিক অপরাধ পরিস্থিতি তুলে ধরেন। সভায় জঙ্গি হামলা, অপহরণ, খুন,ডাকাতি, ছিনতাই, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী ও শিশু পাচার, অস্ত্র, মাদকদ্রব্য ও বিষ্ফোরক উদ্ধার, সড়ক দুর্ঘটনা, গাড়ি চুরি, রাজনৈতিক সহিংসতা, অপমৃত্যু মামলাসহ দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, আলোচ্য সময়ে সারাদেশে রুজুকৃত মামলার সংখ্যা গত কোয়ার্টারের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ তিনমাসে সারাদেশে ৪৯ হাজার ৮৭৮টি মামলা রুজু হয়েছে যা এর আগের গত তিনমাসে ছিল ৪২ হাজার ২৬৯টি। আলোচ্য সময়ে সারাদেশে খুন, দাঙ্গা, এসিড নিক্ষেপ, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন (ধর্ষণ ও এসিড ব্যতীত), শিশু নির্যাতন, অপহরণ, সিঁধেল চুরি মামলা গত বছরের তিনমাসের (অক্টোবর-ডিসেম্বর) তুলনায় হ্রাস পেয়েছে। অপরদিকে একই সময়ে ডাকাতি, দস্যুতা, দ্রুত বিচার মামলা, চুরি, মাদ্রক দ্রব্য উদ্ধার, অগ্নি সংযোগ, সড়ক দুঘর্টনা, পুলিশ আক্রান্ত সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশ কর্তৃক একই সময়ে বিপুল সংখ্যক মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং ধ্বংস করা হয়েছে।
দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এ সভায় ডিএমপি কমিশনার মো. আছাদুজ্জামান মিয়া, অতিরিক্ত আইজিপি (অর্থ) মো. মইনুর রহমান চৌধুরী, রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো. আবুল কাশেম, ডিআইজি (অর্থ) এ কে এম শহিদুর রহমান, অতিরিক্ত ডিআইজি (সিটি) মো. আমিনুল ইসলাম, এআইজি (কনফিডেন্সিয়াল) মো. মনিরুজ্জামান, সিআইডির এসএস মোল্যা নজরুল ইসলাম প্রমুখ ব্যক্তব্য রাখেন। এছাড়া সকল পুলিশ কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ সুপার, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ এবং পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ