টাকাপয়সাওয়ালা আওয়ামী লীগাররা এখন কি করবেন?
অজয় দাশগুপ্ত
আওয়ামী লীগের নতুন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সৈয়দ আশরাফের চাইতে এক্টিভ। সচলতায় অনেক এগিয়ে। আশরাফ ভাই ছিলেন কিছুটা নিভৃতচারী। তাই তার আমলে সাধারণ সম্পাদকের কথাবার্তা নিয়ে ঝড় ওঠার তেমন কোনো সুযোগ ছিল না। একটা কথা মানতেই হবে এখন কথার যুগ। যে যত বলেন তিনি তত পপুলার, তত বিতর্কিত। ওবায়দুল কাদের ছাত্রনেতা থেকে আজকের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। কথা বলাটা তার রপ্ত।
কিন্তু সাধারণ সম্পাদকের পদ পাবার পর থেকে তিনি অনবরত বলছেন। মনে হচ্ছে বাণী নির্ভর এই দলের প্রয়োজন হিতোপদেশ। আর উপদেশ পেলেই বর্তে যাবে আওয়ামী লীগের লোকজনেরা। এদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতি চাঁদাবাজি বা মস্তানী এখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে। যে যেখানে যেভাবে পারছে লুটছে। বছরের হিসেবে গদিতে যে যত বেশি সময় থাকবে তত বেশি খাবে এটাই নিয়ম। ওয়ায়দুল কাদের কদিন আগে এদের কাউয়া, দেশি মুরগি এসব বলে শিরোনাম হবার পর আজ দেখি সরাসরি আক্রমণ করেছেন।
চট্টগ্রামে এক কর্মী সভায় তিনি বলেছেন, টাকা দিয়ে কি হবে? সরকারে বা দেশশাসনে থাকতে না পারলে নাকি এই টাকা নিয়ে পালাতে হবে দেশ ছেড়ে। এই কথাটা তিনি তাদের মনে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে ভালো পরামর্শ। কিন্তু একটা কথা তো যৌক্তিকভাবেই মনে আসছে, শুদ্ধ বা ভালো পথে উপার্জিত হালাল টাকার জন্য কেউ কোনোদিন দেশ ছেড়ে যায়? না যেতে হয়? যারা যায় তাদের আমরা চিনি। জানি কেন তাদের যেতে হয়। যেমন আওয়ামী লীগের চিরশত্রু তারেক রহমান। সেই কবে টাকা নিয়ে বিলেতে গেছে। আজ অবধি রাজার হালে জীবনযাপন করছে। কত দেশের জমিদার রাজার ছেলে-মেয়েরা বিলেত-আমেরিকায় ফাস্ট ফুডের দোকানে কাজ করে। ট্যাক্সি চালিয়ে জীবনযাপন করে। কত বাঙালি কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালায়, আজ অবধি কেউ জানে তারেক রহমান কি করে? অথচ প্রায়ই স্যুট কোট পরে ভাষণ দেয় বিভিন্ন সভায়। চেহারায় জেল্লাও প্রচুর।
আমরা ভেবেছিলাম সেটাই হবে শেষ লেসন। হয়তো নেই বরং এখন কাদের ভাইয়ের কথায় জানলাম আরও আওয়ামী তারেক তৈরি হচ্ছে যারা একদিন সরকার না থাকলে দেশ ছেড়ে পালাবে। দলের সাধারণ সম্পাদক যখন কিছু বলেন আমাদের তো বিশ্বাস করতেই হয়। সঙ্গে এটাও জানতে চাই এসব চোর বা অবৈধ টাকাওয়ালাদের আপনারা চিনলে বা জানলে দলে রাখছেন কিভাবে? টাকা নিয়ে বিদেশে ভাগার পরামর্শের পরিবর্তে আপনি যদি বলতেন, অচিরেই এই টাকা ফেরত নেওয়া হবে এবং আর যারা টাকা কামাচ্ছে তাদের সাইজ করা হবে। আমরা জানতাম কোনোদিন কেউ টাকা নিয়ে বিদেশে ভাগার কথা ভাববে না। আপনি সাধারণ সম্পাদক, আপনার কথায় দেশে ঝড় ওঠে মানুষ একবার হলেও ফিরে তাকায়। আপনার শক্তি এমন আপনি অন্যায়কারীকে চড়াতেও দ্বিধা করেন না। তাই আমরা আশা করি, এই চড়গুলো এসব টাকাওয়ালাদের গালে পড়বে।
সেটা যদি না হয় আপনার এই কথাবার্তার ভেতর দিয়ে আসলে তারাই শক্তি পাবে যারা বহুদিন ধরে আওয়ামী লীগের মানুষদের চোর-ডাকাত বলে আসছে। সবাই যে না সেটা আমরা জানি তবে যখন তা বেশিরভাগের বেলায় প্রযোজ্য তখন বলতে হয় পচন ধরে গেছে। সকালবেলা এই খবরটা পড়তে পড়তে মনে হলো দল কি শুধু সরকারে থাকার জন্য? না অর্জিত টাকা বাঁচানোর জন্য? এই দলের সম্পাদক বঙ্গবন্ধু তাজউদ্দীন বা অন্যরা যা কোনোদিন চিন্তায় আনতে পারেননি আজ সেটাই বাস্তবতা।
তবু আপনাকে ধন্যবাদ বলার জন্যে। বিএনপি আবার আসলে হয়তো এর চেয়ে একচুলও কম টাকা কামাবে না। তারপরও বলি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানাভাবে এখন ভয় ও আতঙ্কের হয়ে উঠছে। তাদের না সামলালে আবার তো আবার কবে যে শাসনে যাওয়া যাবে কেউ বলতে পারবে না।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক
সম্পাদনা: আশিক রহমান