ইসলাম নয়, ব্লাসফেমির জন্ম রাজনীতির গর্ভে
ডেস্ক রিপোর্ট: ব্রিটিশ-ভারতীয় লেখক সালমান রুশদির বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে ১৯৮৯ সালে ইরানের ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুলুল্লাহ খোমেনি তাকে হত্যার ফতোয়া জারি করেছিলেন। ব্লাসফেমির শুরুর কাল সেটা। সালমান রুশদির ওপর ইরানি নেতার ফতোয়া থেকে শুরু করে ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লি এবদোর কার্যালয়ে সন্ত্রাসী হামলা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মুসলিম বিশ্বে ব্লাসফেমিবিরোধী কর্মকা- ক্রমাগত দৃঢ় হচ্ছে। তবে কোরআনসহ অপরাপর ইসলামী অনুশাসনে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হত্যার বিষয়টি নেই। ইতিহাসের পর্যালোচনাতেও এমন সহিংসতার অতীত নজির নেই। নৃবিজ্ঞানী তালাল আসাদের বিশ্লেষণ অনুযাযী, ইসলাম নয় এই ব্লাসফেমির জন্ম হয়েছে রাজনৈতিক-ইসলামের সাম্প্রতিক বাস্তবতায়। সূত্র: বাংলাট্রিবিউন
ইসলাম ও ব্লাসফেমির ইতিহাস নিয়ে একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে অলাভজনক সংবাদমাধ্যম দ্য কনভারসেশন। প্রতিবেদনে বলা হয়, এটা হয়তো সহজেই বলে ফেলা যায় যে, ইসলাম ‘অসহিষ্ণুতায় পূর্ণ’ এবং মুসলিমরা ‘স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র বিরোধী’। তাদের মাঝে ‘স্বৈরতন্ত্র ও ধর্মান্ধতা’ বিদ্যমান। কিন্তু এই ধারণা মুসলিমদের ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও ইসলামের অনেক শাখাকে শুধু এড়িয়েই যায় না, বরং সমস্যার আর্থ-সামাজিক সমস্যার ভিত্তিকেও এড়িয়ে যায়।
ইতিহাসদার্শনিক তালাল আসাদ খ্রিস্টধর্ম ও ইসলামের বিরুদ্ধে কথা বলার পার্থক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। খ্রিস্টধর্মের মতো ইসলামি ইতিহাসে ব্লাসফেমি খুঁজে বের করা অনেক কঠিন। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে যেটা ব্লাসফেমির মতোই। যেমন – মুসলিমরা প্রায়শই বলেন ‘ইসাহ’। এর অনেকগুলো অর্থ রয়েছে – অপমান, ক্ষতি। কিন্তু এই শব্দ ব্যবহারের কারণে মুসলিমরা তাদের উপর হামলা করেনা।এদিকে ইসলামি ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক লেখক কোরআন ও মুহাম্মদ (স.) সহ ইসলামি বিশ্বাসের সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তাদের কোনও শাস্তি হয়নি। ইসলাম নিয়ে মুসলিম ও অমুসলিমদের মাঝে অনেক তর্ক-বিতর্ক হয়েছে। অনেকে উপহাসও করেছেন। উদাহরণ হিসেব আরবের দার্শনিক আবুল আল-আলা আল-মারির কথা বলা যেতে পারে। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনি আমার ধর্ম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে আমি বলবো যে, আমি বোকা নই।’বাগদাদে ইবনে আল-রাওয়ান্ডিও তার বইয়ের বিভিন্ন অংশে কোরআন নিয়ে সমালোচনা করেছেন। সমসাময়িক সময়ে ইরাকি লেখক ও কবি মারুফ আল-রাসাফি তার বই ‘দ্য মুহামাদিয়ান পার্সোনালিটি’তে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (স.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
বাস্তবতা হলো, ব্লাসফেমির কারণে হত্যা করা বা হামলার ঘটনা খুবই সাম্প্রতিক বিষয়। বলা যেতে পারে, রুশদির ফতোয়ার পরই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি।রাজনৈতিক ইসলামের প্রতিষ্ঠাতারা এই ধারা শুরু করেছেন। এজন্যই বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকেই অনেক সেক্যুলার চিন্তবিদ, লেখক ও কবিরা অনেকভাবে ইসলাম বিরোধী লেখা শুরু করেন।সম্পাদনা: প্রিয়াংকা আচার্য্য