মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ কোন পথে?
হাবীব ইমন
কিছুদিন আগে খিলগাঁওয়ে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের ‘ঘুষ ছাড়া চাকরি চাই’ দাবিতে গণস্বাক্ষর ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে বলেছিলাম, সুদ-ঘুষ ইসলামে হারাম। কিন্তু আমাদের মৌলভিরা ঘুষ নিয়ে তেমন একটা কথা বলেন না বললেই চলে। তারা কথা বলেন, ভাস্কর্য ভাঙ নিয়ে।
আমাদের সমাজ-রাষ্ট্র এখন ঘুষের জালে আটকা পড়েছে। একই সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ আমাদের জন্য কাল হয়ে এসেছে। ঘুষ ছাড়া বর্তমানে সরকারি চাকরি হয় না বললে কি ভুল বলা হবে? বেসরকারি ক্ষেত্রেও এ প্রবণতা রয়েছে। পদ ও পদবি অনুসারে ২ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ লেনদেনের খবর পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে জানা যায়। এ বিষয়ে কোনো সরকারই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণল করেনি। শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, চাকরি জীবনে পদোন্নতি, বদলিসহ প্রায় সবক্ষেত্রেই ঘুষ একটি সার্বজনীন ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা জানি, ঘুষ একটি হারাম কাজ। ধর্মীয় দৃষ্টিতেও গর্হিত কাজ। আমাদের মৌলভীরা এ ব্যাপারে প্রায় নিশ্চুপ। কিন্তু দেশের সংস্কৃতির অংশ ভাস্কর্য ভাঙ্গা বা অপসারণ নিয়ে বেশ সরব। খুব সম্প্রতি তারা সুপ্রিমকোটের ভাস্কর্য ভাঙাসহ আবহমান বাংলার সংস্কৃতিকে ধ্বংস করতে বেশ হইচই শুরু করেছে। তারা চাইছেন, ধর্মকে তাদের মতো করে ইসলাম ধর্মকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চরিত্রের ভিত্তি করতে। সেই লক্ষ্যে তারা এগিয়ে যাচ্ছে। হেফাজতের দাবি ও চাপের মুখে এখন স্কুলের কোমলমতি শিশুদের পাঠ্যপুস্তকেও রবীন্দ্রনাথ, নজরুলসহ প্রগতিশীল লেখকদের লেখা বাদ দিয়ে ও পাঠ্যবইয়ে বিতর্কিত সংশোধনÑ শিল্প-সংস্কৃতির জন্য অশনি সংকেত ছাড়া কী?
বিশেষত হিন্দুধর্মের নাম-গন্ধ ঝেঁটিয়ে দূর করার কাজটি তারা সম্পন্ন করছে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা সনদের স্বীকৃতি বিষয়ে সরকারের অবস্থান শক্ত করেছে। হেফাজত ইসলামী বলছে, পহেলা বৈশাখ উদযাপন মুসলিম সংস্কৃতির সঙ্গে মিলে না। এরা ধর্মনিরপেক্ষ অনুষ্ঠানগুলোর ওপর আক্রমণ করছে। জাতীয় সঙ্গীতকে প্রতিনিয়ত অস্বীকার করে চলছে। এদের সঙ্গে পুঁজিবাদীদের আদর্শগত দ্বন্দ্ব নেই। জামায়াতে ইসলামীও অনেকদিন ধরে দেশে ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের দাবি করে আসছে।
অসাম্প্রদায়িক মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তার এই সংগঠনটির শাসনামলের কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে, তাদের কাছে এ দলটি অসহায়। হাইব্রিড নয়Ñ এমন কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও শুভাকাক্সক্ষীর সঙ্গে আলাপে জানা যায়, তারাও মনে করেন ঐতিহ্যেবাহী এই দলটিকে হেফাজত গিলে ফেলছে। দলটির সাম্প্রতিক কর্মকা-ে তারা ভীষণ বিরক্ত। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে মাথায় রেখে হেফাজত ইসলামসহ ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক রাখতে চায় সরকার। বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য তাই বলছে। অবশ্য সরকারের কৌশলগত অবস্থানকে ক্ষতিকর মনে করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বেশিরভাগ শরিক। তারা মনে করে, ধর্মীয় এই গোষ্ঠীর ভোট কখনোই আওয়ামী লীগের বাক্সে যাবে না। ২০০৬ সালের নির্বাচন প্রাক্কালে খেলাফত মজলিসের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ। যদিও পরবর্তীতে সেই চুক্তি থেকে পিছু হটেছিল আওয়ামী লীগ। অনেকেই বলে থাকেন, বিএনপি জামায়াত-শিবির তথা ইসলামি দলগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই অভিযোগ কি অসত্য? এখন প্রশ্ন হলো, ওই জায়গাটা কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিয়ে ফেলছে? প্রধানমন্ত্রী হেফাজতের ১৩ দফার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলেছিলেন, দেশ চলবে মদিনা সনদে। পাকিস্তানেও ঠিক একইভাবে ধর্মের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। তবে কি আমরাও এখন সেই পথে হাঁটছি?
লেখক: কলামিস্ট
সম্পাদনা: আশিক রহমান