অপেক্ষা এখন প্রধানমন্ত্রীর কারিশমা দেখার
রবিউল আলম
ধর্ম মানুষের আত্মাকে শান্তি দেয়। ধর্মকে কিছু মানুষ রাজনৈতিক কারণে, ক্ষমতার জন্য অসত্য তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে পরিচালিত করে, সস্তা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য, ধর্মীয় দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসা যায়। কিন্তু বাস্তবায়ন করা যায় না। যারা ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেন, তারা সবসময় এক গিয়ারে চলেন। কারণ তারা রাষ্ট্র পরিচালনা করেন, রাষ্ট্রকে ধর্মের বাণী শোনান, উপদেশ দেন। যারা বলেন তারা নিজেরাও জানেন, রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পেলে শুধু ধর্ম পালন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যাবে না, রাষ্ট্র পরিচালনা করতে, রাষ্ট্রকে রক্ষা অনেক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। এমনকি বিদেশি মেহমানদেরও মদসহ দিয়ে আপ্যায়ন করতে হবে। যদিও ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম এমন খাদ্য ও পানীয়ই পরিবেশন করতে হবে। যে কারণে ধর্ম আর রাষ্ট্র এক কাতারে আনা যায় না। আবার রাষ্ট্রকে দিয়ে ধর্মকে অস্বীকার করাও যাবে না। ধর্মকে ধর্মের জায়গায় রেখে তা কীভাবে যথাযথ ও সম্মানের সঙ্গে পালনের ব্যবস্থা করা যায় এ বিষয়ে আল্লামা শফীর সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনা করেছেন। এই আলোচনা প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব, ধর্ম ও রাষ্ট্রের অংশ যা ইচ্ছে করলেই বাদ দেওয়া যাবে না। আল্লামা শফীর সঙ্গে আলোচনা করলে যদি দেশে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করে তাহলে এই আলোচনা হতেই পারে। হেফাজতে ইসলাম ৫ মে ২০১৩ সালে মতিঝিলে যে তা-ব বা শক্তি প্রদর্শন করেছিল আল্লামা শফীকে সামনে রেখে তা সরকার প্রতিরোধ করতে সমর্থ হয়েছিল। সেদিনের সেই হেফাজতকে কৌশল দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হয়েছিল।
শেখ হাসিনা আলোচনা করতে পারেন, হেফাজতকে সুযোগ করে দিতে হবে তাদের মতপ্রকাশের জন্য, নিজেদের মতবাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় যাওয়া যাবে যোগ্যতা অর্জন করার জন্য। হেফাজতকে রাষ্ট্রবিরোধী, ইসলামবিরোধী, বিদেশি দালালদের নিকট থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, এই বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী আলোচনা করে ভুল করেননি। সামনে আশা থাকলে, ভরসা থাকলে, নির্ভরতার জায়গা থাকলে কেউ বিপথে যায় না। কথা না বলতে অনেকসময় হিতে বিপরীত হয়। অর্থ্যাৎ মানুষকে বলতে দিতে হবে। সে বিপথে মানুষ হলে কথা বলে, আলোচনা করে, বুঝিয়ে সুঝিয়ে সুপথে নিয়ে আসতে হবে। প্রধানমন্ত্রী সেই জায়গাটায় কাজ করছেন বলে মনে হয়। হেফাজতকে মূল ধারায় ফিরিয়ে আনার জন্য যা করণীয় তাই করতে হবে। তারা যেন ভুল পথে না যায়, যদি গিয়ে থাকে সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। আর সেই দায়িত্বই পালন করেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী।
মতিঝিলে আগুন দেওয়ার ক্ষমতা যে হেফাজতের নেই এবং ছিল না একথা হেফাজতকে সুযোগ না দিলে বোঝানো যাবে না। কারা সেদিন চিড়া মুড়ির নামে বোমা নিয়ে এসেছিল, কারা পানির পাত্রে পেট্রোল নিয়ে এসেছিল, তা বোঝানোর জন্য আলোচনার সুযোগ দিতেই হবে। আজ চিড়া মুড়িওয়ালাদের আসল রূপ বেরিয়ে আসছে, হেফাজতকে ব্যবহার করতে পারলে এবং হেফাজত ব্যবহার হলে ঠিক আছে, চিড়া ও মুড়ি আছে আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পথ দেখালে সব এলোমেলো হয়ে গেল। ভয়ের কিছুই নেই, হেফাজত স্বাধীনভাবে তাদের মতামত নিয়ে জনগণের কাছে যাবে, জনগণ গ্রহণ করলে আমাদের আপত্তি কোথায়, আপত্তি শুধু অন্যের দালালি করায়।
আমরা আপত্তি করতে পারতাম, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা যদি দলীয় অফিসে অথবা ১৪ দলীয় জোটের কোনো জনসভায় হেফাজতকে আমন্ত্রণ করতেন। আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ ঐক্যের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদ নিয়ে জনগণের কাছে আছে ও থাকবে। ভিন্নমতের বিশ্বাসীদেরও গ্রহণ করতে হবে। না হলে রাজনীতির প্রয়োজন কোথায়? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে হবে, পার্থক্য দেখতে হবে। আওয়ামী লীগ এবং হেফাজতকে এক করে মিলিয়ে দেখার অবকাশ নেই। যারা জাতির জনকের কন্যা শেখের বেটি শেখ হাসিনাকে উপদেশ দিচ্ছেন, তাদের হতাশ না হয়ে অপেক্ষা করার অনুরোধ করছি।
শেখ হাসিনা সেই শিক্ষা হেফাজতকে দিয়েছে। আর আওয়ামী লীগের আউল, বাউল, নজরুল, রবীন্দ্রনাথ লালন, বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আছে, থাকবে। আমরা বঙ্গবন্ধুকে জানি। তার দেশপ্রেম জানি। তারই কন্যা শেখ হাসিনাকেও কি আমরা জানি না? জানি। অপেক্ষা এখন শেখ হাসিনার কারিশমা দেখার।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতি
সম্পাদনা: আশিক রহমান