গুলবুদ্দিন ফিরলেন, শান্তি কি ফিরবে!
রাহাত মিনহাজ
গুলবুদ্দিন হেকমতয়ার। কুখ্যাত যুদ্ধবাজ নেতা। বলা হয়ে থাকে এক হেকমতয়ারের কারণেই কাবুল শহর ছাড়খার হয়েছিল। নিহত হয়েছিলেন ৫০ হাজারের বেশি মানুষ। সরকারের সঙ্গে শান্তি চুক্তি সই করে আফগানিস্তানে ফিরেছেন গুলবুদ্দিন। কিন্তু তিনি নিজে যুদ্ধবিদ্ধস্ত আফগানিস্তানে কতটা শান্তি আনতে পারবেন তা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেকেই আবার সামনে দেখছেন আরও সংঘাত-রক্তপাত। যাতে বেশ পটু এই নেতা।
১৯৯০ এর দশকে গুলবুদ্দিন কাবুলের কসাই নামে পরিচিত ছিল। জাতিসংঘ ফরমান জারি করে তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। কিন্তু ২০ বছর পর এমন হলো যে তাকে সবকিছু মাফ করে দিয়ে, জাতিসংঘের সন্ত্রাসী তালিকা থেকে নামে কেটে আবার রাজনীতিতে আনতে হবে? তা নিয়েই চলছে আলোচনা-সমালোচনা, হিসেব-নিকেশ। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি শান্তির পথে একে বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন। তিনি হেকমতয়ারকে সরকারের একটা পদও দিতে চেয়েছেন। কিন্তু সেটা কি পদ আর সেটা গুলবুদ্দিন গ্রহণ করছেন কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। বর্তমান আফগানিস্তানে আতঙ্কের নাম তালেবান। কোনো অবস্থাতেই এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে বাগে আনতে পারছে না আফগানিস্তান ও মার্কিন চক্র। সেনা অভিযান, আলোচনা, সমঝোতা কোনোকিছুই কাজে আসছে না। বরং দিনে দিনে বাড়ছে সংঘাত। জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাস ছিল সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রক্তাক্ত। এমন অবস্থায় রাজনৈতিক মঞ্চে গুলবুদ্দিনের আবির্ভাব কতটা সুফল বয়ে আনবে তা কেউই নিশ্চিত নন। এদিকে গুলবুদ্দিনের সংগঠন হেজব-ই-ইসলাম আর সেই আগের অবস্থায় নেই। রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় এই সংগঠনটি খুবই প্রভাবশালী ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র আর পাকিস্তানের প্রশিক্ষণে সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী ছিল। ১৯৯২ সালে রাশিয়ার মদদপুষ্ট নজিবুল্লাহ সরকারের পতন হলে গুলবুদ্দিনকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু তালেবানদের দুর্দান্ত উত্থানের সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব না নিয়ে দেশ ছেড়ে পালান এই যুদ্ধবাজ নেতা। প্রথমে যান ইরান। পরে ২০০২ সালে তেহরান তাকে বহিষ্কার করলে পাকিস্তানে ফিরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। অভিযোগ আসে সে সময় তিনি ওসামা বিন লানেদ ও আইমান আল জাওয়াহিরিকে সহযোগিতা করেছিলেন। যদিও আল কায়েদার সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। ধারণা করা হয়, এতদিন তিনি পাকিস্তানে জামায়াতে ইসলামির মতো দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করেছেন।
শুধু পাকিস্তানি কিছু ইসলামপন্থি দল, আইএসআই বা মর্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নই যথেষ্ট? বিশ্লেষজ্ঞরা কিন্তু তা মনে করছেন না। কারণ তার সংগঠন হেজাব-ই-ইসলামে এরই মধ্যেই বিভক্তি তৈরি হয়েছে। তিনি আফগানের মাটিতে পা রাখার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা হয়েছে তার সংগঠনের বেশকিছু প্রভাবশালী নেতাকে। তাতে দলের ভেতর-বাইরের কোন্দল আরও বাড়বে। আর ভুলে গেলে চলবে না, তালেবানের সঙ্গে গুলবুদ্দিনের সম্পর্ক কখনেই ভালো ছিল না। এখন যদি পুরাতনে সেই ক্ষত আবার ব্যথা ছড়াতে শুরু করে তাহলে হয়তো গুলবুদ্দিন হেকমতয়ারকে খুব দ্রুত আবর আফগানিস্তান ছাড়তে হতে পারে।
লেখক: প্রভাষক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান