বিভক্ত সমাজ, ঐক্য কতদূর?
অনেকবছর আগে উত্তরা ছবিটা দেখেছিলাম। কুস্তিগীর দুই বন্ধুর মধ্যে একটা সংলাপ এখনো আমার কানে বাজেÑ ‘রেল লাইনের মধ্যে খুব কষ্ট। দুজন পাশাপাশি থাকে, অথচ কেউ কাউকে ধরতে পারে না, কেউ কাউকে ছুঁতে পারে না।’ বাংলাদেশরে সমাজ ব্যবস্থায় এটাই বাস্তবতা।
রেল লাইনের একপাশে যদি হুমায়ূন থাকেন অন্য পাশে অবশ্যই কাসেম বিন আবুবাকার। এটা রেল লাইনের মতোই বাস্তব সত্য। একে স্বীকার করেই বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থাকে বির্নিমাণ করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ এই সত্যটা বুঝেছিলেন। তাই তো শেষ জীবনে লিখলেনÑ
‘আমার কবিতা, জানি আমি,
গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সে সর্বত্রগামী’
বাংলা ভাগের জন্য অনেকে জিন্নাহ বা আবেগী বাঙালি মুসলমানকে দায়ী করে থাকেন। কিন্তু আমার মতে, এর চেয়ে বেশি দায়ী এলিট হিন্দুরা। প্রমাণ তফসিলি সম্প্রদায়। নিচু ৭২টি (এলিট হিন্দুদের চোখে) জাত নিয়ে এই তফসিলি সম্প্রদায় গড়ে ওঠে। বাংলার আইন সভায় তাদের শতকরা ২০ ভাগ আসন রাখা হয়। ১৯৩৭ এবং ১৯৪৬-এর নির্বাচনে এরা ভারসাম্য রক্ষাকারী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটায়। হিন্দুদের জাত্যাভিমানে তারা কংগ্রেসকে ভোট না দিয়ে মুসলিম লীগের সঙ্গে জোট করতে আনন্দ অনুভব করত। অসাম্প্রদায়িক ভারত রাষ্ট্রকে বেছে না নিয়ে সাম্প্রদায়িক পাকিস্তানকে তাদের আবাস ভূমি হিসেবে বেছে নিয়েছিল। বাংলার সেই বিভাজনটা ভুল হয়েছিল না ঠিক হয়ে ছিল বন্ধুরা আজ আপনারাই সেটা ভালো বলতে পারবেন।
আজকে বাংলার সমাজও ঠিক দুভাগে বিভক্ত। এক পক্ষ চাঁদে লোক দেখে পতঙ্গের মতো আত্মহুতি দিতে যায়, বাঁশের পানি খেয়ে সর্ব রোগ থেকে মুক্তির আশায় বাঁশের বংশ ধ্বংস করে দেয়, রাত্রে মোবাইলে জিনের বাদশার দেখানো লোভে দিনের বেলায় সর্বস্বান্ত হয়, কখনো শেয়ারবাজারে বা এমএলএম ব্যবসার ফটকা ধোকায় রাজ পথে জুতার তলি ক্ষয় করে। অপর পক্ষ হলো মার্ক, শেয়ারবাজার, ব্যাংক লুটের নব নব পদ্ধতি আবিষ্কার করে।
রেল লাইনের মতো এ দুটো ধারাই সমান্তরালভাবে চলে আসছে। জতীয় ঐক্যের যে ন্যূনতম সুযোগ ছিল তা রাজনীতিবিদরা ব্যবহার করেছেন ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি হিসেবে। বিভিন্ন ধারার শিক্ষা পদ্ধতি চালু রেখে মাঝখানে আরও দূরত্ব তৈরি করেছেন। ফলে সকলের অগোচরে রেল লাইনের মতো দুটো জীবন ধারা প্রবাহিত হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি থাকলেও আমরা কেউ কাউকে চিনি না, কেউ কাউকে বুঝি না।
লেখক: সংগঠক, গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন
সম্পাদনা: আশিক রহমান