মনঃস্তাত্ত্বিক চাপ সামলাতে পারবে টাইগাররা?
অঘোর মন্ডল
বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডে একটি ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে যাচ্ছে। স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। আমার মতে, আয়ারল্যান্ডে সিরিজে ফলাফলের চেয়ে বাংলাদেশের জন্য বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে, ইংলিশ কন্ডিশনে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার আগে এ রকম একটা সিরিজ খেলার সুযোগ পাচ্ছে, এটা খুবই ইতিবাচক। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড। কঠিন একটা গ্রুপ। সুতরাং প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড কেমন করে তাও যাচাই করার সুযোগ পাওয়া যাবে এই সিরিজে। আর আরলি সামারে ইংলিশ কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বাংলাদেশের যে ক্যাম্প সাসেক্সে হবে সেটাও তাদের জন্য একটা ভালো দিক। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ যখন বিশ্বকাপে খেলতে গিয়েছিল, সেখানে এই সাসেক্সেই প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলেছিল বাংলাদেশ। তারই ফলোশ্রুতিতে স্কটল্যান্ড এবং পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এটাই আইসিসির শেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি, যেখানে বাংলাদেশ খেলার সুযোগ পাচ্ছে। যে ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার দরকার দেশের মাটিতে, ওই নেট প্র্যাক্টিস বা জিম করার থেকে অনেক বড় সুযোগ আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে পারাটা। কমপক্ষে গোটা চারেক ম্যাচ খেলার সুযোগ আছে তাদের। এর বাইরে ভারত পাকিস্তানের সঙ্গেও প্র্যাক্টিস ম্যাচ খেলার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশ। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শুরুর আগে প্রস্তুতিতে বাংলাদেশের কোনো ঘাটতি থাকবে না। তারপরেও বলব, আয়ারল্যান্ডে যদি বাংলাদেশ ভালো করে যেতে পারে, বিশেষ করে ফাইনাল খেলা উচিত। ফাইনাল না খেলাটাও একধরনের আপসেট হবে। তবে সেই আপসেট যদি ঘটে, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। পরবর্তীতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার ভালো রসদ খুঁজে পাবে। আপসেটের কথা এ কারণেই বললাম, নিজের মাটিতে আয়ারল্যান্ড খুবই শক্তিশালী দল। ওই কন্ডিশনে বাংলাদেশকে মানিয়ে নিতে হবে। সেটাও একটা কঠিন কাজ যেকোনো দলের জন্য। আর আয়ারল্যান্ড তো চেষ্টা করছে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার। তাদের সামনে বড় সুযোগ থাকবে যদি বাংলাদেশ বা নিউজিল্যান্ডকে হারাতে পারে। এমনটি যদি সত্যিই বাস্তব করতে পারে তারা তাহলে আলোচনায় চলে আসবে, আইসিসিরও নজর কাড়বে। এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশকে একটা জিনিসই মাথায় রাখা উচিত, আয়ারল্যান্ড শক্ত প্রতিপক্ষ হতে পারে, কিন্তু তারা টেস্ট খেলুড়ে কোনো দল নয়। তাদের কাছে হারটা ক্রিকেট বিশ্বে একটা অন্য বার্তা যেতে পারে। যদিও বাংলাদেশ দেশের বাইরে ভালো ক্রিকেট খেলছে। সেই ভালো ক্রিকেট ক্রিকেটটা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের জন্য ভালো খবর হবে।
মাশরাফি বিন মুর্তজা মানসিকভাবে তৈরির বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছেন। মনঃস্তাত্ত্বিক চাপ অবশ্যই থাকবে। এখানে মানসিক লড়াই হবে দুরকমের। এক হচ্ছে, ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ড থাকবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। এজন্য তার বিপরীতে ভালো করতেই হবে বা করা উচিত। আরেকটা হচ্ছে, কাগজ-কলমে আয়ারল্যান্ড আমাদের থেকে দুর্বল দল। তারা টেস্ট খেলুড়ে দেশ নয়। তাদের কাছে হারা চলবে না। এ রকম একটা মানসিক চাপ তো থাকছেই। নিউজিল্যান্ডকে হারাতে হবে, আবার আয়ারল্যান্ডের কাছেও হারা যাবে না। এ রকম মনঃস্তাত্ত্বিক ব্যাপার যখন থাকে তখন অনেক বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে বাংলাদেশকে। এর আগে বাংলাদেশ ইংল্যান্ডকে ইংল্যান্ডের মাটিতে হারিয়েছিল। অস্ট্রেলিয়াকেও হারিয়েছিল ২০০৫ সালে। এসব এখন ইতিহাস। বাংলাদেশ এখন অনেক ভালো ক্রিকেট খেলে। ভালো খেলার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হলে মানসিকভাবে অনেক বেশি পেশাদারি মনোভাবের পরিচয় দিতে হবে খেলোয়াড়দের। সবার জন্যই ত্রিদেশীয় সিরিজটি একটা পরীক্ষা।
অনেকে বলছেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ কঠিন গ্রুপে পড়েছে। সত্যিই কী তাই? মনে হয় না। কারণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা আটটি দলই সেরা। অন্য গ্রুপটি কি সহজ? মনে হয় না। ভারত-পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা-শ্রীলঙ্কাÑ কিভাবে এই গ্রুপটিকে আপনি সহজ বলবেন কিংবা এমন কথা বলার কি আদৌ কোনো সুযোগ আছে? এটা আইসিসির টুর্নামেন্ট। সেখানে রান একটা বড় ফ্যাক্টর হবে। কেউ চাইবে না ১৪০-১৪২ রানে অলআউট হতে। আইসিসি উইকেটটা এমনভাবে বানাবে যেন, ২৫০ রানের বেশি করতে পারে দলগুলো। কারণ বিজ্ঞাপনদাতারা মুখিয়ে থাকবেÑ অ্যাকশন দেখার জন্য। জমজমাট লড়াইয়ের অপেক্ষায় থাকবে দর্শকেরা।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও ক্রীড়াবিশ্লেষক
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান