নতুন জোট ইউএনএ, ৫৬ দলের নিবন্ধন নেই এরশাদের আরও একটি রেকর্ড ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জোট
নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইউনাইটেড ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স (ইউএনএ) নামে সম্মিলিত জাতীয় জোটের ঘোষণা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। আগামী নির্বাচনে এই জোটের ব্যানারে অংশ নিতে চান। সেই সঙ্গে আরও নতুন সদস্যও নিতে চান। নতুন জোটের সদস্য হয়েছে ৫৮টি দল। এরমধ্যে দুটি দল সরাসরি সদস্য আর বাকি ৫৬টি দল সরাসরি সদস্য হতে পারেনি মোর্চার ব্যানারে জোটে ঢুকেছে। কারণ যেসব দলের নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন নেই ওই সব দল সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। তাদেরকে জোটের ভেতরেই থাকতে হবে এবং নির্বাচনে যেতে হবে। নতুন জোটের প্রধান হিসেবে রয়েছেন এরশাদ। আর সকল দলের মহাসচিব, সাধারণ সম্পাদকগণ এর মুখপাত্র হিসেবে থাকবেন। এর বাইরে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জাতীয় পার্টির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করবেন।
এই জোট গঠন করে এরশাদ আরও একটি রেকর্ড গড়েছেন। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জোট গঠন করলেন তিনি। এর আগে বাংলাদেশে এত বড় জোট আর হয়নি। ২২ দলীয় জোট, ২০ দলীয় জোট, ১৪ দলীয় জোটসহ বিভিন্ন ধরনের জোট গঠন করে নির্বাচনি ও আন্দোলনের জোট গঠন করা হলেও ৫৮ দলের জোট হয়নি। এবারের জোটের দুর্বলতা হচ্ছে নামে ও সংখ্যায় ৫৮টি দল হলেও নিবন্ধনের সংখ্যার দিক থেকে অন্যান্য জোটের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।
জাতীয় পার্টির সূত্রে জানা গেছে, এরশাদ নতুন জোট গঠন করার জন্য দুইভাবে জোটের শরিক দল নির্বাচনের পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। এর একটি হলো, যেসব দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত আছে-সেই দল সরাসরি জোটের শরিক থাকবে। আর যেসব দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে কিংবা নিবন্ধিত হওয়ার অপেক্ষায় আছে, তাদের সমন্বয়ে মোর্চা বা জোট গঠন করে সেই জোটকে শরিক হিসেবে বৃহত্তর জোটে রেখেছে।
এদিকে ইউনাইটেড ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স (ইউএনএ) ঘোষণা দেওয়ার পর সেই জোট আগামী দিনে কতখানি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে ও নির্বাচনে ভূমিকা রাখবে তা দেখার জন্য অপেক্ষা করবে বিএনপি। কারণ জোটে যারা যোগ দিলেন তাদের বেশির ভাগেরই নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন থাকার জন্য যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার তার অনেকগুলোর নেই। তাছাড়া জোটে যেসব দল যোগ দিয়েছে সেখানে অনেক দলের প্রধান ও দলের সাধারণ সম্পাদককেও অনেকেই চেনেন না। তাদের সরাসরি অংশগ্রহণও কম।
যদিও কোনো কোনো সূত্র বলছে, এরশাদকে আগামী নির্বাচনে তিনশ আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তিনি সরকারের ভেতরে থেকেই তা করবেন। এখনো জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে রয়েছে সংসদে। আবার মন্ত্রিপরিষদেও রয়েছে। এরশাদ আগামী দিনে সংসদে বিরোধী দলে অন্তত থাকতে চান। কারণ বিরোধী দলে বিএনপি যাতে আসতে না পারে সেই চেষ্টাও চলছে। সেই হিসেবে এরশাদ বিরোধী দল হলে তৃতীয় দল করার চেষ্টা করা হবে বিএনপিকে।
সূত্র জানায়, জোটের জাতীয় পার্টির নিবন্ধন রয়েছে। আর নিবন্ধন রয়েছে ইসলামিক ফ্রন্টের। আর বাকিগুলোর নিবন্ধন নেই। ইসলামিক ফ্রন্ট নিবন্ধনকৃত হলেও এই দলের সাংগঠনিক ভিত ততটা সুদৃঢ় নয়।
সম্মিলিত জোটে ইসলামিক ফ্রন্টের বাইরে বাংলাদেশ জাতীয়জোট-বিএনএর একাংশের নেতৃত্বে ২২টি দল ও জাতীয় ইসলামি মহাজোটের ৩৪ দল এর সদস্য। এদিকে বাংলাদেশ জাতীয় জোটের যে অংশটি জোটে যোগ দিয়েছে তাদের নেতৃত্বে ব্যারিস্টার নাজমূল হুদা দিচ্ছেন না। এই অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেকান্দার আলী মনি। একটি সূত্র বলছে, এরশাদের জোটে নাজমুল হুদাকে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু তিনি রাজি হননি। ওই নেতার অভিযোগ নাজমুল হুদা বিএনপিতে যেতে চান।
সূত্র মতে, জাতীয় পার্টি দশম নির্বাচনের আগে ছিল মহাজোটের সদস্য। এরপর গত নির্বাচনে বাইরে বেরিয়ে গিয়ে তারা আলাদা নির্বাচনে অংশ নেয়। আর এখন বিরোধী দলের প্রতিনিধিত্ব করছে সংসদে। এই অবস্থার মধ্যে এইচ এম এরশাদের নেতৃত্বে ইসলামী মূল্যবোধের নতুন এক জোটের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর নামকরণ করা হয়েছে, সম্মিলিত জাতীয় জোট (ইউএনএ)।
এরশাদ নতুন জোট ঘোষণার বিষয়ে বলেছেন, স্বাধীনতার চেতনা এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলো এই জোটের অন্তর্ভুক্ত হতে পারবে। স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল এই জোটে সদস্য হতে পারবে না।
এরশাদ তার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে বলেছেন, জোটগতভাবে জাতীয় ও সব পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। সরকার গঠন করার লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়াও দেশের উন্নয়নে কাজ করবে। এরশাদের জোট থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নিবেন তাদের সবাইকে একই প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে হবে এমন মনে করছেন না। নিবন্ধিত দল যে কোনো নির্বাচনে নিবন্ধিত দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে। আর যারা জোটের সদস্য হয়েছেন তারা এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, নির্বাচনি ফলাফল যাই হোক না কেন তারা মেনে নিবে। আর ফলাফল যাই হোক না কেন জোটে ভাঙন ধরাবে না।জোট বহাল থাকবে।
জোটের নেতারা আরও একমত হয়েছেন, জোটের স্থায়ীত্বের জন্য রাজনৈতিক বিপদে-আপদে, সুদিনে-দুর্দিনে শরিকরা একে অপরের পাশে থাকবে। তারা অঙ্গিকার করেছেন, স্বার্থের কারণে কোনো দল জোট ছেড়ে যাবে না।
এরশাদ বলেছেন, জোট গঠনের পর আরও কোনো দল সদস্য হতে চাইলে তাও বিবেচনায় থাকবে। আরও দুটি দল জোটের সদস্য হতে চাইলেও তারা বিষয়টি বিবেচনা করে দেখবেন বলেও এরশাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনটি জোট এক হয়ে একটি জোট গঠনের ব্যাপারে তারা তাদের ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। জোটের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য-জোটগতভাবে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল পর্যায়ের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। জোটগতভাবে সরকার গঠন করে দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি সমাজে ন্যায় বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করা। আর বাংলাদেশকে উন্নত করে সুখী ও সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
জোটের নেতারা মনে করছেন, এখানে হাতে গোনা দুই-তিনটি দল নিবন্ধিত। বাকিদের তেমন পরিচিতিও নেই। দেশে কেবল চার-পাঁচটা দলকেই মানুষ চেনে। অন্যগুলো তেমন চেনে না। এরশাদ সাহেবের ব্যক্তিগত পরিচিতি কোনো দলের চেয়ে কম না। তার পরিচিতির ওপর ভিত্তি করেই এই জোট এগিয়ে যাবে। সম্পাদনা : হুমায়ুন কবির খোকন