হাওরের কৃষকদের অনিশ্চিত জীবনে আলো কোথায়
রাজেকুজ্জামান রতন
হাওরে পানির ঢল নামাটা নতুন কোনো ঘটনা নয়। প্রতিবছর বৈশাখ মাসের দিকে পাহাড়ি অঞ্চলের ঢলটা নেমে আসে হাওরে। এই ঢল-এর সঙ্গে হাওরের মানুষের জীবন-জীবিকা ওৎপ্রোতভাবে যুক্ত। ফলে এটা তো কোনো নতুন সমস্যা নয়। সমস্যটা হলোÑ এ ব্যাপারে সরকারের উদাসিনতা এবং দায়িত্বহীনতা। সঠিক সময়ে বাঁধ মেরামত, বাঁধ নির্মাণ, বাঁধের ভাঙনগুলোকে পুনঃনির্মাণ করাÑ পানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যথাযথভাবে কাজগুলোকে না করার কারণেই আজকে হাওরের মানুষ এত বড় একটা দুর্ভোগের মধ্যে পড়লেন।
একটা সাময়িক সমাধান হতে পারত যদি চৈত্রমাসের মধ্যেই যদি বাঁধগুলোকে পুনঃনির্মাণ করা হতো। হাওরের মানুষের প্রধান ফসল হচ্ছে, বোরো ধান। বছরে একবারই তারা ধান পায়। ঢলের পানি যখন আসে তার আগেই ধানটা কেটে নেয়। ফলে বোরো ধানটা পাকেও ওই সময়ে। ১০-১২ দিন আগে পানি এসে গেলেই আধা-পাকা ধান তলিয়ে যায়। চোখের সামনে কৃষকের বড় একটা সর্বনাশ ঘটে যায়। ফলে আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতা আন্তঃপক্ষীয় সমঝোতার অভাব। ওখানকার জনপ্রতিনিধি হিসেবে যারা বিবেচিত তাদের জনগণের প্রতি দায়িত্বহীনতা আজকে হাওরের মানুষকে দুর্দশার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
শুধু ৩০ লাখ টন ধান নষ্ট হলো তা নয়, একই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হলো বিপুল পরিমাণ মৎস্য সম্পদ। যারা হাঁস পালন করেন সেই হাঁসও। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছেÑ এই পানির তোড়ে যে পরিমাণ ভিটেমাটি ভেঙে গেল, তা পুনর্বাসনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ লাগবে। হাওর অঞ্চলের ক্ষতি ১০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেল। কিছু মানুষের দায়িত্বহীনতার কারণেই এমনটি হয়েছে বলে মনে করি। গোটা দেশের ১ পঞ্চমাংশ ধান উৎপন্ন হয় যে হাওর এলাকায়, সেই এলাকার ধান চাষীদের জীবনে দুর্দশা নেমে এলো। গোটা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা এর মধ্যদিয়ে বিঘিœত হবে। আমাদের মাছের একটা বিরাট সরবরাহ আসে হাওর থেকে। বাংলাদেশের ৬ ভাগের ১ ভাগ হচ্ছে হাওর অঞ্চল। ৭টি জেলা ও ৩০টির মতো উপজেলা এই হাওরকে কেন্দ্র করে দাঁড়িয়ে আছে। ফলে এ ব্যাপারে একটা দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যাশা করে আসছিল হাওরবাসী। হাওরবাসী বারবার একটা কথাই বলছিল যে, হাওরের দুঃখ সংসদে বসে জনপ্রতিনিধিরা বোঝেন না। আমরা মনে করি, যারা দায়িত্বে অবহেলা করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা উচিত। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারেন, উঠে দাঁড়াতে পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারকে। হাওরের পানিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ মাছের পোনা ছাড়ার ব্যবস্থা যেন করা হয়। যাতে এক বছরের মধ্যে কিছুটা হলেও ক্ষতি পূরণ করা যায়।
যখন ফসলহানি হয়, যখন মানুষের জীবিকার উপায়গুলো ধ্বংস হয়ে যায়, যখন বসত-বাড়িগুলো ভাঙনের মুখে পড়ে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে, এমন পরিস্থিতিকে বলতেই হবে, মানুষ দুর্গতির মধ্যে আছে। ফলে অবিলম্বে হাওর অঞ্চলকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করা শুধু নয়, প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি জানাই।
পরিচিতি: কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাসদ
মতামত গ্রহণ: তানভীন ফাহাদ
সম্পাদনা: আশিক রহমান