ক্যান্সারকে জয় করতে পারলেন না বলিউড অভিনেতা বিনোদ খান্না
ইমরুল শাহেদ : বলিউডের বিশিষ্ট অভিনেতা ও রাজনীতিবিদ বিনোদ খান্না দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ৭০ বছর বয়সে ২৭ এপ্রিল মুম্বাইয়ের গিরগাঁওয়ে স্যার এইচ এন রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অবসান ঘটলো এক বর্ণাঢ্য তারকা জীবনের। তার জন্ম ব্রিটিশ ভারতের উত্তর-পশ্চিম ফ্রন্টিয়ারের পেশোয়ারে, যা পাকিস্তানে এখন খাইবার পাখতুনখোয়া নামে পরিচিত। তিনি তিন ছেলে অক্ষয়, রাহুল, সাক্ষী, কন্যা শ্রদ্ধা এবং দ্বিতীয় স্ত্রী কবিতাকে ছেড়ে গেছেন। মাত্র কয়েকদিন আগে অসুস্থ বোধ করলে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার ব্লাডার ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছিল। ছেলে রাহুল খান্না গণমাধ্যমকে জানান, ডিহাইড্রেশন হওয়ায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার উন্নতিও হয়েছিল। কয়েকদিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু হঠাৎই অবস্থার অবনতি হয়।
বলিউডের দাপুটে অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন বিনোদ খান্না। নিজের মাচো ইমেজের জন্য অমিতাভ বচ্চনের একচেটিয়া বাজারের মধ্যেও নিজের দর্শক তৈরি করেছিলেন তিনি। ১৯৬৮ সালে তিনি মন কা মিত ফিল্ম দিয়েই বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন। প্রথম ছবিতে তিনি খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। কিন্তু এরপর নায়ক এবং খলনায়ক উভয় চরিত্রেই সমানভাবে অভিনয় করে গেছেন তিনি। জনপ্রিয়তাও পেয়েছেন। মেরে আপনে, মেরা গাও মেরা দেশ, গাদ্দার, জেল যাত্রা, ইমতিহান, মুকাদ্দর কা সিকান্দর, ইনকার, কাঞ্চে দাগে, অমর আকবর এ্যান্টনি, রাজপুত, কোরবানী, কুদরত, দয়াবান, কার্নামা, সুরিয়া এবং ঝুমের মতো মনে দাগ কেটে যাওয়া ছবিতে তার অভিনয় স্মরণীয় থাকবে। তিনি ১৪৫টি ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাকে শেষবার পর্দায় দেখা গিয়েছে শাহরুখ-কাজল অভিনীত দিলওয়ালেতে। সত্যয়েভ জয়েতে ছবিতে একজন পুলিশ কর্মকর্তার প্রশাসনের অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকার যুদ্ধ অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
চলচ্চিত্রের পর্দা কাঁপানো এই অভিনেতা রাজনীতির ক্ষেত্রেও অনন্য হয়ে উঠেছেন। তিনি ১৯৯৭ সালে বিজেপিতে যোগ দেন। ১৯৯৮ সালে পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর কেন্দ্র থেকে লোকসভায় নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৯, ২০০৪ এবং ২০১৪ সালে বিজেপির সংসদ সদস্য হিসেবে গুরুদাসপুর থেকেই নির্বাচিত হয়েছিলেন। কেবল ২০০৯ সালে ভোটে হেরেছিলেন।
আজকালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সদ্য প্রয়াত অভিনেতা সাংসদ বিনোদ খান্না বরাবরই প্রতিবেশী দেশগুলো, বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি চাইতেন। বলিউডের জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তিনি পৌঁছে যেতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের হৃদয়ে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে তারই সময়ে চালু হয়েছিল ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বাস চলাচল। কারগিল যুদ্ধের পরে দুদেশের সম্পর্ক যখন তলানিতে তখন বাস চালানোর মতো উদ্যোগ নিঃসন্দেহে কূটনৈতিক সাফল্য দাবি করে।
প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়, আদতে বিনোদ খান্না এরকমই। বিজেপিকে যখন ‘অচ্ছুতের দল’ বলে কটাক্ষ করা হতো, তখনই দলে আসেন বিনোদ। তার আগে একমাত্র শত্রুঘœ সিনহাই ছিলেন চলচ্চিত্রের লোক যিনি বিজেপিতে এসেছিলেন। বিনোদের কাজটা কঠিন ছিল। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ‘কলঙ্ক’ ততদিনে লেগে গিয়েছে বিজেপির গায়ে। তবে বাজপেয়ির ডাক উপেক্ষা করতে পারেননি তিনি। ২০০২ সালের জুলাই মাসে তিনি কেন্দ্রের সংস্কৃতি এবং পর্যটন দফতরের মন্ত্রী হন। মাত্র ছয় মাস পরে তাকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী করা হয়। প্রথম এনডিএ সরকারের শেষদিন পর্যন্ত তিনি ওই পদে ছিলেন। তৎকালীন পাকিস্তান প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল বিনোদের। সেই সম্পর্কের রসায়নেই বাস যাত্রা সম্ভব হয়েছিল। তাছাড়া প্যালেস্টাইনের প্রাক্তন পররষ্ট্রমন্ত্রী নাবিল সাথের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিনোদ।
তবে অন্যান্য তারকাদের মতোই বিনোদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি সংসদে হাজিরা দেননি। তাকে লোকসভা কেন্দ্রে দেখা যায় না, এই অভিযোগ করে ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে বিনোদের লোকসভার তিনটি জায়গায়- বাটলা, গুরদাসপুর, পাঠানকোটে বিক্ষোভ কর্মসূচি নেয় কংগ্রেস। যার উত্তরে বিনোদ বলেন, ‘আমার কোনো পিআর এজেন্সি নেই। তবে আমি দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন। অভিনয় আমার রুটিরুজি। তাই বলে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি না এমন নয়।’ গুরুদাসপুরে ছোট-বড় মিলিয়ে বিপাশা, রবি এবং উজ নদীতে প্রায় এক ডজন ব্রিজ তৈরি করেছিলেন বিনোদ। এরফলে পাঞ্জাবের বাকি অংশের সঙ্গে গুরদাসপুরের যোগোযোগ বাড়ে। গরিব রোগীদের কথা মাথায় রেখে বিনা ব্যয়ে হার্ট সার্জারির ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। সূত্র : উইকিপিডিয়া, আজকাল