যেভাবে হাওরাঞ্চলের ক্ষতি এড়ানো যেত
আফসান চৌধুরী
মেঘালয় থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল এবং অতি বৃষ্টির ফলে হাওরাঞ্চলে যে ফসলহানি হয়েছে, মাছ কিংবা হাঁস মরেছে সেটা আমাদের জন্য বিশাল একটা ধাক্কা। বিশেষ করে ওই এলাকার মানুষ, পরিবেশ এবং সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করা দরকার যে, হাওরাঞ্চল কিন্তু আমাদের কৃষি ধনভা-ার। এই অঞ্চল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে দেশের খাদ্যের উপর প্রভাব পড়া। খাদ্যের উপর কতটুকু প্রভাব পড়বে এখনো বলা যাচ্ছে না।
হাওরাঞ্চলকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা আর না করা কোনো বিষয় নয়। তবে দুর্গত এলাকা ঘোষিত হলে সেখানে ত্রাণ হয়, ঋণ দিলে তা মওকুফ হয়। কিন্তু মনে হয় না বর্তমান সরকার কোনো এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করবে। কারণ তাদের কিছু রাজনৈতিক দাম চুকাতে হবে। সেটা তারা করতে চান না। হাওলাঞ্চলের মানুষের কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে সে সম্পর্কে সবাই জানে। তবে এই ক্ষতিটা কিছুটা হলেও এড়ানো যেত, এটাও মানুষ বোঝে।
আমরা সামগ্রিকভাবে দুর্নীতির সঙ্গে লড়াই করে পারছি না। একটা পদ্মা সেতু দুর্নীতি হয়নি বলে যে পরিমাণ লাফালাফি করলাম। অনেক কথা বললাম। কিন্তু যেখানে যেখানে দুর্নীতি হয় সেখানে যদি এই পরিমাণ নজর দিতাম তাহলে খুব ভাল হতো। পদ্মা সেতু রাজনীতির অংশ ছিল, কোর্ট তাই রায় দিয়েছে, আমরা সেটাই বলি। কিন্তু একই সঙ্গে সারাদেশে যে দুর্নীতি হচ্ছে, যে জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন পর্যন্ত আছে, কিন্তু কমিশন দিয়ে কিছু হয় না। বেশিরভাগ কেস লড়ে জিততে পারে না, সেটা নিয়ে আমরা কোনোদিন কোনো কিছু বলি না।
হাওরে বাঁধ ভাঙার ব্যাপারটা আগেভাগে নজর দিলে ক্ষতিটা কিছুটা হলেও এড়ানো যেত। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে। গত ২৫ বছরে এপ্রিল মাসে এত বৃষ্টি হয়নি। তার মানে পরিবেশ পরিবর্তন হচ্ছে। এই জায়গাটা আমাদের দেখা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা তা দেখিনি। কি ধরনের ফসল এখানে চাষ করা উচিত সেটা পর্যন্ত দেখা, গবেষণার বিষয় আছে। পরিবেশ পরিবর্তনের বেশি প্রভাব দেখা যায় আমাদের এখানে। এর বিপরীতে যে ধরনের সংজ্ঞা, প্রজ্ঞা এবং দক্ষতা থাকা দরকার প্রশাসনের, সেটা নেই। এ ছাড়া অন্যদের দক্ষতা ধার করে এনে কাজে লাগাবে প্রশাসন, সেটাও হয় না।
সোশ্যাল মিডিয়া খুব ভাল ভূমিকা পালন করে জাতীয় বিভিন্ন ইস্যুতে। সোশ্যাল মিডিয়া চাপটা তৈরি করার চেষ্টা করে। আজকে বাংলাদেশে যেহেতু রাজনীতির আর কোনোকিছু নেই, সোশ্যাল মিডিয়া ছাড়া আর তো কোনো পরিসরও নেই। এ কারণেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাপটা অনেক বেশি তৈরি হয়। ইউরেনিয়ামের বিষয়ে ভালোভাবে জানার জন্য বিজ্ঞানীদের জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল। বৈজ্ঞানিকের কথা মানুষ আমলে নিবে, কিন্তু আমলার কথা বিশ্বাস করে না।
এখন এ বিষয়ে বিজ্ঞানীদের কথাই শুনতে হবে। তবে স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি খুব খারাপ। হাওরাঞ্চলে লাখ লাখ মানুষের ক্ষতি, তাদের দুর্বিষহ জীবনযাপন, বাচ্চাগুলোর অপুষ্টি, সংসারগুলো সব ধ্বংস হওয়ার মতো পরিস্থিতিকে আমরা চরমপন্থা বলতে রাজি নই। কোথায় একটা বাড়িতে ৩টি জঙ্গির সন্ধান পাওয়া গেছে, বাড়ি ঘিরে আছে শত পুলিশ, ওখানে আমাদের সব দৃষ্টি। হাওরাঞ্চলের মানুষগুলোর যে এত ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, জঙ্গিরাও তো এতটা ক্ষতি করতে পারবে না। যা মানুষের চরম ক্ষতি করে সেটাই হচ্ছে চরমপন্থা। হাওরে চরম সংকটপূর্ণ অবস্থা তৈরি হয়েছে। যারা চরম অবস্থা সামনে নিয়ে আসে, তারাই হলো চরমপন্থি।
পরিচিতি: সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক
মতামত গ্রহণ: সাগর গনি
সম্পাদনা: আশিক রহমান