ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠায় সুপ্রিম কোর্ট চিঠি দিলেও উদ্যোগ নেয়নি সরকার
এস এম নূর মোহাম্মদ : সুষ্ঠু ও দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির জন্য প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তাই বিচারক ও বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকলকে আধুনিক প্রশিক্ষণ, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ দেওয়ার জন্য প্রয়োজন ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি। এছাড়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ মানদ- হলো প্রতিমুহূর্তে প্রণীত আইনের উপযোগীতা, প্রযোজ্যতা, প্রয়োগ, কার্যকারিতা এবং গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করা। আর এজন্যও ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশের জনসংখ্যা এবং বিচারাধীন মামলার সংখ্যা বিবেচনায় আরও বিপুলসংখ্যক বিচারক নিয়োগ দিতে হবে। যাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। এজন্য দরকার ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি। যেখানে থাকবে ফরেনসিক ল্যাবরেটরি, ডিএনএ ল্যাবরেটরি, সাইবার ক্রাইম ডিটেকটিং মেথড, ডিজিটাল এভিডেন্স রেকর্ডিং সিস্টেম, আইটি বেইসড কেইস ম্যানেজমেন্টের সুবিধা। যদিও প্রতিবেশি দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে এ ধরনের একাডেমি রয়েছে। ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমির গুরুত্ব বিবেচনায় গত বছরের ২২ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেওয়া হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। যদিও সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে এ ব্যাপারে এখনো কিছুই জানানো হয়নি সুপ্রিম কোর্টকে। যার কারণে গত বছরের ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা। এছাড়া উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য নির্মিত জাজেস কমপ্লেক্স উদ্বোধনের দিনও প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি তুলে ধরেন প্রধান বিচারপতি।
ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনের পটভূমি, প্রেক্ষাপট ও প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে সাভার, কেরানীগঞ্জ অথবা গাজীপুরে কমপক্ষে ২৫ একর জমি বরাদ্দ প্রদান করার জন্য চিঠিতে বলা হয়। এতে বলা হয়, একটি পূর্ণাঙ্গ, আধুনিক ও মধ্যম মানের একাডেমির জন্য কমপক্ষে ২৫ একর জমি প্রয়োজন। জমি পাওয়া গেলে সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে এবং দেশি-বিদেশি দাতা সংস্থার অর্থায়নে একটি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপন করার কাজ শুরু করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার মো. সাব্বির ফয়েজ আমাদের অর্থনীতিকে বলেন, গত বছর সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেওয়া হয়। এরপর বারবার যোগাযোগ করা হলেও এখনো পর্যন্ত কোন জবাব আসেনি। তিনি বলেন, ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হলে বৃহত্তর পরিসরে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে সেবা দেওয়া যাবে। বিশেষ করে ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত সবাই উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশে স্বল্প পরিসরে নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে জুডিশিয়াল সার্ভিস ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ভবনে একইসঙ্গে রয়েছে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের কার্যালয়ও। সেখানে পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে। এর স্থান সংকুলান এতই কম যে, এখানে আধুনিক প্রশিক্ষণের পরিবেশ নেই বললেই চলে। এছাড়া সেখানে দেশের উচ্চ আদালতের বিচারকদের জন্য প্রশিক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই।
এর আগে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব পালনকালে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিন্হা বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান ছিলেন। তখনই নিম্ন আদালতের বিচারকদের প্রশিক্ষণের এই দৈন্যদশা লক্ষ্য করেন তিনি। পরে প্রধান বিচারপতি হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ভারত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র সফর করে তিনি সে সব দেশের বিচারকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। আর দেশে ফিরে সফরের প্রতিবেদন রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করেন।
ওই প্রতিবেদন পেশকালে প্রধান বিচারপতি কমপক্ষে ভারতের ভূপালে অবস্থিত জুডিশিয়াল ট্রেনিং একাডেমির আদলে বাংলাদেশের বিচারকদের জন্য একটি ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ করেন। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট থেকে সরকারকে চিঠি দেওয়া হয়।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে জমির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়কে নির্দেশ দেন নি¤œ আদালতের বিচারকদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে। নির্দেশনা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ভারতীয় হাইকমিশনারের মাধ্যমে ভারতে বাংলাদেশের বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের জন্য যোগাযোগ করেন।
সেই প্রেক্ষিতে গত ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে এ নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিবছর ১০টি ব্যাচে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন সাপেক্ষে বিচারকদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেবে ভারতের ন্যাশনাল জুডিশিয়াল একাডেমি। প্রতিটি ব্যাচে ৩০ জন করে বিচারক অংশ নেবেন। প্রশিক্ষণের সময় হবে দুই সপ্তাহ। সম্পাদনা : উম্মুল ওয়ারা সুইটি