কাশ্মীর সীমান্তে ৪ হাজার ভারতীয় সেনার অভিযান
আশিস গুপ্ত, নয়াদিল্লি : কাশ্মীরের সোপিয়ানে বড়সড় সেনা অপারেশন চলছে দুদিন ধরেই। সেই অভিযানের বহর আরও বাড়াল ভারতীয় সেনাবাহিনী। প্রায় ৩০টা গ্রামে ঘরে ঘরে ঢুকে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে বলে সেনা সূত্রে খবর।
তল্লাশি অভিযানে নামানো হয়েছে চার হাজারেরও বেশি সেনা এবং আধা-সামরিক বাহিনী। সঙ্গে আছে পুলিশও। পাশাপাশি হেলিকপ্টার ও ড্রোনের মাধ্যমেও জঙ্গিদের খোঁজ চালানো হচ্ছে। আর এই সেনা অভিযান চলাকালীন কাশ্মীর উপত্যকার কুলগাঁও থেকে পালাল জুনেইদ মাট্টুসহ ৬ লস্কর জঙ্গি। কুলাগামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তারা। সেনাকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেয় গ্রামবাসীরা। সেই সুযোগে চম্পট দেয় ৬ জঙ্গি। গোটা এলাকা ঘিরে ফেলেছে সেনা। তাদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
এক সেনা কর্মকর্তা জানান, গত ১৫ বছরে এমন ‘অল আউট’ অভিযান দেখেনি কাশ্মীর। কয়েকদিন আগে সোপিয়ানের একটি ফল বাগিচায় জঙ্গিদের বড় দলের গতিবিধি দেখা গিয়েছিল। দক্ষিণ কাশ্মীরে যে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছে, সেই ভিডিওতে স্পষ্ট। ভিডিওটা জঙ্গিরাই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছাড়ে। সোপিয়ানে যে জঙ্গিরা নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াচ্ছে, আরও নানান সূত্রে খবর আসে সেনার কাছে। জঙ্গিদের খোঁজে বৃহস্পতিবার তল্লাশিতে নামে যৌথ বাহিনী। শুরু হয় ‘অপারেশন ক্লিন আপ’।
১৯৯০ সালের পর কখনো এভাবে দরজায় দরজায় হত্যে দেয়নি সেনা। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে সেই পুরনো ছকেই এগোতে হচ্ছে। সমস্ত গ্রামবাসীকে একটি ফাঁকা জায়গায় জড়ো করে তাদের বাড়িতে ঢুকে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সেনা।
এই অভিযানে প্রথমে সোপিয়ানের প্রায় ১২টি গ্রাম ঘিরে ফেলে প্রতিটি ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালায় সেনারা। তারপর অভিযান ছড়ানো হয় আরও অনেকগুলো গ্রামে কোনো কোনো গ্রামে বিনা বাধাতেই তল্লাশি চালাতে পারলেও, বেশকিছু গ্রাম সেনাদের এই অভিযানে বাধা দেয়। হিফ, সুগান, চিলিপোরা, মালনার, তুর্কাওয়াঙ্গনের মতো গ্রামের বাসিন্দারা সেনাদের লক্ষ্য পাথর ছোড়ে। বাধা দেয় তল্লাশিতে। দুপক্ষের সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী আহত হন বলে জানা গিয়েছে।
এই তল্লাশি অভিযান চালানোর মধ্যেই কিন্তু ইমাম সাহিব গ্রামে সেনার ৬২ রাইফেলসের জওয়ানদের লক্ষ্য করে হামলা চালায় জঙ্গিরা। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়ে তিন জওয়ান আহত হন। মৃত্যু হয় এক গাড়িচালকের। এই হামলার দায় স্বীকার করে হিজবুল মুজাহিদিন।
সূত্রের খবর, দক্ষিণ কাশ্মীরে প্রশাসনিক শিথিলতার সুযোগে ৩০-৪০ জন জঙ্গি সেখানে ঘাঁটি গেড়ে বসেছে। বেশকিছু লস্কর জঙ্গি কুলগাঁম জেলায় লুকিয়ে রয়েছে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে সেখানেও অভিযান চালায় সেনা।
সেনা সূত্রে খবর, খুরওয়ানের স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় জঙ্গিরা সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়। তাদের খোঁজে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে সেনা। এই কুলগাঁমেই কয়েকদিন আগেই ব্যাঙ্ক লুট করে জঙ্গিরা। তাদের হামলায় পাঁচ পুলিশকর্মীসহ সাতজন নিহত হন। যেভাবে জঙ্গিরা দক্ষিণ কাশ্মীরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই ‘অল আউট’ অভিযান চালানো হচ্ছে।
হিজবুল কমান্ডার বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর পর থেকেই কাশ্মীর নতুন করে অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠেছে। দফায় দফায় সেনাদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ চলছে প্রতিদিন। সেনাদের তল্লাশি অভিযানের বিরোধিতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে প্রায় গোটা কাশ্মীর। প্রতিদিন কোনো না কোনো সংঘর্ষে আহত হচ্ছে সেনা, সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভকেই ঢাল করে পাক মদদপুষ্ট সন্ত্রাসবাদীরা আরও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কাশ্মীরে। সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত অবশ্য চলতি জঙ্গি বিরোধী অপারেশনকে প্রকাশ্যে বেশি গুরুত্ব দিতে চাননি। তার দাবি, কাশ্মীরে এমন অভিযান বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে।