বিনা সুদে গৃহঋণ পাবেন মুক্তিযোদ্ধারা
হাসান আরিফ : মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাংকের মাধ্যমে সুদমুক্ত গৃহঋণ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তবে বিনা সুদে ঋণ দেওয়া ব্যাংকের জন্য বাস্তবসম্মত নয় বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। তাই সুদের ভর্তুকি দিবে সরকার।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে কাঠামোর কাজ শেষ হয়েছে। এসংক্রান্ত কমিটি দ্রুততার সঙ্গে কাজ করছে। সরকার চাইছে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বাজেট থেকেই প্রকল্পটি চালু করতে। তাই মুক্তিযুদ্ধ বিষযক মন্ত্রণালয়কে মুক্তিযোদ্ধাদের হালনাগাদ তালিকা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বিনা সুদে ঋণ ব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের কর্মকৌশল কি হবে, এতে সম্ভাব্য আর্থিক সংশ্লেষণের পরিমাণ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত ও মতামত সংবলিত বিস্তারিত প্রতিবেদন বাংলাদেশ ব্যাংক প্রস্তুত করেছে। এতে দুইটি বিকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম প্রস্তাবে মুক্তিযোদ্ধাদের বিনা সুদে আনুমানিক ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা ঋণ প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সরকার বাজেট থেকে বরাদ্দ দিবে। বিকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো নিজস্ব তহবিল থেকে এ অর্থ সংস্থান করবে।
উভয় প্রস্তাবে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধাকে ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ঋণের মেয়াদ হবে ১০ বছর। ঋণগ্রহীতা মুক্তিযোদ্ধাকে ১২০টি কিস্তিতে ঋণের মূল টাকা পরিশোধ করতে হবে। এক্ষেত্রে আসল টাকা পরিশোধে মাসিক কিস্তির পরিমাণ হবে ৬ হাজার ৭৯২ টাকা। এ ঋণের জন্য কোনো সুদ দিতে হবে না। ঋণগ্রহীতার পক্ষে যাবতীয় সুদ সরকার দেবে।
সরকার বর্তমানে সোনালী, জনতা, অগ্রণী, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতা দিয়ে থাকে। তাই বর্ধিত এ ঋণ সুবিধা এসব ব্যাংকের মাধ্যমে দেয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সভায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সুদমুক্ত ঋণ দিতে যে ১৫ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে, সেটা সরকারের বাজেট থেকে সংস্থান করা দুঃসাধ্য হবে। তবে সরকারকে একবারই এ অর্থ দিতে হবে না। তাই ঋণ বিতরণের সম্ভাব্য আবেদনের সংখ্যার ভিত্তিতে এর পরিমাণ নির্ধারণ করা যুক্তিযুক্ত হবে।
জানা গেছে, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ২ লাখ টাকা এবং অগ্রণী ব্যাংকে ৩ লাখ টাকা করে গৃহ নির্মাণ ঋণের সুবিধা চালু রয়েছে। ব্যাংকের তহবিল থেকে ৮ লাখ টাকা করে মুক্তিযোদ্ধাদের ঋণ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের আর্থিক সামর্থ্য প্রয়োজন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা বলেছেন।
মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, দেশের ৬৪ জেলায় সম্মানী ভাতাভোগী মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার ২০৭ জন। এর বাইরে ভাতাপ্রাপ্ত ৭ হাজার ৮৩৮ যুদ্ধাহত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা এবং ৪১ নারী মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৬ মুক্তিযোদ্ধার প্রত্যেককে পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য ৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হলে ১৫ হাজার ৩ কোটি টাকা প্রয়োজন হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্কলনে বলা হয়েছে।