সাহিত্য খায় না মাথায় দেয়!
জান্নাতুন নাঈম প্রীতি
কাসেম বিন আবুবাকার নামের যে লোকটিকে নিয়ে ইংল্যান্ডের ডেইলি মেইলে একটি বড় আর্টিকেল ছাপা হয়েছে তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়লাম। এই লেখকের মাহাত্ম্য বুঝতে তার দুটো বই গতকাল রাতের মধ্যে আমি পড়ে শেষ করেছি। এখন আমি যে কথাগুলো বলব তা শুনতে কারোরই সম্ভবত ভালো লাগবে না। সেটা হচ্ছেÑ ডেইলি মেইল কোনো সাহিত্য পত্রিকা না। এটা একটা ট্যাবলয়েড। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষের সমস্যা হচ্ছেÑ এরা বিদেশে গিয়ে বাথরুম পরিষ্কার করবে, কিন্তু দেশে ওই একই কাজ করা শ্রেণিকে নিচু মর্যাদায় ফেলে রাখবে। কাজেই বিদেশের পত্রিকায় গালাগালি ছাপা হলেও এরা আনন্দে বগল বাজাবে! ডেইলি মেইল তেমনই এক পত্রিকা। এরা সবসময় হট টপিক খোঁজে আবার কোনো একসময় কোনো এক টপিককে হট বানিয়ে দেয়।
বিশ্রী সত্য হচ্ছেÑ আমাদের দেশের বেশিরভাগ সাহিত্যিক একটা ইল্যুশানের মধ্যে থাকেন। ‘আমি কি হয়ে গেনু’ টাইপের। তারা একরকমের জনবিচ্ছিন্ন জনপ্রতিনিধি! কাসেম বিন আবুবাকার যে মাদ্রাসায় পড়া অথবা গ্রামের ধর্মভীরু, অনেকক্ষেত্রে ধর্মান্ধ ছেলেগুলোকে টার্গেট করে লিখেছেন, এদের সে রকম কোনো টার্গেট নেই। এরা জানেনও না যে গ্রামের মাদ্রাসায় পড়া ছেলেটির কাছে কোনটা গ্রহণীয়। ফলে যাদের কাছে কাশেম সাহেবের লেখা জনপ্রিয়, তাদের কাছেই হুমায়ূন আহমেদ, জাফর ইকবালরা অজনপ্রিয় হবে এটাই স্বাভাবিক।
সাহিত্যমান নিয়ে কথা বলার আমি কেউ না, ওটা বলার অনেকেই আছেন। আমি কেবল বলব, আমাদের সাহিত্যিক এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা একটি কাজ খুবই ভালো পারেন, সেটা হচ্ছেÑ আমাদের প্রতিভা কেউ বুঝল না, বাজারি সাহিত্যে মার্কেট ছেয়ে গেল, সব শালা মূর্খের দল, এসব বলে গালাগালি করতে। যে দেশের শিক্ষার মান বলতে প্রশ্নপত্র ফাঁস, মেডিকেলের প্রশ্ন ফাঁস, চাকরির হাহাকার, সে দেশে সাহিত্য বোঝার লোক কীভাবে তৈরি হবে? সাহিত্য খায় না মাথায় দেয়? একটা সাহিত্যের ছাত্র বিসিএস নিয়ে যতটা চিন্তায় থাকে, ততটা চিন্তায় থেকে মহান সাহিত্যকর্ম করা সম্ভব নয়।
দেশের অভিভাবকেরা সাহিত্য কতটা বোঝেন সেটা বোঝা যায়Ñ তারা গাঁজা, ফেন্সিডিল নিয়ে যত চিন্তায় থাকেন, তার চেয়ে বেশি থাকেন সম্ভবত আউটবই নিয়ে। আউটবই পড়ে মাথাটা যাচ্ছেÑ এ রকম ডায়ালগ বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরে শুনতে পাবেন। তার ওপর আছে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, ধর্মীয় স্পর্শকাতরতা। সবগুলো মিলিয়ে যে জগাখিচুড়ি জনগোষ্ঠী, সেই জগাখিচুড়ির কাছে ধর্মীয় এবং যৌনতা একই প্যাকেটে মুড়ে যিনি পরিবেশন করেছেন তিনি কাশেম বিন আবুবকর। তার লেখা আহামরিও না, ফেলনাও না। ফেলনা যে না সেটা মার্কেট দেখেই বুঝে যাওয়ার কথা!
শেষ কথা হচ্ছেÑ আমাদের দেশের ‘বুদ্ধিজীবী’ তকমা পাওয়া সাহিত্যিক জনগোষ্ঠী গায়ের জোরে ‘কি হয়ে গেনু’ স্বভাব ত্যাগ করুন। সাহিত্যমান বোঝার মতোন পাঠ্যনীতি, পাঠ্যপুস্তক কিচ্ছু থাকবে না আর সাহিত্য বোঝা জনগণ আকাশ থেকে পড়বে এইটা আশা করেন কি করে?
লেখক ও ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর, মাইক্রোসফট
ফেসবুক থেকে