ধর্ষকরা এতো প্রভাবশালী, গ্রেফতার দূরে থাক পরিচয়ও দিচ্ছে না পুলিশ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু ও সুজন কৈরী : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরীয়ার আলম তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ধর্ষকদের সম্পর্কে যত তথ্য আছে বনানী থানাকে জানান। ধর্ষকদের ছবি ফেসবুকের পাতায় দিয়েদিন। কিন্তু ধর্ষকরা অত্যন্ত প্রভাবশালী একজন আমিন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে অন্যজন এমন প্রভাবশালী তার পরিচয়ই প্রকাশ করছে না পুলিশ। সন্দেহ করা হচ্ছে পুলিশ এখানে উৎকোচ নিয়েছে। প্রভাব ও উৎকোচ দুটি মিলিয়ে মামলাটি পুলিশের কাছে অতিগোপনীয় হয়ে গেছে। যদিও বনানী থানার ওসি আব্দুল মতিন উৎকোচ নেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কিছু হয়নি। আমরা মামলাটা তদন্ত করছি।
রাজধানীর বনানীর অভিজাত হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা কেউই ধরা পড়েনি। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় আদৌ ধরা পড়বে কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। এছাড়া হোটেলে ওই রাতের ভিডিও ফুটেজও লাপাত্তা হয়ে গেছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ বলছে ফুটেজগুলো অনেক আগের তাই সংগ্রহে নেই।
এ বিষয়ে ডিএমপির গুলশান জোনের এডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের একাধিক টিম অভিযান চালাচ্ছে। তবে এখনও কোনো আসামি ধরা পড়েনি। তিনি আরও বলেন, হোটেল কর্তৃপক্ষ সর্বশেষ একমাসের ফুটেজ সংরক্ষণ করে থাকে বলে ধর্ষণের ঘটনার কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঘটনার একমাস পরে গত শনিবার বিকালে বনানী থানায় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণের শিকার এক তরুণী বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলার আসামিরা হচ্ছেন, সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সফিক, ড্রাইভার বিল্লাল, সাফাত আহমেদের বডিগার্ড (অজ্ঞাত) নাম উল্লেখ করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মামলার ৩ নম্বর আসামি সাদমান সফিককে প্রায় দুই বছর ধরে তারা চেনেন। ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে গুলশান-২ এর ৬২ নম্বর রোডের ২ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা দিলদার আহমেদের ছেলে সাফাত আহমেদের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। এরপর জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে গত ২৮ মার্চ সাফাত আহমেদ তার গাড়ি পাঠিয়ে ড্রাইভার ও বডিগার্ডের মাধ্যমে তরুণীদের বাসা থেকে বনানীর রেইনট্রি হোটেলের ছাদে নিয়ে যাওয়া হয়।
এজাহারে আরও বলা হয়, ওই রেস্টুুরেন্টে কোনো পার্টি হওয়ার বিষয় তারা জানতেন না। তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, রেস্টুরেন্টে অনেক লোক থাকবে এবং অনুষ্ঠানটি হবে হোটেলের ছাদে। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর কোনো ভদ্র লোককে তারা দেখতে পাননি। সাফাত, নাঈম ও সফিক ছাড়াও সেখানে আরও দু’জন মেয়ে ছিলেন। তাদের ওই হোটেলে নিয়ে যাওয়ার পর আগে থেকে সেখানে থাকা অন্য দু’টি মেয়েকে সাফাত ও নাঈম বারবার নিচে নিয়ে যাচ্ছিলেন। সেখানকার পরিবেশ ভালো না লাগায় ভুক্তভোগী দুই তরুণী চলে যেতে চাচ্ছিলেন। তখন ওরা (মামলার আসামি সাফাত ও নাঈম) তরুণীদের বন্ধু শাহরিয়ারকে মারধর করে তাদের গাড়ির চাবি নিয়ে নেয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, একপর্যায়ে তাদের দু’জনকে একটি কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক মদ্যপান করিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়। এ সময় সাফাতের নির্দেশে তার ড্রাইভার বিল্লাল ধর্ষণের দৃশ্য ভিডিও ধারণ করে। এর প্রতিবাদ করলে নাঈম আশরাফ তরুণীদের মারধর করেন। পরবর্তীতে সাফাত তার দেহরক্ষীকে তরুণীদের বাসায় পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে ও ভয়ভীতি দেখায়। তাদের হুমকি ও লোকলজ্জার ভয়ে এক পর্যায়ে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারা। যে কারণে মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
অপরদিকে এক মাসের বেশি সময় পর মামলার বিষয়ে বাদী পুলিশকে জানিয়েছেন, লোকলজ্জার ভয়ে তারা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। ধর্ষণের পর আসামি তাকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান আসামির দেহরক্ষী তাকে অনুসরণ করছিলেন। তাদের বাসায় গিয়েও নানান কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন। আসামি ভিডিও আপলোড করারও হুমকি দিচ্ছিলেন। সে কারণে তারা থানায় যান।
অপরদিকে ধর্ষণের শিকার হওয়া দুই তরুণীর ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ড. সোহেল মাহমুদের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- মমতাজ আরা, নিলুফার ইয়াসমিন, কবিতা সাহা ও কবির সোহেল। গতকাল রোববার দুপুর ১টার দিকে বনানী থানার দুই নারী পুলিশ ভুক্তভোগীদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার থেকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নেওয়া হয়।
ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ভিকটিমদের মাক্রোবায়োলজি, রেডিওলজিক্যাল এবং ডিএনএ প্রোফাইলিং পরীক্ষার আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা শেষে প্রতিবেদন পেতে ১৫/২০ দিন সময় লাগবে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে ঘটনাটি বেশ কিছুদিন আগের হওয়ায় ধর্ষণের আলামত পাওয়া কঠিন হবে। তাই এখন আমরা তথ্য প্রমাণের উরপ নির্ভরশীল। সম্পাদনা : বিশ্বজিৎ দত্ত