সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় ইসলাম
মোস্তফা কামাল গাজী
ইসলাম মানবতা ও শান্তির ধর্ম। দাঙ্গা হাঙ্গামা ও ফেতনা ফাসাদের কোনো প্রশ্রয় নেই এখানে। ইসলাম মুসলিমের সঙ্গে শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখার পাশাপাশি অমুসলিমেরও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। তাদের সঙ্গে সাম্য ও ভ্রাতৃত্ব রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সঃ) অমুসলিমদের ব্যাপারে অত্যন্ত সহনশীল ও নম্র ছিলেন। মদিনায় হিজরতের পর সেখানের কাফেরদের সঙ্গে পরস্পরে সাম্য, স্থিতিশীলতা, সামাজিক শান্তি, নিরাপত্তা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার চুক্তি করেন। ইসলামি ইতিহাসে এটি ‘মদিনা সনদ’ নামে পরিচিত। এ সনদের আলোকেই পৃথিবীতে সর্বপ্রথম আদর্শ ইসলামি রাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ভিত্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। এমনিভাবে মুসলমানের বিজিত এলাকায় অমুসলিমদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের অনুমতি দিয়েছে ইসলাম। এর ফলে নির্ভীঘেœ তারা ধর্মকর্ম করার সুযোগ পায়। মক্কা বিজয়ের পর সেখানের অমুসলিমদের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তিনি ইচ্ছে করলেই এতোদিনের অত্যাচার, নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে পারতেন। ইতিহাসে এমন ঘটনা প্রায় বিরল। যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তেও তিনি অমুসলিমের সঙ্গে উদার আচরণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের ময়দানে তোমরা অতিশয় বৃদ্ধ, শিশু এবং নারীদের হত্যা করো না। আর এ ব্যাপারে কেউ বাড়াবাড়ি করবে না’। (আবু দাউদ: ২৯১) যুদ্ধে যারা অংশ নেয়নি সেসব কাফেরকেও হত্যা করতে তিনি নিষেধ করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষার ক্ষেত্রে রাসুলুল্লাহ (সা.) অনন্য নজির স্থাপন করে গিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সাবধান! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো মুআহিদ (ইসলামি রাষ্ট্রের চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক)কে অত্যাচার করবে, তার কোনো অধিকার নষ্ট করবে, তার সামর্থ্যের বাইরে কোনো কিছু চাপিয়ে দেবে, মনের একান্ত ইচ্ছা ছাড়া তার কোনো সম্পদ নিয়ে নেবে তাহলে জেনে রেখো, আমি তার বিরুদ্ধে কিয়ামতের দিন তর্ককারী হব।’ (অর্থাৎ তাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে নালিশ করব) (আবু দাউদ: ২/৪৩৩)
অমুসলিমের ওপর অত্যাচার করলে পরকালেও রয়েছে কঠোর শাস্তি।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘ যে ব্যক্তি কোনো মুআহিদকে হত্যা করবে, সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যাবে’। (বোখারি: ৬৫১৬)
অন্য এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলেন, ‘ মুআহিদ বা অন্য কোনো ব্যক্তির প্রতি জুলুম করা থেকে আমার রব আমাকে নিষেধ করেছেন।’ (কানজুল উম্মাল: ২/২৭০) হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘সাবধান! তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এমন মুআহিদকে হত্যা করবে, যাকে আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুল নিরাপত্তা দান করেছেন, তাহলে অবশ্যই সে আল্লাহ তায়ালার নিরাপত্তা বিধানের খেয়ানত করল। সুতরাং সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ ৪০ বছরের দূরত্ব থেকে জান্নাতের ঘ্রাণ পাওয়া যাবে।’ (তিরমিজি:১৪০৩)
উপর্যুক্ত আলোচনা দ্বারা সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি রক্ষার গুরুত্ব এবং এটি কেউ নষ্ট করলে তার শাস্তির কথা বুঝে আসলো। তাই আসুন, রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর আদর্শ অনুকরণ করি এবং সংখ্যালঘু অমুসলিমদের সঙ্গে উদার আচরণ করি।