বাদ পড়তে পারেন বিতর্কিতরা মন্ত্রিসভায় রদবদল আসছে
হুমায়ুন কবির খোকন : এবার আওয়ামী লীগে আলোচনা চলছে মন্ত্রিসভার রদবদল নিয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনোদিন মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন আনতে পারেন। আগামী ২০১৮ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে এ আলোচনা চলছে। সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখের কথা না জানা গেলেও পরিবর্তনের বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্যও মন্ত্রিসভার রদবদলের বিষয়ে আভাস দিয়েছেন। মন্ত্রিসভায় রদবদল হতে পারে বলে গতকাল জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সূত্র মতে, মন্ত্রীদের আমলনামা এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। দক্ষতা, যোগ্যতা ও দলের জন্য কতটা ত্যাগ, সাংগঠনিক ভূমিকা মূল্যায়ন করে এ রদবদল হবে। অনেকে বাদ পড়ার পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হতে পারেন কেউ কেউ। বাদ পড়ার তালিকাও রয়েছে আলাদা করে।
যারা এখনো কোনো সাফল্য দেখাতে পারেননি এবং দলের জন্য বিতর্ক তৈরি করেছেন তাদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। পাশপাশি মন্ত্রিসভার বর্তমান সদস্যদের মধ্যে যারা বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তাদেরও অবসরে পাঠানো হতে পারে। মন্ত্রিসভায় নতুন কারা আসছেন তা নিয়ে ব্যাপক কৌতূহল ও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে গতকাল দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, মন্ত্রিসভা পুনর্গঠন হতে পারে। কারণ অনেক দিন হয়ে গেছে। তবে এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তবে কী রকম পরিবর্তন হতে পারে সে বিষয়টি তিনি স্পষ্ট করেননি।
জাতীয় পার্টির নতুন জোট এবং মন্ত্রিসভা থেকে জাতীয় পার্টির পদত্যাগের ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জোটকে চমক হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, নির্বাচনের আগে অনেক ভাঙাগড়া হবে। জোট ভাঙবে। জোট গড়বে। রাজনীতিতে শেষ বলে কোনো কথা নেই। জাতীয় পার্টির এই চমকের রেশ শেষ হতে কত সময় লাগবে, সেটার জন্য আগামী নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই। তারা ঐক্যমতের সরকারে আছে। আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা জানান, জাতীয় পার্টি মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করলেও এ সরকারের কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না। তারা পদত্যাগ করলে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হবে। শেখ হাসিনার চমকে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বতন্ত্র এমপিরাও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছেন। দলীয় সূত্র জানায়, সরকারের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনতে মন্ত্রিসভায় নতুন কেউ কেউ যুক্ত হতে পারেন। আবার কার্যক্রমের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নিয়ে দু-একজন প্রতিমন্ত্রী পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা পেতে পারেন। এ ছাড়া দু-একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দফতর পুনর্বিন্যাস হতে পারে বলেও অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভার আসন্ন রদবদলে সম্মেলনের মাধ্যমে দলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন, এমন সাবেক দু-একজন মন্ত্রীর ভাগ্য খুলতে পারে। আবার নতুন মুখ হিসেবে তৃণমূলের দু-একজন নেতা যুক্ত হতে পারেন। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে কাউকে দেখা যেতে পারে বলেও আভাস পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, সম্ভাব্য মন্ত্রী হিসেবে যাদের বিবেচনা করা হচ্ছে, তাদের ব্যাপারে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের প্রাধান্য দিচ্ছেন।
অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রীরা থাকছেন বাদের তালিকায়। ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই দক্ষ, যোগ্য ও অভিজ্ঞ নেতাদের সমন্বয়ে মন্ত্রিসভা সাজাতে চান তিনি। ২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর সরকার গঠনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবীন ও প্রবীণের মধ্যে সমন্বয়ের চেষ্টা করেন। তখন জেলা পর্যায়ের অনেক প্রবীণ নেতাকে তিনি মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের পর এ পর্যন্ত দুই দফায় সম্প্রসারণ করা হয়। এ এইচ মাহমুদ আলী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং নজরুল ইসলাম পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ২০১৫ সালের ৭ জুলাই নূরুল ইসলাম বিএসসি মন্ত্রী এবং তারানা হালিম এবং নূরুজ্জামান আহমেদ প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নমন্ত্রী হিসেবে খন্দকার মোশরারফকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৬ জুলাই সৈয়দ আশরাফকে দায়িত্ব দেওয়া হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। ১৪ জুলাই কয়েকজন প্রতিমন্ত্রীকে পূর্ণমন্ত্রী করা হয়। এছাড়া দায়িত্ব পালনকালে একজন মন্ত্রী ও একজন প্রতিমন্ত্রীর মৃত্যু হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভায় বর্তমানে ৩১ জন মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন। এ ছাড়া মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর পাঁচজন উপদেষ্টা কাজ করছেন। সম্পাদনা : নাশরাত আর্শিয়ানা চৌধুরী