রমজান না আসতেই বেড়েছে ছোলা চাল, চিনি, রসুন,পিঁয়াজের দাম
মাসুদ মিয়া : রমজান আসতে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় বাকি থাকলেও এখনই বেশ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়তে দেখা গেছে। সক্রিয় হয়ে উঠেছে সিন্ডিকেট চক্র। পাশাপাশি এসব পণ্যের কয়েকটির সরবরাহও কমছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে চাল, ছোলা, ডাল, চিনি, মসলা, পিঁয়াজ, রসুন, আদা, মাংসের দাম। গত দুদিনে চিনি কেজিপ্রতি বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। আগামীতে এ দাম আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা ভোক্তাদের। সূত্রমতে, কয়েকটি শীর্ষ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারক চক্র সিন্ডিকেট করে রমজানের আগেই বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। হাতেগোনা কয়েকটি শীর্ষ কোম্পানি নিয়ন্ত্রণ করছে বাজার। এসব কোম্পানি দাম বাড়ানোর পরে বাকিরা সহসাই সুযোগ পেয়ে বসে। অনুুরূপ ডাল, চিনি, পিঁয়াজ, রসুন ও মসলা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। বৃষ্টি, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি ও মালামাল সংকট দেখিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
গতকাল রোববার রাজধানীর কয়েকটি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সয়াবিন তৈল মসুর ডাল বাদে, চাল, ছোলা, চিনি, পিঁয়াজ, রসুন, আদা ইত্যাদির দাম বেড়েছে।
তবে সরবরাহ সঙ্কট থাকায় রোজা শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত আরও কিছু দাম বাড়বে বলে মনে করছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।
যদিও অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমদানিকৃত এসব পণ্যের প্রত্যেকটিরই দেশে বর্তমানে উদ্বৃত্ত মজুদ রয়েছে। সরবরাহও স্বাভাবিক। ফলে দাম বাড়ার কোনো যুক্তি নেই।
ছোলা ও বিভিন্ন ডাল : রমজানে সবচেয়ে বেশি চাহিদা বাড়ে ছোলার। ইফতারির অন্যতম অংশ এটি। এছাড়া অন্যান্য ইফতারি তৈরিতে বেসনসহ অন্য ডাল ব্যবহার করা হয়। গত এক মাসের ব্যবধানে ছোলার দাম ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা হয়েছে। তবে দাম বাড়ার ব্যাপারে সরবরাহ কম বলে জানিয়েছেন মালিবাগ বাজারের মুদি ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন। তিনি এ প্রতিবেদকে বলেন, বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কম। ফরহাদ বলেন,সায়াবিন তৈল মসুর ডাল বাদে সব মসলার দাম বেড়েছে।
সরকারি-বেসরকারি মিলগুলোর কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুদ থাকার পরও গত কয়েকদিনে তা বাড়তে শুরু করেছে। গত দুই দিন ধরে ৩ টাকা থেকে চার টাকা কেজিতে বেড়েছে। খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা থেকে ৭০ টাকা। কিন্তু হঠাৎ করেই বাড়ছে রসুনের দাম। আর পিঁয়াজের দাম কয়েক দফায় কমার পর আবার বাড়ছে। এক মাসের ব্যবধানে পিঁয়াজের দাম ১০ টাকা এবং রসুনের দাম ৪০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে দেশি পিঁয়াজ ৩২ থেকে ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে, আর আমদানি করা পিঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে। এক মাস আগে দেশি পিঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং আমদানি করা পিঁয়াজ ২০ থেকে ২৫ টাকায় পাওয়া যেতো। অপরদিকে আমদানি করা রসুনের দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বাজারে এই রসুন ২২০ থেকে ২৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ভোজ্য তৈল : রমজান মাসে সব ধরনের ভোজ্য তৈলের চাহিদাই বাড়ে। তবে লুজ পাম অয়েল ও সুপার পাম অয়েলের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। ভোজ্য তৈলের মধ্যে পাম অয়েল কমে বিক্রয় হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজি, সয়াবিন তৈল খোলা ৮৫ টাকা।
এছাড়া রমজান আসার আগেই বাড়তে শুরু করেছে মুরগি ও হলুদের দামও। এদিকে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার উপরে।
মিরপুরের বাজারের সবজি বিক্রেতা হায়দার হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে কাঁচা মরিচের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকা বেড়ে ১২০ টাকায় উঠেছে। লেবুর দাম হালিপ্রতি ৫ টাকা বেড়েছে, কাগজি লেবু ২৫ টাকা ও এলাচি লেবু ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বেশির ভাগ সবজি কেজিপ্রতি ৬০ টাকার কাছাকাছি দরে বিক্রি হচ্ছে উল্লেখ করে হায়দার বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে সবজির দাম বাড়বে কি না জানতে চাইলে, তিনি বলেন, সবজির বাজার উঠানামা করে। বাজারে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে। রাজধানীর খুচরা বাজারে এখন মোটা চালের দাম কেজিপ্রতি ৪২-৪৩ টাকা। কিছুদিন আগেও যা কেজিতে দুই টাকা কম ছিল। মাঝারি মানের চালের দামও উঠেছে ৪৬-৪৮ টাকায়। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা কেজি দরে। সম্পাদনা : শিমুল মাহমুদ