মহীয়সী নারী রাবিয়া বসরি (রা.)
মাহফুয আহমদ
এক. ইসলামি ইতিহাসে রাবিয়া বসরি একটি সুপরিচিত নাম। রাবিয়া বিনতে ইসমাঈল বসরি। এই মহীয়সী নারী বসরায় ১০০ হিজরিতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতামাতার চতুর্থ সন্তান হিসেবে তাঁকে ‘রাবিয়া’ বলে ডাকা হতো। তাঁর বয়স দশ বৎসর পূর্ণ হওয়ার আগেই বাবা ইন্তিকাল করেন। কিছুদিন পর তাঁর মাও পরলোক গমন করেন। তিনি অত্যন্ত দ্বীনদার ও ইবাদাতগুজার মহিলা ছিলেন। তাঁর সততা, স্বচ্ছতা, পবিত্রতা, তাকওয়া, তাহারাত ও ইবাদাত তখনকার সময়ে খুবই প্রসিদ্ধ, প্রশংসিত ও আলোচিত ছিল। তাঁর মুখনিঃসৃত অনেক হেকমত ও প্রজ্ঞাপূর্ণ বাণী সে সময়ের উলামায়ে কেরাম সংরক্ষণ করে পরবর্তীদের নিকট পৌঁছিয়েছেন। বসরার গভর্নর আবু সুলাইমান আল হাশিমি এক লক্ষ দিরহাম মহরের ভিত্তিতে তাঁর কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে তিনি প্রত্যাখ্যান করেন এবং গভর্নরকে নসিহত করে একটি নাতিদীর্ঘ মূল্যবান চিঠি লিখে পাঠান। ইতিহাস গ্রন্থাদিতে ওই চিঠি সবিস্তারে উল্লিখিত হয়েছে।
হাফিজ ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, অধিকাংশ লোক তাঁর প্রশংসা করেছেন। তবে আবু দাউদ সিজিসতানি তাঁর সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছেন। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; ইবনে কাসির, পৃ. ১৫৫০, বাইতুল আফকার আদ দাওলিয়্যাহ) আল্লামা শামসুদ্দিন যাহাবি রাহ. বলেন, ইমাম সুফয়ান সাওরি ও ইমাম শু’বা প্রমুখ তাঁর নিকট থেকে যা কিছু বর্ণনা করেছেন সেসব তাঁর সম্পর্কে কৃত বিরূপ মন্তব্যগুলোর বাতুলতা প্রমাণ করছে। (সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; যাহাবি, ৮/২৪২, মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত, ২য় সংস্করণ ১৪২০হি./১৯৮২ঈ.) এবং তাঁর দিকে সম্পৃক্ত একটি শ্লোকের ভিত্তিতে যারা তাঁর সমালোচনা করতে চাচ্ছেন যাহাবি রাহ. তাদের এমন কাজকে বাড়াবাড়ি ও মূর্খতা বলে আখ্যায়িত করেছেন। (প্রাগুক্ত, ৮/২৪৩)
তাঁর মৃত্যু সনের ব্যাপারে ঐতিহাসিকদের মতবিরোধ রয়েছে। ইবনুল জাওযি, ইবনে খাল্লিকান প্রমুখের মতে ১৩৫ হিজরিতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। হাফিয যাহাবির মতে ১৮০ হিজরি আর ইবনে কাসির প্রমুখের মতে ১৮৫ হিজরিতে তিনি ইন্তিকাল করেন।
দুই. হাসান বসরি (রাহ.) এর সঙ্গে রাবিয়া বসরির বিয়ে প্রমাণিত নয়। হাসান বসরি তো ১১০ হিজরিতে ইন্তিকাল করেন আর রাবিয়া বসরি জন্ম গ্রহণ করেন ১০০ হিজরিতে। সুতরাং এই বয়সে বিবাহ হওয়াটা স্বাভাবিক নয় এবং ঐতিহাসিকভাবে তা প্রমাণিতও নয়। বস্তুত রাবিয়া বসরি কখনও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি। কোনো কোনো কিতাবে আহমাদ ইবনে আবুল হাওয়ারি নামে রাবিয়ার স্বামী বলে যে তথ্য পাওয়া যায় তা রাবিয়া বিনতে ইসমাঈল বসরি’র কথা নয়, সেটা রাবিয়া বিনতে ইসমাঈল শামিয়া’র কথা। এখানে বিভ্রান্ত হওয়ার অবকাশ নেই। ঐতিহাসিকগণ স্পষ্টভাষায় এই পার্থক্য তুলে ধরেছেন। তিন. আমাদের কোনো কোনো ভাই সন্দেহ করেন যে, রাবিয়া বসরি নামে বাস্তবেই কি কোনো নারী ইসলামি ইতিহাসে অতিক্রম করেছেন? না এটা কোনো কাল্পনিক কাহিনীমাত্র?! ওই বন্ধুদের এমন সন্দেহ করা যথার্থ নয়। কারণ নির্ভরযোগ্য মুসলিম ঐতিহাসিকগণ বিশদভাবে তাঁর জীবনালোচনা করেছেন, প্রশংসা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি নির্ভরযোগ্য আরবি ইতিহাসগ্রন্থের নাম দেয়া হলো: ১. আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া; ইবনে কাসির (মৃ. ৭৭৪হি.), পৃ. ১৫৫০, বাইতুল আফকার আদ দাওলিয়্যাহ ২. সিয়ারু আ’লামিন নুবালা; যাহাবি(৭৪৮হি.), ৮/২৪১-২৪৩,মুআসসাসাতুর রিসালা, বৈরুত, ২য় সংস্করণ ১৪২০হি./১৯৮২ঈ. ৩. ওফায়াতুল আ’য়ান; ইবনে খাল্লিকান (মৃ. ৬৮১হি.),২/২৮৫-২৮৮, দারুর সাদির, বৈরুত, ১৩৯৮হি./১৯৭৮ঈ.