হাওরের একজন মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবেন না বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতি ও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা : প্রধানমন্ত্রী
রাজু আহমেদ রমজান ও নুর উদ্দিন, সুনামগঞ্জ : হাওরাঞ্চলের হাওরে বাঁধ নির্মাণে কারও কোনো ধরনের দুর্নীতি ও গাফিলতি থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, হাওর অঞ্চলে মানুষের কষ্ট দূর করার জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার কৃষিকে বাঁচানোর জন্য। এসব টাকার বাঁধ নির্মাণে কোনো ধরনের অবহেলা থাকলে তা ছাড় দেওয়া হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকার একজন মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবেন না, এটাই আমাদের লক্ষ্য। ১০ টাকা কেজিতে ও এমএসের মাধ্যমে চাল বিক্রি করা হচ্ছে। দুঃস্থদের জন্য রয়েছে ভিজিএফ কার্ডের ব্যবস্থা । এই অঞ্চলের মানুষের ঘরে খাবার আসার আগ পর্যন্ত এসব সহায়তা অব্যাহত থাকবে।
গতকাল সকালে ১১টায় সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় হাওর এলাকা পরিদর্শনের পর উপজেলার শাহীদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন। দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণকালে ৭টি ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেগুলো হচ্ছেÑ কৃষকরা বিনামূল্যে সার, বীজ ও কৃষি উপকরণ পাবে হাওরবাসী। সুদের হার ৫০ ভাগ কমিয়ে ঋণ আদায় স্থগিত আপদকালীন সময়ের জন্য। দুর্গত এলাকায় বেসরকারি ঋণ আদায়কারীদের তৎপরতা তদারকির নির্দেশ। দশ টাকায় চাল বিতরণে প্রত্যেক ইউনিয়নে ডিলার নিয়োগ। চালের মজুদদারদের অনিয়ম দমন করারও নিশ্চয়তা।
হাওরের নাব্যতা রক্ষা গভীর খাল খনন ও সময়মতো বাঁধ নির্মাণ।
দুর্নীতি অপচয় ও গাফিলতিতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওরাঞ্চলের মানুষ প্রতিনিয়ত জীবন যুদ্ধ করে বেঁচে আছেন। হাওর এলাকার মেয়ে আমি। আমি বুঝি আপনাদের কষ্ট। এসব এলাকার মানুষ বন্যায় সবসময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এসব এলাকায় বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করা হবে। শুধু ফসলের ওপর নির্ভরশীল না থেকে মাছের উৎপাদন বাড়াতে হবে। মাছ উৎপাদনের সঙ্গে সঙ্গে মাছের সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাত ও বাজার জাতের ব্যবস্থা যেন নেওয়া হয়, সে ব্যবস্থা করা হবে।
হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে সরকারের মহা পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকার নদীগুলো যেন ভরাট না হয়ে যায়, সেজন্য নদীগুলো ড্রেজিং করা হবে। হাওর এলাকায় খাল কাটা হবে এবং এসব খাল যেন বেশি পানি ধারণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব এলাকার ঘরবাড়ি যেন দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে জন্যও পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। হাওর উন্নয়ন বোর্ড সরকারের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হাওর বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ হাওরে যে পানি জমা হয়, এই পানিই সারা বছর নদীতে যায়। এই পানি এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
হাওর এলাকাকে দুর্যোগ প্রবণ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রকৃতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এবং প্রকৃতিকেই কাজে লাগানোর চিন্তা করতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে, সেটা মোকাবিলা করেই বাঁচতে হবে। কিভাবে মোকাবিলা করে বাঁচতে পারি, সেই পথ বের করতে হবে। এমন ব্যবস্থা নিতে হবে যেন কোনো মানুষের জীবনের ক্ষতি না হয়।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, পানিসম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম ও দিরাই-শাল্লা আসনের সংসদ সদস্য জয়া সেনগুপ্তা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী উত্তর-পূর্বাঞ্চলী জেলা সুনামগঞ্জের বন্যাকবলিত কয়েকটি হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি হাওর এলাকার বন্যাদুর্গত জনগণের প্রতি তার গভীর মমত্ববোধ ও সমবেদনা জানান। প্রধানমন্ত্রী বন্যাকবলিত শাল্লা উপজেলা সদরের শহিদ আলী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় চত্বরে জনগণের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শেষে স্পিডবোটে করে কয়েকটি প্রত্যন্ত হাওর ও সংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে প্রধানমন্ত্রী জনগণের সাথে কথা বলেন এবং তাদের খোঁজ-খবর নেন। শেখ হাসিনা হাওর এলাকার শিশুদের কাছে জানতে চান তারা বছরের প্রথমদিন পাঠ্যবই পেয়েছে কিনা, শিশুরা ইতিবাচক জবাব দিয়ে সমস্বরে একসাথে বলে, ‘আমরা বছরের প্রথমদিন পাঠ্যবই পেয়েছি।’ বর্ষাকালে স্কুলগামী শিশুদের চলাচলের সমস্যা অনুধাবন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর এলাকা এবং পার্বত্যাঞ্চলে আবাসিক বিদ্যালয় নির্মাণের লক্ষ্যে সরকার একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি