মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি গঠন ধর্ষকদের ধরতে মাঠে গোয়েন্দারা খোঁজ নেয়া হচ্ছে দুই বান্ধবীর
ইসমাঈল হুসাইন ইমু : বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকদের ধরতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ মাঠে নেমেছে। এরই মধ্যে ধর্ষকদের নাম ঠিকানা সংগ্রহ করা হয়েছে। যেকোনো সময় তারা গ্রেফতার হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
অভিযুক্তরা যেন দেশ ত্যাগ করতে না পারে সে ব্যাপারে গতকাল সামবার বিকালে ইমিগ্রেশন পুলিশকে নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। ইমিগ্রেশন পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে গতকাল সোমবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারের এক প্রশ্নের জবাবে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম বলেন, আসামিরা যতই শক্তিশালী হোক না কেন, যত বড় মাপেরই হোক না কেন, তাদের গ্রেফতার করা হবে। ভিকটিমদের অভিযোগের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশ প্রথমে ছায়া তদন্ত শুরু করে। এরপরই তাদের ধরতে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দা দল। ভিকটিম অভিযোগ করতে দেরি করেছে, এসব ঘটনায় শুরুতেই অভিযোগ করতে হয়। যাহোক অভিযোগের ভিত্তিতেই আসামিদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।
অপরদিকে ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। তদন্তের অংশ হিসেবে কমিশন ইতোমধ্যে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে সেদিনের ঘটনা নিয়ে কথাও বলেছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক সাংবাদিকদের বলেন, আমরা ভিকটিমদের সঙ্গে কথা বলেছি। পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন এবং বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে কমিশন স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। নজরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- নুরুন নাহার ওসমানী, এনামুল হক চৌধুরী, শরীফ উদ্দীন ও এম রবিউল ইসলাম। তদন্ত কমিটি প্রয়োজনীয় স্থান পরিদর্শন, সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
অপরদিকে অভিযুক্তদের বান্ধবী নাজিয়া ও তানজি আলিশা ওই রাতে হোটেলে উপস্থিত ছিলেন। মামলার তদন্তে তারা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে পারেন। এমনকি ওই ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দিও দিতে পারেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ নাজিয়া ও তানজি আলিশাকে আটক করা হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত নাজিয়া ও তানজি আলিশার চালচলন সন্দেহজনক ছিল। তারা সাফাত, নাঈম ও সাকিফের বান্ধবী। ধর্ষণের অভিযোগ আনা এক তরুণী পুলিশকে জানিয়েছেন, সেদিন হোটেলের ছাদে গিয়ে নাজিয়া ও তানজি আলিশা নামে সাফাতের দুই বান্ধবীর সঙ্গে তাদের দেখা হয়। তারা সেখানে আড্ডা দেন। আড্ডা দেয়ার মধ্যে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে সাফাত ও নাঈম বেশ কয়েকবার নিচে যান, আবার তারা ছাদে ফিরে আসেন। কী উদ্দেশ্যে তারা সাফাত ও নাঈমের সঙ্গে নিচে যান এবং তারা ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতেন কিনা এসব বিষয়ে তাদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে বলেও মনে করেন পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকে মামলার প্রধান আসামি সাফাত ও নাইমের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা সমঝোতার চেষ্টা চলে উভয় পক্ষের। সাফাতের সাবেক স্ত্রী ফারিয়া ঘটনার মিডিয়া হিসেবে কাজ করেন। তবে তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়ে মীমাংসা না হওয়ায় ফারিয়ার সহযোগিতায় থানায় মামলা করা হয়। আর মামলা দায়েরের পর অভিযুক্ত দুজন গোপনে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
এদিকে সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিম বলেন, ঘটনাটি সাফাতকে ফাঁসানোর জন্য সাজানো হয়েছে। তার সাবেক স্ত্রী এ ঘটনার নেপথ্যে কাজ করছে। ওই মেয়ে খুবই খারাপ। আর এ কারণে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদও হয়েছে। ক্ষোভের বশে সে একাজ ঠা-া মাথায় করছে বলে তার অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ রাতে বার্থডে পার্টির নাম করে দুই তরুণীকে বনানীর দ্য রেইন ট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে দুই বন্ধু মিলে রাতভর ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সেই চিত্র গাড়ির ড্রাইভারসহ আরো দুজন বন্ধু মোবাইল ফোনে ভিডিও করে। এরপর তাদের ভোরের দিকে গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ঘটনার ৪০ দিন পর গত শনিবার ধর্ষণের শিকার দুই তরুণী বনানী থানায় মামলা করেন। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন