এসকাপের পর্যবেক্ষণ জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমতে পারে আগামী বছর
মেসবাহ উল্লাহ শিমুল : বিগত কয়েক বছরের মধ্যে এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর। তবে সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহে মন্দা অবস্থা বিরাজ করায় আগামী বছর প্রবৃদ্ধির সে ধারা ব্যাহত হতে পারে। এতে করে কমে যেতে পারে দেশের মোট প্রবৃদ্ধির হার। এমনকী এ অবস্থা চলতে থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৫ ভাগে নেমে আসতে পারে। গতকাল জাতিসংঘের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশন-এসকাপ এক পর্যবেক্ষণে এ তথ্য দিয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইডিবি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সংস্থাটির ব্যাংকক কার্যালয়ের অর্থনীতি বিষয়ক কর্মকর্তা সুদীপ রঞ্জন বসু। এসময় ঢাকায় জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স এবং বিআইডিএস এর মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদও উপস্থিত ছিলেন।
‘ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল সার্ভে অব এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক’ নামের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে সামগ্রিকভাবে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ৫ শতাংশ হতে পারে। আর আগামী অর্থবছরে তা আরও খানিকটা বেড়ে ৫ দশমিক ১ শতাংশ হতে পারে। আর বাংলাদেশে প্রবৃদ্ধি কমার সম্ভাব্য কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়, আগামীতে বিভিন্ন দেশের বাণিজ্য সংরক্ষণ নীতি আরও কঠোর হতে পারে, যার প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। এছাড়া বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের ধারাবাহিক পতনের বিষয়টি প্রবৃদ্ধি কমার একটি অভ্যন্তরীণ কারণ হতে পারে বলে মনে করছে এসকাপ।
সুদীপ রঞ্জন বসু তার প্রতিবেদনে আরও বলেন, প্রতিবছরই এসকাপের এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। কার্যকর সুশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয় এ প্রতিবেদনে। যে দেশে সুশাসনের মাত্রা যত বেশি, সে দেশের আর্থিক ব্যবস্থাপনা তত ভালো।
এসকাপের ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমার আশঙ্কা প্রকাশ করার পাশাপাশি তা ধরে রাখারও পথ বাতলে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়, মানসম্মত চাকরির সুযোগ সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া, শিল্পায়ন ত্বরান্বিত করতে শিল্পবান্ধব নীতি গ্রহণ, মানবসম্পদের উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের বাধা চিহ্নিত করে তা সরিয়ে ফেলা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক মাত্রায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি গ্রহণ করা গেলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঠিক রাখা যেতে পারে। তবে একইসঙ্গে এ সবগুলো বিষয় ঠিক রাখা কঠিন বলেও প্রতিবেদনে বলা হয়।
বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিধারার প্রশংসা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১১ থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের উপরে থাকা স্থিতিশীল ও শক্তিশালী অর্থনীতির পরিচায়ক। বাংলাদেশে সরকারি ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে ই-প্রকিউরমেন্ট ব্যবস্থা চালু এবং রাজস্ব আদায় বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরে সংস্কার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছে এসকাপ।
এসময় ঢাকায় নিযুক্ত জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি রবার্ট ওয়াটকিন্স বলেন, এসকাপের এ একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে বর্তমান অবস্থা তুলে ধরার পাশাপাশি পূর্বাভাস দেওয়া। এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশ টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য ভাল করে বুঝতে এবং এসডিজি অর্জনে করণীয় কী তা বুঝতে পারবে।
অনুষ্ঠানে বিআইডিএস এর মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ বলেন, আসন্ন নতুন অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করা হলে অর্থনীতিতে দীর্ঘমেয়াদী কোনো প্রভাব পড়বে না বলেই তিনি মনে করেন। তার মতে, মাত্র ৩২ হাজার রেজিস্টার্ড ভ্যাটদাতা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিলে এটা দেশের অর্থনীতিতে বা দেশের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। সম্পাদনা : তরিকুল ইসলাম সুমন