মতামত, বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীদের সহায়ক সরকার হলো ভয়মুক্ত ভোট
শাহানুজ্জামান টিটু : বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে তবে দলটির নেতারা বলছেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ও নির্বাচনের পরিবেশ থাকতে হবে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবীরাও দলটির এই বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন। তাদের মতে এটা কেবল বিএনপির বিষয় নয় একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধান অনিবার্য বিষয় হলো একটি দল নিরপেক্ষ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সকল দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক একটি নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণ তাদের পছন্দের প্রার্থীকে বিনা বাধায়, ভয়ভীতি মুক্ত থেকে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারবে।
এছাড়া ভোটের আগে ও পরে দেশের সর্বত্রই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা বিরাজ করবে। এর বাইরে দ্বিতীয় যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে রয়েছে নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া এবং নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রভাবমুক্ত হয়ে বা কোনো সরকার বা দলের দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে কাজ করার পরিবেশ করা দরকার। সেক্ষেত্রে অবশ্যই নির্বাচনকালীন এমন একটা সরকার থাকা দরকার যাদের কাজ হবে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা এবং সরকারের রুটিন কাজ করা এর বাইরে অন্য কোনো ধরনের কাজ তারা করতে পারবেন না। কারণ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কেমন হয় তার নমুনা তো বিগত জাতীয় নির্বাচন ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আমরা দেখেছি।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদের মতে আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক। পাশাপাশি নির্বাচনের জন্য যে প্রস্তুতি সেটা রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের সেটা থাকবে। আবার আন্দোলনের প্রস্তুতিও থাকবে। নির্বাচন কখন হবে, কোন পরিস্থিতিতে হবে, আগে সেটা ঠিক হতে হবে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হতে হবে। প্রার্থীরা যেন ভোট প্রার্থনা করতে পারেন, ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন, বিএনপি যেন ঘরে-বাইরে সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করতে পারে, সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোকে অবশ্যই সমান সুযোগ করে দিতে হবে। এক পক্ষ অবাধে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালাবে আর অপরপক্ষের কোনো সুযোগ থাকবে না তাহলে তো হবে না। এজন্য আমরা বলবো এমন একটা নির্বাচনি পরিবেশ হওয়া দরকার যেখানে ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের মতামত দিতে পারবে। অন্যদিকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলো ও তাদের মনোনীত প্রার্থীরা অবাধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবে। প্রবীণ এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বলেন, আমরা যারা বিএনপির আশপাশে রয়েছি শুধু যে আমরা একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলছি তা নয়। সকলেই চাচ্ছে আগামী নির্বাচনটা যেন স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হয়। আর সেটা হওয়া জরুরি।
অপরদিকে বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সদরুল আমীন বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ হিসেবে প্রথমত আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। জনগণ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, ভয়ভীতি না থাকে, সরকারের কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে কেউ প্রভাবিত না করে এটা আমরা চাই। যে কোনো সরকারই হোক না কেন এই ধরনের নির্বাচনি পরিবেশ আমরা চাইবো। গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষা করার জন্য স্বাধীনভাবে ভোট হোক এটা আমরা চাইবো। সুষ্ঠু পরিবেশে ভোটাধিকার থাকবে, কোনো বাধা থাকবে না, কোনো বল প্রয়োগ করা হবে নাÑ এটা সবারই কাম্য। এটা কেবল বিএনপির বিষয় না দেশের সব দল এটাই চাইবে। দেশে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকুক। দেশে সুষ্ঠু একটা রাজনৈতিক অবস্থা বিরাজ করুক। এটা প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল চায়। না যদি কেউ মনে করে আমরা এককভাবে ক্ষমতায় থাকবো, যাচ্ছে তাই করবো সেটা যেকোনো সরকার হোক না কেন একটা খারাপ দৃষ্টান্ত হবে। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত