পদ্মার চরের পাকা ধান পানির নিচে
আব্দুম মুনিব, কুষ্টিয়া: ঘরে ঘরে চলছে পাকা ধান তোলার প্রস্তুতি। সন্তানের মতো যতœ করে ফলানো ধান আর কদিন পরেই কাটা হবে। ঠিক সেই মুহূর্তে চোখের সামনে পাকা ও আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যেতে দেখে দিশেহারা পদ্মা চরের কৃষকরা। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং ভাটির পানি প্রবেশ করায় পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে কুষ্টিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় পদ্মা চরের কয়েকশ একর জমির ধান তলিয়ে গেছে।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের পুরাতন কুষ্টিয়ার পদ্মা নদীর পাড়ে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ভাটি এলাকার পানিতে পদ্মার চরের কৃষকের স্বপ্ন মাটিতে মিশে যেতে বসেছে। গত তিন দিনে দূর্গত এলাকায় কেউ কোন খোঁজ খবর নিতে যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। তবে শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা।
স্থানীয়রা জানান, গত সপ্তাহ থেকে কাল বৈশাখী ঝড় এবং অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত শুরু হয়। নদীতে সামান্য পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করলেও কৃষকেরা তা নিয়ে বিশেষ কিছু ভাবেনি। তবে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত এবং ভাটি থেকে (যমুনা নদীর) পদ্মা নদীতে পানি প্রবেশের ফলে অসময়ে নদীর চরগুলোতে অতিরিক্ত পানি প্রবেশে চরের ধান তলিয়ে যেতে শুরু করে। কৃষকেরা কিছু পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে পারলেও অধিকাংশ ধানই নদীতে তলিয়ে যায়। বর্তমান যে ধানগুলো দেখা যাচ্ছে তার অধিকাংশই নুয়ে পড়েছে। আর বাকীগুলো কাটতে ব্যস্ত এলাকার কৃষকেরা। চরের তিন পার্শ্বে পানি শুকনা স্থানগুলো দিয়ে পায়ে হেটে অথবা নৌকায় করে বুক সমান পানিতে ধান কাটছে কৃষকেরা।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানান, ঘরে ধান তোলার অপেক্ষায় ছিলাম। এভাবে নদীর পানিতে ধান তলিয়ে যাবে তা ভাবেনি। আমরা কৃষক, আমাদের অভাব এবার যাবে না। চরের এক মাত্র ফসল ঘরে তুলতে না পারায় অনেক কৃষককেই সর্বশান্ত হয়ে পড়তে হবে। কেননা দাদনের টাকা নিয়ে বীজ, সার এবং দিন মজুরের খরচ ব্যয় করতে হয়েছে। এখন ধান না পাওয়ায় কৃষকেরা কি করবে তা ভেবে কুল পাচ্ছে না।
কৃষক সাত্তার শেখ জানান, পদ্মার চরে হাজার হাজার একর জমিতে ধানের আবাদ করা হয়েছিল। এখানকার চাষীরা ধানের উপযুক্ত পরিচর্যা করে আসছিল। অধিকাংশ, ধানই পাকা শুরু করেছিল আবার কিছু ধান পাকার উপক্রম হয়েছিল। এবার ধানের বাম্পার ফলনের আশায় বুক বেধে চাষীরা ধান ঘরে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আকস্মিক পানি আসায় সব ধান তলিয়ে গেছে। আবার যাওবা আছে তা কাটার জন্য শ্রমিক ও পাওয়া যাচ্ছে না।
কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, যতটুকু পারা যায় উদ্ধার করার চেষ্টা করেছি। আর সম্ভব হচ্ছে না, সবই ডুবে গেল। আমাদের পাকা ধান চোখের সামনে নদীতে চলে গেল। আমরা সর্বশান্ত হয়ে গেছি।
এদিকে ঘটনার এক সপ্তাহ পর সংবাদ কর্মীদের কাছে শুনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন কুষ্টিয়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. এম সাহাবউদ্দীন, অতিরিক্ত উপ পরিচালক (শষ্য) ড. হায়াত মাহামুদ ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেলিম হোসেন।