মানবজীবনে সুন্নতের অনুসরণ
মিযানুর রহমান জামীল
সুন্নতে নববীর আদর্শ মানব সভ্যতার উত্তম পথ ও পন্থা। বিপদ-আপদ আর অসহায়ত্বের বিনম্র পন্থাতেই জাতির জন্য এ সুন্নতের রয়েছে সুফল। ইসলামে সুন্নতের গুরুত্ব অপরিসীম। মানবজীবনে রয়েছে এর অবিস্মরণীয় প্রভাব। সুন্নত ছাড়া উম্মতপাড়া অচল, নি®প্রাণ। আর তাই আলাহ তাআলা শেষ জামানাকে একটি সুন্নত জিন্দা করার বিশেষ মুহূর্ত হিসেবে উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নির্বাচন করেছেন। উম্মদের হায়াত কম, আকার আকৃতিতে ছোট, কিন্তু তারা বিশেষ বিশেষ সময়ে এমন নববী আদর্শের পক্ষ থেকে আলাহ প্রদত্ব এমন এমন অফার পাবে যা পূর্ববর্তী উম্মতদের জন্য নির্ধারিত ছিল না। তারা এমন নেকী এবং ফজীলত অর্জন করবে যা তাদের আগের লোকেরা করেনি।
মূলতঃ সুন্নতি জীবনই পারে একটা মানুষকে পশুত্বের দল থেকে মনুষ্যত্বের কাতারে দাঁড় করাতে। আর একটা সুন্নতের প্রতি অবজ্ঞা ও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি একটা মানুষকে পৌঁছে দিতে পারে বেইজ্জতি এবং যিল্লতির চূড়ান্ত সীমায়। নবীজীর প্রতিটি সুন্নতই এক একটি আদর্শ রাষ্ট্র কায়েমের অন্যতম অনুষঙ্গ। উম্মতের চৌদ্দ’শ বছরের আমলসহ তার পরবর্তী সাহাবা, তাবেঈ, তাবে তাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, সালফে সালেহীন ও বর্তমান ফকীহদের সুন্নতী জীবনাদর্শের অনুসরণীয় দিক দর্শনই তাঁর সোনালী জীবনের উজ্জ্বল নমুনা। কিন্তু লেবাস পোষাক আর খাওয়া-দাওয়া থেকে নিয়ে চাল-চলনের যে সকল সুন্নত রাসুল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম আমাদের দেখিয়ে গেছেন, বর্তমানে আমরা তাঁর ধারে কাছেও নেই। ফলশ্রুতিতে গোটা বিশ্ব পরিণত হয়েছে সুন্নতহীন এক শূন্য শরীরের দৃশ্যমান রক্ত মাংসের দেহে। রূহ ছাড়া সেখানে এমন কিছু নেই যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে। ফলে গোটা সভ্যতার উপর নেমে এসেছে লাঞ্ছনা আর অপমানের ঘূর্ণিঝড়।
রাসুল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম সুন্নতের মাধ্যমে যে সমাজকে পশুত্বের কাতার থেকে মানব সভ্যতার মডেল হিসেবে বিশ্বের দরবারে দাঁড় করিয়েছেন তার দৃষ্টান্তের সামনে ইতিহাসও মাথা নত করতে বাধ্য। সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন নববী আদর্শ ও সুন্নতে রাসূলের একনিষ্ট অনুসারী। এ অক্লান্ত নবীভক্তি তাদের পৌঁছে দিয়েছে চির সম্মানের উচ্চাসনে। এ জন্যই দুনিয়ায় থাকাকালীন পেয়েছেন বেহেস্তের সুসংবাদ। আলাহর ফায়সার উপর তারা রাজি হয়েছেন, আলাহও তাদের উপর রাজি হয়েছেন। এ জন্য মানব জীবনে সুন্নতে নববী অনুসরণ জীবন পরিশুদ্ধির উত্তম পন্থা। আলাহ তাআলা পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেন, ‘তোমরা যদি আমাকে ভালোবাসতে চাও তবে আমার হাবীবের অনুসরণ করো।’ এ জন্য যে যতো বেশি সুন্নতের প্রতি গুরুত্ব দিবে, সুন্নতের মানদ-ে সে তত বেশি রাসুল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর প্রিয় হতে পারবে।
জীবনের প্রতিটি সুন্নত মানবজীবনের উত্তম দিক-দর্শন। এ দর্শন যে আয়ত্ব করতে পারবে সেই হবে কালের শ্রেষ্ঠ আশেকে রাসূল। শুধু দেয়ালে দেয়ালে পোস্টার আর আশেকে রাসূলের প্রলম্বিত চিকা আর চিল মারলে যদি আশেকে রাসূল হওয়া যেত তবে রং তুলির কারিগররাই হতো বিশ্ব আশেকে রাসূল।
জসনে জুলুসের নামে মাজারে মাজারে আতর-গোলাপজল ছিটালে যদি রাসূলের আশেক হওয়া যেত তবে আতল গোলাপ জল ফেক্টুরীর মালিক কর্মচারীরাই হতো বিশ্ব আশেকে রাসূল। আশেকে রাসূল হতে হলে প্রয়োজন সুন্নতে নববীর নিয়মিত পাবন্দি। স্থান কাল পাত্র বিশেষ সুন্নতের অনুসরণের মাধ্যমে কাল হাশর দিনে উম্মতের জন্য রাসুল সালালাহু আলাইহি ওয়া সালাম এর সাফায়াত অবধারিত। যে ব্যক্তি আলাহর হুকুম আহকাম পালন করে নিজে সুন্নতের উপর আমল করেছে। অন্যকে তার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে সে পাবে তার দ্বিগুণ সওয়াব। কারণ এটি এমন একটি ভালো কাজ যা করলে নিজের সওয়াব, করালে অন্যেরও ফায়দা নিজেরও ফায়দা। হাদীসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো কাজের পথ দেখায়, সে ঐ ভালো কাজ করার সওয়াব পায়।’
সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ হয়ে উঠুক মানব জীবনের একমাত্র পাথেয়। পৃথিবীর প্রতিটি গন্তব্য নববী আদর্শের বর্ণিল ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ হয়ে উঠুক। অনাগত সভ্যতার জীবনেও ছড়িয়ে পড়–র তার উত্তম প্রভাব। আলাহ আমাদের সহায় হোন। এটাই প্রত্যাশা। লেখক : সহকারী সম্পাদক, মাসিক আর রাশাদ