সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ মুক্তিযোদ্ধার কন্যা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার
নিজস্ব প্রতিবেদক : গাজীপুরের মৃদুল ও তার সহযোগীদের খপ্পরে পড়ে প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধার মেয়ে দলবদ্ধধর্ষণের শিকার হয়েছে। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ঘটনায় জড়িতরা প্রভাবশালী হওয়ায় থানা পুলিশও তাদের পক্ষ নিয়েছে। আসামিরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভয়ে পুরো পরিবারটি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলবদ্ধধর্ষণের শিকার ওই তরুণী এসব অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ৮ মাস আগে একটি অনুষ্ঠানে আমাদের সাথে মৃদুলের পরিচয় হয়। পরিচয়সূত্রে তার সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। এক ব্যক্তির কাছে আমরা বেশ কিছু টাকা পেতাম, কিন্তু টাকাগুলো আদায় করতে পারছিলাম না। মৃদুল জানায় তাকে আর তার লিডার রকিব সরকারকে কিছু টাকা দিলে তারা পুরো টাকাটা আদায় করে দিতে পারবে। এতে রাজি হয়ে আমরা তাদের ১১ লাখ টাকা প্রদান করি।
ভুক্তভোগী ওই তরুণী আরো জানায়, গত বছরের ২৫ নভেম্বর মৃদুল আমাকে জোরপূর্বক উঠিয়ে তেলিপাড়ায় সাকিনের বাড়িতে নিয়ে যায় এবং ধর্ষণ করে। আমি গর্ভবতী হয়ে পড়লে বিষয়টি মৃদুলকে জানাই এবং সে বিষয়টি শুনে অস্বীকার করে। আমি দিশেহারা হয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় নেতা রকিব সরকারের বাড়িতে গিয়ে তাকে বিষয়টি জানাই। তখন তিনি মীমাংসা করার আশ্বাস দেন। ওইদিন নাজমুল নামে এক সহযোগী এসে জানায় রকিব সাহেব মীমাংসার জন্য আমাকে ডেকেছেন। বাড়ির বাইরে এসে দেখি একটি গাড়িতে মৃদুল ও তার সহযোগী রনি বসে আছে। তারা জানায় বিয়ে করার জন্য আমাকে কাজী অফিসে নিয়ে যাবে। গাড়িতে উঠার পর মৃদুল, রনি ও নাজমুল আমাকে মারধর এবং গণধর্ষণ করে। আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরলে আলমগীর, পলিন ও দিপুকে দেখতে পাই। এ সময় তারা মোবাইলে রাকিব সরকারের সঙ্গে কথা বলছিল। তারা জিজ্ঞেস করছিল আমাকে জবাই করবে কিনা। রকিব সরকার এমন কিছু না করে আমাকে তার বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। তখন তারা আমাকে রাকিবের বাসায় নিয়ে যায় এবং অসুস্থ অবস্থায় সোফায় শুইয়ে দেয়। পরে রকিব এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে। তখন তারা আমাকে উত্তরার বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় আহত বলে জানায়।
ওই তরুণী আরো বলেন, ২০ ফেব্রুয়ারি রকিব বাদে অন্য আসামিরা আমার বাড়িতে এসে জোরপূর্বক আমাকে তুলে নিয়ে যায় এবং ৩ দিন একটি অজ্ঞাত স্থানে আটকে রাখে। ২৩ ফেব্রুয়ারি মৃদুল একটি স্ট্যাম্প দেখিয়ে জানায় আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে, তবে বিষয়টি এখনই কাউকে না জানাতে। তবে স্ট্যাম্প দেখে আমার বাবা বুঝে যান যে এটা জাল স্ট্যাম্প। তখন থেকেই আসামিরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিতে শুরু করে। জয়দেবপুর থানায় মামলা করতে গেলে আসামিদের নাম শুনে থানার ওসি মামলা না নিয়ে আমাদের বের করে দেন।
পরে বিষয়টি গাজীপুর জেলার পুলিশ সুপার মো. হারুন অর রশীদকে জানালে তিনি মামলা নেয়ার নির্দেশ দেন। তখন ওসি মামলা গ্রহণ করেন। মৃদুলসহ ৮ জনকে আসামি করে মামলা নেয়া হয়, যার তদন্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় এসআই আবুল কাশেমকে। তদন্ত কর্মকর্তা মৃদুলকে গ্রেফতার করলেও বাকি আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো মীমাংসার জন্য আমার পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করছে।
যদিও পুলিশের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীর করা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জয়দেবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, আমরা গুরুত্ব সহকারে তাদের মামলা গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যে মামলার মূল আসামিকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ