পাট থেকেই উৎপাদিত হবে ‘ভিসকস’, আমদানির প্রয়োজন হবে না
ফারুক আলম : দেশি পাট থেকে সুতা তৈরির প্রধান কাঁচামাল ভিসকস তৈরি করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভিসকস দেখতে সুতার মতো কিন্তু তার থেকেও সূক্ষ্ম। এটা ব্যবহার হয় তুলার বিকল্প হিসেবে সুতা তৈরির কাজে। পোশাক খাতে এক ধরনের নরম কাপড় তৈরিতে ভিসকস নামে যে সুতা আমদানি করে বাংলাদেশ তা মূলত তৈরি হয় বাঁশ ও আখের গাছ থেকে। এই ভিসকস বাংলাদেশে উৎপাদনের লক্ষ্যে সরকারি পাটকলগুলোর মানোন্নয়ন করার উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। এই কাঁচামালে প্রধান উৎস চীন। তবে এবার পাট দিয়ে এই ভিসকস নিজেরাই তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনিস্টিটিউট এই উদ্ভোবনের কাজে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
ভিসকসের বিষয়ে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেন, তুলার উৎপাদন কমে আসায় গতবছর বাংলাদেশ প্রায় ৬৫০ কোটি টাকার ৩৩ হাজার ৭৩৭ টন ভিসকস বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে। বাংলাদেশে যদি ভিসকস উৎপাদিত হয় তবে বিদেশ থেকে তা আর আমদানির প্রয়োজন হবে না। তিনি বলেন, পাট থেকে ভিসকস উৎপাদনের পদক্ষেপ গ্রহণ। উৎপাদিত ভিসকস এর পুরোটাই বিকেএমইএ এর সদস্য মিলগুলো ক্রয় করে নেবে।
বিজেআরআই ও বিসিএসআইআর এর বৈজ্ঞানিকগণ জানান, যেহেতু পাটে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ ভাগ সেলুলোজ রয়েছে, সেহেতু পাট থেকে পাল্প তৈরি করে পুনরায় সেলুলোজ রি জেনারেট করে ভিসকস তৈরি করা সম্ভব।
পাটজাত পণ্যের মধ্যে বাজারে দেশ-বিদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে শো পিস, শপিং ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, পর্দা, টেবিল ম্যাট, ফ্লোর ম্যাট, মেয়েদের গহনা, সেন্ডেল, শিকা, সোফার কভার, শপিং ব্যাগ, স্কুল ব্যাগ, জায়নামাজ, বাসাবাড়ির আসবাব সামগ্রী, বাগানে ব্যবহৃত শৌখিন সামগ্রী থেকে শুরু করে শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, স্যুট, শার্ট, প্যান্ট এমনকি জিন্স বা ডেনিম। এসব রপ্তানি হচ্ছে বিশ্বের ১৩৫টির বেশি দেশে। এছাড়া পাট বিশ্বের নামি-দামি গাড়ির ভেতরের বাক্স, বডি ও অন্যান্য উপাদান তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার যোগান যায় বাংলাদেশ থেকে।
ভিসকসের বিষয়ে হিমাদ্রী টেক্সটাইলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এইচ মিঠু খান বলেন, নরম পোশাক তৈরির এই কাঁচামাল নিজেরা তৈরি করলে আমাদের বাইশ থেকে ত্রিশ শতাংশ খরচ কমে যাবে। সুতরাং এটা আমাদের গার্মেন্টস রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় সুফল পাবে। তবে ভিসকস উৎপাদনের সুফল পেতে সহায়ক শিল্পের দক্ষতা বাড়ানো জরুরি বলে জানান এই উদ্যোক্তা। তিনি বলেন, আমাদের এখানে কিছু দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। টেকনিক্যাল যেই ধরনের সাপোর্ট লাগে সেই ধরনের সাপোর্ট দিতে আমাদের এখানে ভালো ভালো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার আছে তারা সহায়তা করতে পারবেন। তাই এখনই দক্ষ জনশক্তি গঠন করা উচিৎ। ভিসকসটা যখন আমরা উৎপাদন করতে পারব তখন সঙ্গে সঙ্গে গার্মেন্টস প্রোডাকশন বেড়ে যাবে।
উল্লেখ্য ভিসকস উৎপাদনে চীনের চায়না টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল কর্পোরেশন ফর ফরেন ইকনোমিক এন্ড টেকনিকাল কো-অপারেশন (সিটিইএক্সআইসি) ও বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। বিজেএমসির মিলগুলোতে চীন শুধু কারিগরি সহায়তাই নয়, প্রয়োজনে আর্থিক বিনিয়োগও করতে পারে। সম্পাদনা : এনামুল হক