রোমের রাজার সঙ্গে ইমাম বাকিল্লানির টক-শো
মাহফুয আহমদ
ইমাম কাজি আবু বকর মুহাম্মাদ ইবনে তায়্যিব বাকিল্লানি রাহ. (জন্ম: ৩৩৮ হি.মৃত্যু: ৪০২ হি.) ছিলেন তাঁর সময়ের শীর্ষস্থানীয় একজন আলেম। শরয়ি জ্ঞান-বিজ্ঞানের একাধিক শাখায় তাঁর পা-িত্য ছিল সর্বত্র প্রশংসিত। ভ্রান্ত মতবাদ খ-নে এবং ভ্রান্ত লোকদের সঙ্গে তর্কবিতর্কে তাঁর কোনো জুড়ি ছিল না। তর্কবিদ্যা প্রসঙ্গে তাঁর রচিত গ্রন্থসমূহ অদ্যাবধি বিদ্বান মহলে বেশ সমাদৃত। ইরাকের বাদশাহ ৩৭১ হিজরিতে কনস্টান্টিনোপলের খ্রিস্টান পাদ্রীদের সঙ্গে বিতর্ক করার জন্য তাঁকে নির্বাচিত করেছিলেন। রোমের রাজা ইমাম আবু বকর বাকিল্লানির আগমনবার্তা শুনে নিজের অনুচরদের আদেশ দিল, তারা যেন রাজদরবারের উঁচু দরজাকে খাঁটো করে দেয়; যাতে করে আবু বকর প্রবেশ করার সময় নিজের মাথা ও শরীর রুকুর ন্যায় ঝুঁকাতে বাধ্য হন! আর এটা রোমের রাজা ও তার অনুচরদের সামনে বাকিল্লানির নতিস্বীকারের নামান্তর হয়ে যাবে!!
বাকিল্লানি রাহ. যখন হাজির হলেন, তাদের এই অপকৌশল উপলব্ধি করতে পারলেন। তিনি নিজ শরীর পেছনের দিকে ঘুরিয়ে নিলেন এবং রুকুর অবস্থা অবলম্বন করলেন। দরজা দিয়ে তিনি পেছন দিক থেকে হেঁটে হেঁটে ঢুকলেন। সুতরাং তাঁর মুখ ও মাথার পরিবর্তে রোমের রাজার প্রতি তিনি পিঠ ও গর্দান দেখিয়ে ঢুকলেন। এখান থেকে রাজা অনুভব করতে পারল যে, নিশ্চয় তার সামনে কোন বিপদ অপেক্ষা করছে! বাকিল্লানি রাজদরবারে ঢুকে তাদের সম্ভাষণ জানালেন, তবে সালাম করলেন না; কেননা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিতাবিদের আগবাড়িয়ে সালাম দেয়া থেকে নিষেধ করেছেন। অতঃপর বাকিল্লানি রাহ. তাদের বড় পাদ্রীর দিকে ফিরে বললেন, আপনার এবং আপনার পরিবার ও সন্তানাদির অবস্থা কেমন?
প্রশ্ন শুনে রোমের রাজা রেগে গিয়ে বলল, আরে আপনি জানেন না যে, আমাদের পাদ্রীরা বিবাহ-শাদী করেন না এবং তারা সন্তানসন্ততিও জন্ম দেন না? বাকিল্লানি প্রত্যুত্তরে বললেন, আল্লাহু আকবার! আপনারা নিজেদের পাদ্রীদের বিয়ে এবং সন্তান জন্ম দেয়া থেকে পবিত্র ও ঊর্ধ্বে মনে করছেন! আর নিজেদের রব্ব ও প্রতিপালকের ওপর অপবাদ আরোপ করছেন যে, তিনি মারইয়ামকে বিয়ে করে ঈসাকে জন্ম দিয়েছেন?! এবার রাজার রাগ আরো তীব্র হলো। সে পূর্ণ ঔদ্ধত্যের সঙ্গে বলল, আচ্ছা তাহলে আয়িশার কর্মের ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? বাকিল্লানি রাহ. বললেন, আয়িশা রাযি.’র ওপর অপবাদ আসলে তা তো করেছে মুনাফিক ও রাফেজিরা আর মারইয়াম রাহ.কে অপবাদ দিয়েছে ইহুদিরা। অথচ তাঁরা উভয়ই ছিলেন স্বচ্ছ ও পবিত্র। তবে আয়িশা তো বিয়ে করেও সন্তান পাননি, পক্ষান্তরে মারইয়াম স্বামী ছাড়াই সন্তান প্রসব করলেন! তাহলে বলুন, অমূলক অপবাদের জন্য হলেও কে বেশি সন্দেহজনক? অথচ, নিশ্চয় তাঁরা উভয় এমন অহেতুক সন্দেহ ও অপবাদ থেকে পূর্ণ পবিত্র ছিলেন। এবার রাজা যেন পুরো পাগল হয়ে গেল! বলল, আপনাদের নবী কি যুদ্ধ করতেন? আবু বকর বাকিল্লানি: হ্যাঁ। রাজা: তিনি কি অগ্রভাগে থেকে লড়াই করতেন? বাকিল্লানি: হ্যাঁ।
রাজা: তিনি কি বিজয় লাভ করতেন? বাকিল্লানি: হ্যাঁ। রাজা পুনরায় বলল, তিনি কি পরাজিত হতেন? বাকিল্লানি: হ্যাঁ। রাজা: আশ্চর্য! নবী আবার পরাজিত হন?! বাকিল্লানি: অত্যাশ্চর্য! ইলাহ আবার শূলে চড়ানো হয়?! এবার সেই কাফির পুরো হতবাক!! (তারিখে বাগদাদ; খতিব বাগদাদি, ৩/৩৬৫-৩৬৬, সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; যাহাবি, ১৭/১৯০-১৯১) এই একটি বর্ণনাই শেষ নয়। এধরনের গৌরবগাঁথা অনেক কাহিনী তাঁর জীবনচরিতে পাওয়া যায়। বস্তুত আল্লাহ তায়ালা ইমাম বাকিল্লানি রাহ.’র মাধ্যমে দ্বীনে ইসলামের প্রচুর খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন। লেখক: আলোচক, ইকরা টিভি, লন্ডন।