ক্ষুদ্র ঋণে আত্মকর্মসংস্থান : অসম্ভব সাধারণীকরণ
অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান
আমরা মালয়েশিয়া বা সৌদি আরবে একশজন কর্মী পাঠিয়ে যা আয় করতে পারব ইউরোপ বা আমেরিকায় একজন দক্ষ লোক পাঠিয়ে তারচেয়ে বেশি আয় করা সম্ভব। আমি অস্ট্রেলিয়াতে দেখেছি ভবন নির্মাণের সঙ্গে এক ধরনের কর্মী জড়িত যাদের ব্রিক সেটার বলে। আমাদের দেশে এদেরকে রাজমিস্ত্রি বলে। এদেশে রাজমিস্ত্রিরা অধিকাংশ সময়ই বংশানুক্রমিকভাবে তৈরি হয়। বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে। এখন ছেলেও ওই একই পেশায় এসেছে। এদের কোনো সার্টিফিকেট বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয় না। সরাসরি প্রাকটিক্যালি শিখে নেয়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে বিষয়টি সে রকম না। ওখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে হলেও তাকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। সার্টিফিকেট অর্জন করতে হয়। কারণ এ কাজটির সঙ্গে সেফটি অ্যান্ড সিকিউরিটি জড়িত। ওরা এগুলো মেনে চলে বলেই ওদের ভবন ধসে পড়ে না। কাত হয়ে যায় না। ভেঙে পড়ে না। ওই দেশে আমাদের দেশের রাজমিস্ত্রিদের চাকরির একটি বাজার তৈরি করা সম্ভব হতো যদি আমরা এখানকার রাজমিস্ত্রিদের জন্য কোনো প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারতাম এবং কোনো মানসম্পন্ন সার্টিফিকেট দিতে পারতাম। কিন্তু আমাদের দেশে তা হয়নি।
আমি আমাদের কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বিশেষ করে যারা বিদেশে চাকরির বাজার নিয়ে কাজ করছে তাদের অনেকবারই বলেছি বাজার খোঁজার আগে আমাদের দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার প্রতি মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। আর ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে উদ্যোক্তা তৈরির পথে না হেঁটে তাদেরও বরং মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। গণহারে উদ্যোক্তা গড়ে তোলার প্রত্যয় থেকে বেরিয়ে এসে আমরা যদি দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার প্রতি দৃঢ়তা দেখাতে পারি তাহলেই এদেশের উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। কারণ, প্রশিক্ষণ দিয়ে ব্যাপকহারে উদ্যোক্তা তৈরি সম্ভব না। যার মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার নেশা আছে তিনি আপন শক্তিতেই উদ্যোক্তা হওয়ার পথে এগিয়ে যাবেন। তিনি নিজ উদ্যোগেই প্রশিক্ষণ গ্রহণে আগ্রহী হবেন। এদেশে অনেক উদ্যোক্তা আছে যাদের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। তাদেরকে কেউ ঋণ দিয়েও সহায়তা করেনি। তারা কোনো জায়গা থেকে পরামর্শও গ্রহণ করেননি। অথচ তারা আজ সফল উদ্যোক্তা। তাই উদ্যোক্তা ন্যাচারালি তৈরি হয়ে যায়। তাদের মধ্যে উদ্যোক্তা হওয়ার এক ধরনের অদম্য নেশাই থাকে। তাদের কেউ থামিয়ে রাখতে পারে না। আমাদের দায়িত্ব হওয়া উচিত যারা উদ্যোক্তা হওয়ার নেশায় সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তাদের সকল ধরনের অবকাঠামোগত সুবিধা দিয়ে সহায়তা করা এবং তারা যেন তাদের প্রতিষ্ঠানে কাজ করানোর জন্য দক্ষ কর্মী পায় সেজন্য দক্ষ কর্মী তৈরি করে সহায়তা করা। তাহলেই তা দেশের জন্য, সকলের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে। (শেষ)
লেখক: উপাচার্য, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনা: আশিক রহমান