জামায়াতে নামাজ : শুদ্ধপ্রেমের বিস্তীর্ণ মাঠ
রায়হান রাশেদ
বান্দার ওপর ফরজ করা হয় পাঁচওয়াক্ত নামাজ। ইতিপূর্বে কোন নবির উম্মতের ওপর নামাজের বিধান ফরজ করা হয়নি। সর্বপ্রথম ফরজ করা হয় মানবতার নবি মুহাম্মদ সা.এর উম্মতের ওপর। পাঁচ সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। নামাজ মুহাম্মদের উম্মতের জন্য সৌভাগ্যের সোপান। শ্রেষ্ঠত্বের কারণ। খোদার দরবারে প্রিয় হবার উপলক্ষ। তার পাক কদমে লুটিয়ে পড়ে ভালবাসার লেনদেন করার একান্ত মুহূর্ত। শুদ্ধ প্রেম খেলার অবারিত সুভাসিত মাঠ। ইসলামে বলা হয়েছে, ফরজ নামাজকে পড়তে হবে জামাতের সাথে। এক কাতারে ইমামের নেতৃত্বে সংঘবদ্ধ হয়ে। মানুষে মানুষে কাঁধ মিলিয়ে। পায়ের গুড়ালি বরাবর রেখে। মানব সভ্যতার পাঠ নিতে হবে এক কাতারে নামাজ পড়ে। সেখানে ধনী গরীবের কোন ভেদাভেদ নেই। শিক্ষিত মূর্খের কোনো তারতম্য নেই। এখানে সবাই সমান। সবাই এক কাতারের মানুষ। জামাতে নামাজ মানুষকে ফুরফুরে রাখে। চিত্তকে সতেজ করে তোলে। মন পাড়ায় পরিশুদ্ধ ও পবিত্রতার বারিধারার ঢল নামে। জামাতে নামাজে প্রাণ খোঁজে পাওয়া যায়। জামাতের নামাজে সওয়াব পাওয়া যায় অনেক। সওয়াবে পূর্ণ হতে থাকে আমলের ভা-ার। সওয়াবের সমুদ্দুরে ভাসতে থাকে নামাজীর অর্জনের তরী। রাসুল সা. বলেন, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, ‘ জামাতের সাথে নামাজ পড়া একাকী নামাজ পড়ার চাইতে ২৭ গুণ বেশি মর্যাদার অধিকারী।’ বোখারি ৬৪৫, মুসলিম ৬৪০। জামাতে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া ব্যক্তির প্রতি কদমে কদমে সওয়াব লেখা হয়। তার হাঁটা চলা সবি হয় সওয়াব কেন্দ্রীক। নামাজের জন্য অপেক্ষমান সময়টুকুও ধরা হয় নামাজের অন্তর্ভূক্ত। অপেক্ষার সময় পেতে থাকে নামাজের সওয়াব। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, ‘কোনো ব্যক্তির জামাতের সাথে নামাজ তার ঘরে বা বাজারের নামাজের চাইতে ২৫ গুণ বেশি সাওয়াবের অধিকারী। আর এটা তখন হয় যখন সে অজু করে এবং ভাল করে অজু করে তারপর (নামাজের উদ্দেশ্যে) বের হয়। এ অবস্থায় সে যতবার পা ফেলে তার প্রতিবারের পরিবর্তে একটি করে মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয় এবং একটি করে গুণাহ ক্ষমা করা হয়। তারপর যখন সে নামাজ পড়তে থাকে ফেরেশতারা তার জন্য দোআ করতে থাকে। তারপর যখন সে নামাজের মুসল্লার উপর থাকে এবং তার অজু না ভাঙ্গে। ফেরেশতাদের সেই দোআ’র শব্দাবলী হচ্ছে ‘হে আল্লাহ এই ব্যক্তির উপর রহমত নাযিল কর। হে আল্লাহ এর উপর রহম কর। আর যতক্ষণ সে নামাজের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে, সে নামাজরে অন্তর্ভূক্ত গণ্য হতে থাকে।’ রিয়াজুস সালেহীন- ১০৬৫।
জামাতে নামাজ আদায়কারীর জন্য খোদার পক্ষ থেকে রয়েছে শুভেচ্ছা অভ্যর্থনা। তাদের আগমনে জানানো হয় সুসংবাদ। রাতের অন্ধকারে জামাতের জন্য মসজিদে ছুটে আসার মধ্যে তার ভবিষ্যৎ হবে আলোকিত ও সুভাসিত। কিয়ামতের দিন থাকবে জামাতী ব্যক্তির জ্বলজ্বল নূরের শহর। হাদিসে এসেছে, আনাস বিন মালেক বলেন রাসুল সা. বলেছেন ‘রাতের অন্ধকারে মসজিদসমূহে যাতায়াতকারীদেরকে কিয়ামতের দিনে পূরিপূর্ণ নূরের সুসংবাদ দাও।’ ইবনে মাজাহ ৭৮১।
নামাজ পড়তে হবে মসজিদে গিয়ে জামাতের সাথে। কোথাও যদি কমপক্ষে তিনজন লোকও থাকে, তাহলে সেখানে জামাত করতে হবে। কারণ একাকী নামাজ পড়লে শয়তান সে নামাজে ইন্ধন যোগায়। ভেতরে নানান কিছু ঢুকিয়ে দেয়। রাসুল সা. একাকী নামাজে ব্যক্তিকে বাঘের মুখে পতিত দলছুট বকরীর সাথে তুলনা করেছেন। আবু দারদা রা. বলেন, আমি রাসুল সা. কে বলতে শুনেছি ‘ যে গ্রামে বা প্রান্তরে তিনজন লোকও অবস্থান করে অথচ তারা জামায়াত কায়েম করে নামাজ পড়ে না তাদের উপর শয়তান সাওয়ার হয়ে যায়। কাজেই জামায়াতের সাথে নামাজ পড়া তোমাদের জন্য অপরিহার্য। কারণ দলছুট বকরীকে বাঘে ধরে খায়।’ মুসলিম।
রাসুল সা. জামাতে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে বিভিন্ন হুশিয়ারী দিয়েছেন। জামাতে নামাজ আদায়কে তিনি অত্যাবশ্যক করেছেন। একাকী নামাজ আদায়কারীর নামাজকে তিনি নামাজ বলে স্বীকৃত দেন না। জামাতে নামাজ পড়াকেই তিনি মানবজাতির কর্তব্য ও অবশ্য পালনীয় বলে ঘোষণা করেন। নবি সা. বলেন ‘ যে ব্যক্তি আযান শুনল এবং তার কোন ওযর না থাকা সত্বেও জামাতে উপস্থিত হলো না, তার সালাত নেই।’ ইবনে মাজাহ ৭৯৩।
জামাতে অনুপস্থিত ব্যক্তির ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারি জারি করেছেন। তাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেবার দৃঢ় সংকল্প করেছেন। হাদিসে বিধৃত হয়েছে, আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত রাসুল সা. বলেছেন, ‘ আমার প্রাণ যাঁর হাতে তাঁর কসম করে বলছি, অবশ্যই আমি সংকল্প করেছি, আমি কাঠ সংগ্রহ করার নির্দেশ দেব, তারপর আমি নামাজের হুকুম দিব, এবং এজন্য আযান দেওয়া হবে, তারপর আমি এক ব্যক্তিকে হুকুম করব সে লোকদের নামাজ পড়াবে। এরপর আমি সেই লোকদের দিকে যাব, যারা নামাজের জামাতে হাযির হয়নি। এবং তাদের বাড়ি ঘর তাদের সামনেই জ্বালিয়ে দেব।’ বোখারি ২৪২০, ইবনে মাজাহ ৭৯১।