প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা : আইনমন্ত্রী আগের অভিযোগ তদন্ত হলে পুনরায় অর্থ পাচার হতো না
জাফর আহমদ : পানামা পেপার্স ক্যালেঙ্কারি ও সুইস ব্যাংকে রাখাসহ বিভিন্ন সময়ে টাকা পাচারের অভিযোগ তদন্ত হলে দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হতো না বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কারও বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে ওভারইন ভয়েজিং ও আন্ডারইন ভয়েজিংয়ের মাধ্যমে সাড়ে চার লাখ কোটি টাকা পাচার হয়েছে, আমেরিকা ভিত্তিক জিএফআই এর প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় তারা এ মন্তব্য করেছেন। জিএফআই এর প্রতিবেদন অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে যারা টাকা পাচার করেছে তারা ব্যবসায়ী ও প্রভাবশালী। এসব প্রভাবশালী লোককে আইনের আওতায় আনতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, প্রতিবছর এ ধরনের অভিযোগ শুনতে শুনতে বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে আমরা অভ্যস্ত প্রায় হয়ে গেছি। কিন্তু বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক। এর জন্য যে দেশে টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং যে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছেÑ দুদেশের আইনগত কাঠামোর দুর্বলতা ও এ ব্যাপারে প্রতিরোধ প্রয়োজন রয়েছে।
এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, দেশে একটি অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন আছে। ওই জিএফআই প্রতিবেদনের তথ্য যদি সত্য হয় তাহলে আইন অনুযায়ী নিশ্চয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সংবাদ ব্রিফিংকালে মন্ত্রী এ কথা বলেন। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী আব্দুল মান্নান সচিবালয়ে বলেছেন, অর্থপাচারের এ ঘটনা রোধে দেশে এন্টি মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট আছে। এই রিপোর্টের সত্যতা পাওয়ার পরে তার মধ্যে যদি এ আইনে কোনো অপরাধ পাওয়া যায় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জিএফআই-এর প্রতিবেদন অনেকটা অনুমান নির্ভর বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সুভঙ্কর সাহা। তবে এ ধরনের অভিযোগ আগে ছিল, এখনো আছে। এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট পয়েন্টগুলোতে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। কিছু অনিয়মও চিহ্নিত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নিয়েছি। পাশাপাশি পণ্য আমদানি রপ্তানির সাথে সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক ব্যাংকও ঋণপত্র (এলসি) খোলার সময় সতর্ক হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তারা ঋণপত্র বাতিলও করেছে। তবে আন-কমন ও নতুন পণ্য আমদানির কারণে এ সব পণ্যের দাম সম্পর্কে জানা কঠিন হয়।
এ ব্যাপারে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যারা টাকা পাচার করে তারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে নয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, দুদক ও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় সমন্বিতভাবে এসব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামলে পাচার রোধ সম্ভব হবে।
পাচারকারীদের কারণে দেশের উন্নয়নের সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে না বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। দেশের সম্পদ কাজে লাগানো হচ্ছে, দেশে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু এর সুফল বিদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এসব অর্থ দেশে থাকলে দেশের সম্পদকে আরও বেশি দ্রুত উন্নয়ন সম্ভব।
এসব অর্থপাচার রোধে অর্থব্যবস্থা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দক্ষতা এবং কর্মতৎপতার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক এই গভর্নর। তিনি বলেন, পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি ও সুইস ব্যাংকের টাকা গচ্ছিত রাখা নিয়ে ভারতে যেমন হৈ চৈ ও তদন্তের ব্যাপারে কথা হয়েছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সে সময় পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারি ও সুইস ব্যাংকে যারা টাকা রেখেছে তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান হলে দেশ থেকে টাকা পাচার রোধ হতো। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন