মৃত্যু ভগবানেরই অন্য এক প্রকাশ
রবিন কুমার সাহা
জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥
যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব, অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় তোমার শোক করা উচিত নয়। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা-২/২৭)
পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে কোনো বিশেষ দেহ প্রাপ্ত হয়ে আত্মা জন্মগ্রহণ করে। আর সেই দেহের মাধ্যমে কিছুকাল জড়জগতে অবস্থান করার পর সেই দেহের বিনাশ হয় এবং তার কর্মের ফল অনুযায়ী সে আবার আরেকটি নতুন দেহ ধারণ করে জন্মগ্রহণ করে। এভাবেই আত্মা জড়বন্ধন থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হতে থাকে। মৃত্যুকে কেউ এড়াতে পারে না। প্রত্যেক জীবের জন্য মৃত্যু অনিবার্য। যিনি জন্মগ্রহণ করেছেন, তাকে মরতে হবেই। হতে পারে সে কীটপতঙ্গ, মানব অথবা কোনো দেবতা, তাতে কিছু আসে-যায় না। পৃথিবীতে নানা বিষয় নিয়ে বিভিন্ন বিতর্ক হয় এবং মতের মধ্যেও অনেক ভিন্নতা দেখা যায়। তবে মৃত্যু নিয়ে কোনো যুক্তিই খাটে না। সবাই এ বিষয়ে একমত যে, প্রত্যেককেই মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হবে। এ কারণে প্রায়ই বলতে শোনা যায়, ‘মৃত্যুর মতো সুনিশ্চিত’।
ভগবদ্গীতাতেই বলা হয়েছে যে, মৃত্যু ভগবানেরই অন্য একটি প্রকাশ। ভগবানকে অনেকে স্বীকার করতে না পারে। ভগবানকে দেখতে পায় না বলে অনেকেই তাকে বিশ্বাস নাও করতে পারে। কিন্তু পরিশেষে ভগবানকে প্রত্যেকেই দেখতে পাবে। যদি কেউ ভক্ত হয়, তবে তিনি ভগবানের মনোহর রূপ দেখতে পাবে, কিন্তু যদি কেউ নাস্তিক হয়ে থাকে, তবে সে ভয়ানক মৃত্যুরূপে অবশ্যই ভগবানকে দেখতে পাবে। কেউ হয়তো বলতে পারেন, ‘আমি ভগবানে বিশ্বাস করি না অথবা মন্দিরে গিয়ে ভগবানকে দর্শন করার সময় আমার নেই, আমার অনেক কাজ। আমার কাজ আগে। ’ তখন ভগবান বলবেন, ‘ও আচ্ছা, আমাকে দেখতে আসার সময় তোমার নেই। ঠিক আছে। কোনো সমস্যা নেই। যদি তুমি আমার কাছে আসতে না পারো, তাহলে তোমার বাড়িতে থেকো। আমিই তোমার বাড়িতে একদিন তোমাকে দর্শন দিতে আসব।’ সেদিনই ভগবান মৃত্যুরূপে আসবেন।
মৃত্যুঃ সর্বহরশ্চাহং Ñ…আমি সর্বগ্রাসী মৃত্যু। (শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা- ১০/৩৪)
যখন সে সময় উপস্থিত হবে, তখন ক্ষমা চাওয়ার অথবা নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ কেউ পাবে না। সে সময় মৃত্যুরূপী ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করতে মানুষ বাধ্য হয়। এভাবে অবশেষে সে ভগবানকে দেখতে পায়, কিন্তু মনোহর শ্যামসুন্দররূপে নয়, বীভৎস ভয়ঙ্কররূপে।
এখন থেকেই ভগবদ্ আরাধনা আরাধনা না করেন, তবে শেষ মুহূর্তে আপনি বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হবেন। ভগবানের অস্তিত্বকে অস্বীকার করে এখন ভগবানকে এড়িয়ে যাওয়ার কাজটাকে হয়তো বেছে নিতে পারেন। কিন্তু একসময় আপনি তার সাক্ষাৎকার পেতে বাধ্য হবেন। মহানুভব ব্যাক্তিরা এ বিষয়টি বুঝতে পারেন এবং তার শরণাগত হওয়ার সচেতন সিদ্ধান্তটি নিতে বিলম্ব করেন না।