প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী কেউ কারো সম্পর্কে বলতে আর রাজি নন
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : প্রধান বিচারপতি ও আইনমন্ত্রী দুজনই একে অপরের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একে অপরের ব্যাপারে মন্তব্য করবেন না। একইদিনে তারা এই ঘোষণা দিয়েছেন। আইনমন্ত্রীর কাছে প্রধান বিচারপতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি আর এই বিষয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না বলে জানান। আর প্রধান বিচারপতিও জয়পুরহাটে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কিছু স্বার্নান্বেষী সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ভুল রিপোর্ট দিয়ে বিচার বিভাগের ক্ষতি করেছে ও সরকারকে বিপথগামী করেছে। যে কারণে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা যাচ্ছে না। আর এতে রাষ্ট্রের ও জনগণের ক্ষতি হচ্ছে। আগে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সিদ্ধান্ত সময়মতো বাস্তবায়িত হতো। এখন হয় না। কারণ প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হচ্ছে। আমি এর বেশি কিছু বলতে চাই না। বললে তারা বিব্রত হবেন। আমি সরকার বা মন্ত্রীর সাথে বাহাস করতে চাই না। এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আমার কথা হচ্ছে যে, মাননীয় প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য রেখেছেন আমি সেই সম্পর্কে কোনো কথাই বলব না। যেসব বক্তব্য উনি দিয়েছেন সেটার ব্যাপারে আপনারা (গণমাধ্যম) সেটা বিচার করবেন, দেখবেন। আমার যদি কিছু বলতে হয়, তাহলে মাননীয় প্রধান বিচারপতির সামনে গিয়েই আমি বলব।
প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে অনেকদিন ধরেই কথা বলেছেন। বিচার বিভাগে যেসব সমস্যা রয়েছে ওইসব সমস্যা সমাধানের জন্যও বারবার তাগিদ দিয়েছেন। কিন্তু সেভাবে হচ্ছে না। এই কারণে প্রায়শ সমস্যাও হচেছ। নি¤œ আদালতের বিচারকদের চাকরিবিধি ও শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করে তা গেজেট আকারে প্রকাশ করার জন্য বারবার তাগিদ দিয়েছেন। সরকার এখনো পর্যন্ত তা করেনি। এই প্রধানবিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ বারবার সময় দিয়েছে। এর মধ্যে শেষবারও সময় দেওয়া হয়েছে তারপরও তা এখনো করা হয়নি। এই বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেলকে সমস্যার কথাটিও বলেছেন।
সূত্র জানায়, প্রধান বিচারপতি এই বিষয়টি কেন প্রণয়ন করা জরুরি এই বিষয়েও কথা বলেছেন। তবে সরকার কি কারণে এটা করছেন না বারবার সময় নিচ্ছেন তা স্পষ্ট নয়। এর আগে রাষ্ট্রপতির কথা বলে সময় নিয়েছেন। এখনো করব করা হচ্ছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল রাষ্ট্রপক্ষে সময় নিচ্ছেন।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্ট ও ওই এলাকার প্রশাসনিক বিষয়েরও প্রধান প্রধান বিচারপতি। সেই হিসাবে তিনি সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে ন্যায়বিচারের প্রতীক একটি ভাস্কর্য স্থাপন করানোর অনুমতি দেন। সেই হিসাবে গ্রিক ভাস্কর্যে কিছু পরিবর্তন আনা হয়। সেটি স্থাপন করানো হয়। স্থাপনের সময়ে ও পরে কোনো সমস্যা না হলেও হঠাৎ করেই হেফাজত ও আলেমরা এর বিরোধিতা করে। তারা কর্মসূচিও ডেকেছে।
নিম্ন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা নিয়ে সরকার বারবার সময় আবেদন করছে। এই সময় নেওয়ার বিষয়টি উচ্চ আদালতও ভালোভাবে নিচ্ছে না। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, প্রশাসন কোনোদিনই চায়নি এখনো চায় না বিচার বিভাগ স্বাধীনভাবে কাজ করুক। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক পাল্টা বলেছেন, অন্য কোনো দেশে প্রধান বিচারপতিরা প্রকাশ্যে এত কথা এত উষ্মা প্রকাশ করেন না। প্রধান বিচারপতির যদি কোনো দুঃখ থাকে তাহলে আমাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন।
প্রধান বিচারপতি উন্নত বিশ্বের বিচার বিভাগের মতো স্বাধীনতা ও অন্যান্য বিষয়গুলো নিশ্চিত করার কথা সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সরকার শিগগিরই এখানে উন্নত দেশের মতো বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করণসহ অন্যান্য সব বিষয়ে উদ্রোগ নিচ্ছেন কিনা এই ব্যাপারে জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, উন্নত দেশের মতো সব ব্যবস্থা এখনই নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। তবে প্রযোজন যতখানি ও যা যা দরকার সবইতো আমরা করছি। আরও করা হবে।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে উন্নত বিশ্বের মতো অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে। আরও যেগুলো প্রয়োজন তাও যতখানি সম্ভব তাও সময় ও প্রয়োজন বিবেচনা করে করা হবে।
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, আমরা বিচারকদের আচরণ ও শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন করছি। সময়মতো হয়ে যাবে। আর বিচার বিভাগের উপর সরকার কোনো প্রভাব খাটাচ্ছে না। হস্তক্ষেপও করছে না। তারপরও আমি মনে করি সমস্যা থাকলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা করেই তা সমাধান হবে। এই ব্যাপারে সরকার থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদেরকে প্রধান বিচারপতি জানান, সমস্যাগুলো কি কি? আর তিনি কি কি সমস্যা বোধ করছেন। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে। সমাধান করার মতো হলে তাও করা হবে। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত