ভিক্ষাবৃত্তি : নিকৃষ্ট পন্থা
সাইদুর রহমান
ইসলাম মানুষকে উপার্জনের প্রতি আহ্বান করে। হাদীসে হালাল উপার্জনকে ফরয কাজের মধ্যে শামিল করা হয়েছে। সূরা জুমাআ‘য় আল্লাহ বলেন : আর যখন নামায সম্পন্ন হয় তখন তোমরা যমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো। এখানে অনুগ্রহ বলতে মুফাস্সিরিনে কেরাম রিযিক তথা উপার্জনকে বুঝিয়েছেন। সুতরাং উপার্জন করা আল্লাহর নির্দেশ। ভিক্ষাবৃত্তি ইসলাম নিরুৎসাহ করে। সবল সক্ষম ব্যক্তির উচিত র্কম করে উপার্জন করা। এটি নিচু কাজ। লাঞ্চনার পথ। যিল্লতির পথ। মানুষের কাছে হাত পাতা প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ। হাদিসে ভিক্ষাবৃত্তি সর্ম্পকে কঠিন সর্তকবাণী বর্ণিত হয়েছে।
হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে, নিশ্চয়ই সে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ভিক্ষা করে। সুতরাং তাকে বলে দাও সে কম-বেশি যা ইচ্ছা তাই ভিক্ষা করুক। রাসূল সা: আরোও বলেছেন, ভিক্ষুক আল্লাহর রহমত হতে বঞ্চিত। আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসূল (সা.) বলেছেন, যে মানুষ মানুষের কাছে ভিক্ষা করে, সে এমন অবস্থায় বিচারের দিন উপস্থিত হবে যে তার মুখে কোন মাংসই থাকবে না। ভিক্ষা বিষয়ে সবচেয়ে শিক্ষণীয় ঘটনা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সেটা প্রত্যেকের জন্য শিক্ষণীয়। এক ব্যক্তি তাঁর কাছে ভিক্ষা চাইতে এলে তিনি তাকে বললেন তোমার কাছে কী আছে ? ঐ সাহাবী বললেন কিছুই নেই। তবে একটি কম্বল আছে। নবী (সা.) বললেন সেটা নিয়ে আস। তখন রাসূল (সা.) সেটা বিক্রি করে একটি কুদাল কিনে দিলেন। এবং বললেন এটা দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে উর্পাজন করে খাও। ভিক্ষাবৃত্তি করো না। তাকে কাজ করে খেতে উপদেশ দেন। তিনি তার কম্বল বিক্রি করে সে অর্থের অর্ধেক দিয়ে সে দিনের খাবার ও বাকি অর্ধেকে কুঠার কিনে দিয়ে কাঠ কেটে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।
তবে তিনটি অপারগ অবস্থায় ভিক্ষা করা বৈধ। (ক) রাসূল (সা.) বলেছেন, তিনটি কারণে ভিক্ষা করা যেতে পারে। এ তিনটি কারণ ব্যতীত ভিক্ষা করা হারাম। কাবিসা বিন মাখরেক (রা.) বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন, ওহে কাবিসা, নিশ্চয়ই ভিক্ষা করা তিনটি কারণ ব্যতীত হালাল নয়। (ক) যদি কোন ব্যক্তি ঋণের জামিন হয় এবং ঋণ গ্রহীতা ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয় তবে সে ঋণ পরিশোধ করার জন্য ভিক্ষা করা হালাল যে পর্যন্ত না জামিনের পরিমাণ অর্থ পাওয়া যায়। তার পরই সে ভিক্ষা হতে নিবৃত্ত হবে। (খ) যদি আকস্মিক দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তির সম্পদ ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে জীবিকা না পাওয়া পর্যন্ত অথবা (রাসূল সা.) বলেছেন, জীবিকার অবলম্বন না পাওয়া পর্যন্ত ভিক্ষা করা হালাল।
(গ) যদি কোন ব্যক্তি কল্পনাতীত অভাবে পতিত হয় যে পর্যন্ত না তার সমাজ থেকে তিনজন সুবিবেচক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, এ ব্যক্তি এরূপ অবিশ্বাস্য দারিদ্র্যে নিপতিত। (যে দারিদ্রে ভিক্ষা ছাড়া জীবিকার উপায় নেই) সে ভিক্ষা করতে পারে। এ অবস্থায় ভিক্ষা করা হালাল যে পর্যন্ত না সে জীবিকার সন্ধান করতে পারে। এবং স্বনির্ভর হয়। অতএব প্রত্যেক সক্ষম ব্যক্তি কর্ম করে উর্পাজন করা আবশ্যক।