উত্তরা ব্যাংক কার্যত জিম্মি একজন সিবিএ নেতার হাতে
জাফর আহমদ : উত্তরা ব্যাংকের পদোন্নতি, নিয়োগ, বদলি, যে কোনো ধরনের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত কর্মকর্তারা নেয়ার আগে একজন সিবিএ কর্মকর্তার নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করেন। কোনো কোনো সময় বড় ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রেও তার সুপারিশের প্রয়োজন হয়। এটি উত্তরা ব্যাংকের ওপেন সিক্রেট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন কর্মকর্তা বলেন, চাকরি ও পিঠ দুটিই বাঁচাতে হয়। তাই ওই কর্মকর্তার কথাতেই চলি। উত্তরা ব্যাংকের সিবিএ সভাপতি কামাল হোসেন, জানিয়েছেন, ট্রেড ইউনিয়নের নামে কর্মস্থলে অনুপস্থিত, কর্মচারী কর্মকর্তাদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সাধারণ কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রেখেছে উত্তরা ব্যাংকের বিএনপি সমর্থিত সিবিএ নেতা জামাল আহমেদ। ব্যাংকের প্রশাসন ও তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছে না। ফলে একদিকে ব্যাংকটির কর্মী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে; অন্যদিকে ব্যাংকের সিবিএ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় তার পরেও কীভাবে বিএনপি সমর্থিত সিবিএ নেতা এমন কর্মকা- চালায় এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো, সম্প্রতি এই কর্মকর্তা বিএনপি সমর্থিত জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল ছেড়ে শ্রমিক লীগে যোগদানের চেষ্টা করছেন। এরজন্য তিনি আওয়ামী লীগের কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন । তারা বিষয়টি জানিয়ে জালাল আহম্মদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়েও একটি আবেদন পাঠিয়েছেন। সেখানে জালাল আহম্মদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় করা ১০টি মামলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, মতিঝিল এলাকায় গাড়িতে অগ্নি সংযোগ, ভাঙচুর ও সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের মামলা।
উত্তরা ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও স্থানীয় শাখা সূত্র জানায়, বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকটিতে দুটি সিবিএ স্গংঠন কার্যকর আছে। একটি বাংলাদেশ শ্রমিক লীগ সমর্থিত, অপরটি হলো জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদল সমর্থিত। জালাল আহমেদ বিএনপির শ্রমিকদল সমর্থিত সিবিএ সভাপতি ও উত্তরা ব্যাংকের স্থানীয় শাখার একজন কর্মকর্তা। এবং জাতীয়তাবাদী শ্রমিকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক। সূত্র জানায়, ব্যাংকের আধিপত্য বিস্তার করার জন্য বাইরের সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় শ্রমিক লীগ সমর্থিত উত্তরা ব্যাংকের এ্রমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের নেতাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা করে আহত করেছে এবং সিবিএ কর্মকা- থেকে বিরত থাকতে হুমকি দেয়। জালালের সন্ত্রাসী কর্মকা-ের প্রতিবাদ করাতে এবং শ্রমিক লীগের কর্মকা- ব্যাহত করতে শ্রমিক লীগ নেতাদের হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে আহত করেছে।
এ ব্যাপারে ব্যাংকের এ্রমপ্লয়ীজ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ইমরান হক খান বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেও উত্তরা ব্যাংকে বিএনপি সমর্থিত সিবিএ নেতা জালালের ত্রাসের কারণে শ্রমিক লীগের কর্মকা- পরিচালনা করা কঠিন হয়। কর্মকর্তাসহ শ্রমিক লীগের কয়েকজন কর্মীকে আহত করেছে। তার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে পুলিশ গ্রেফতার করলেও অদৃশ্য শক্তির ইশারায় মুক্তি পায়। তার বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় ৮টি, ভাষানটেক থানায় একটি ও রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে একটিসহ মোট দশটি মামলাও রয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাইলে জালাল আহেমদ ফোনে বলেন, ঘটনাটি সত্য নয়। প্রতিপক্ষ হিসাবে তারা আমার বিরুদ্ধে নানা প্রকার প্রচারণা চালাচ্ছে। জালালের কর্মস্থল উত্তরা ব্যাংকের স্থানীয় শাখায় অনুসন্ধান করলে তার সহকর্মীরা ভয়ে মুখ খুলতে চাননি। তবে নাম না প্রকাশের শর্তে এ প্রতিবেদককে একাধিক কর্মকর্তা জানান, জালাল আহমেদ সব সময় ব্যাংকের বাইরে অবস্থান করে। দুই/তিন সপ্তাহ পর পর অফিসে এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন এবং সময় মত বেতন তুলে নিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে উত্তরা ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, শ্র্রম আইনে সিবিএ নেতাদের অফিসে কাজ না করার ব্যাপারে উল্লেখ থাকার কারণে সে কাজ করে না, আমরাও এ ব্যাপারে চাপ দেইনা। তবে প্রতিবেদনে ওই কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করতে চাইলে তিনি নাম না প্রকাশের অনুরোধ করেন। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত