অদ্ভুত দেশ উত্তর কোরিয়া
রাহাত মিনহাজ
ডেমোক্রেটিক পিপলস্ রিপাবলিক উত্তর কোরিয়ার জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৫ আগস্ট। ওইদিন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের মাধ্যমের দেশটির গোড়াপত্তন। জাপান আত্মসমর্পণের পরপরই কোরিয়া উপত্যকায় ঢুকে পড়ে রাশিয়া ও মার্কিন বাহিনী। রাশিয়ার দখলে চলে আসে উত্তর অংশ। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দখলে দক্ষিণ। এরপর ৩৮ অক্ষ রেখার মাধ্যমে দেশ দুটির বিভক্তি আরও স্পষ্ট করা হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে দুই কোরিয়ার একত্রীকরণের প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও তা সফল হয়নি। এরপর থেকেই মুখোমুখি উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া। জন্মের পরপরই যুদ্ধে জড়ায় দুই দেশ। ১৯৫০ সালে দক্ষিণ কোরিয়া আক্রমণ করে বসে উত্তর কোরিয়া। শুরু হয় ভয়াবহ যুদ্ধ। তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে দুই অংশে ১০ লাখের বেশি সৈন্য ও সাধারণ মানুষের প্রাণ যায়। ১৯৫৩ সালে থামে এই যুদ্ধ। ওই যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। বলা হয় এতে উত্তর কোরিয়ার সব বহুতল ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যুদ্ধ থামলেও চির বৈরী এই দুই দেশের উত্তেজনা থামেনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং কোরিয়ার একত্রীকরণের স্বপ্ন দেখে গেছেন। এখন মাঝে মধ্যেই দুদেশ সমর সজ্জায় সজ্জিত হয়।
বর্তমান বিশ্বে দক্ষিণ কোরিয়া উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আর উত্তর কোরিয়া পুরোপুরি কর্তৃত্বপরায়ণ এক দল শাসিত প্রায় নিষিদ্ধ এক দেশ। কিম জন উন ক্ষমতায় আসার পর উত্তর কোরিয়ার উন্মাদ আচরণ আরও বেড়েছে। বিশ্বের অন্য কোনো দেশকে কোনো রকম তোয়াক্কা না করে একের পর এক অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। যাতে উদ্বিগ্ন দক্ষিণ কোরিয়া জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসংঘ। এছাড়া উত্তর কোরিয়ার ঘনিষ্ট মিত্র চীনও সাম্প্রতিক সময়ে সমালোচনা করছে দেশটির। বর্তমানে কিম জন উনকে উত্তর কোরিয়ায় প্রায় ৫০টির বেশি অলঙ্কারিক নামে ডাকা হয়। যেগুলোর মধ্যে গ্রেট লিডার, সুপ্রিম লিডার, আওয়ার ফাদার এবং আওয়ার জেনারেল অন্যতম। উল্লেখ্য কিম দেশটির সর্বোচ্চ সেনা কমান্ডার হলেও তার কোনো ধরনের সেনা প্রশিক্ষণ নেই। উত্তর কোরিয়ার এই নেতার বাতিক আছে চুল কাটার ডিজাইন নিয়েও। কিম ফরমান জারি করে দেশের সব যুবককে তার নিজের চুলের স্টাইলে চুল কাটতে বাধ্য করেন। তবে মজার বিষয় নাপিত নিয়ে কিমের এক ধরনের ভীতি আছে। তাই ক্ষেত্র বিশেষে তিনি নিজের চুল নিজেই কাটেন কিম। বর্তমান বিশ্বের পাগলাটে এই একনায়ক খুবই খেলাধুলা প্রিয়। তার প্রিয় খেলা বাস্কেট বল। সুইজারল্যান্ডে থাকার সময় কিম বাস্কেট বল দল শিকাগো বুলসের ভক্ত ছিলেন। আর প্রিয় খেলোয়াড় মাইকেল জর্ডান। শুধু খেলাধুলা নয় খাওয়া-দাওয়া নিয়ে বিশেষ বিশেষত্ব আছে কিমের। ক্ষমতার আসার পর ২০১৪ সালে উত্তর কোরিয়ায় ভীষণ জনপ্রিয় ‘চকো পাই’ নিষিদ্ধ করেন কিম। তার শঙ্কা ছিল অতি জনপ্রিয় এই খাবারটি তার বিরুদ্ধে কোনো বিদ্রোহ ঘটিয়ে ফেলতে পারে। আর অন্যদিকে এটা জানতে পেরে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ বেলুগে করে উত্তর কোরিয়ায় পাঠিয়ে আসছে সুস্বাদু চকো পাই। এ রকম নানা অদ্ভুত নিয়ম-কানুন আর বিধি-নিষেধে চলছে বর্তমান উত্তর কোরিয়া। বলা যায় সময়টা এখন কিম জন উনের। মনে রাখা ভাল, উত্তর কোরিয়ার সময় গণনাও আলাদা। ১৯৯৭ সালে উত্তর কোরিয়ায় শুরু হয়েছে নতুন পদ্ধতিতে দিন-বছর গণনা। যার নাম জুচে ক্যালেন্ডার।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান