মাইন্ডফুলনেস ও ট্রান্সসেনডেন্টাল মেডিটেশন
ডা. মো. তাজুল ইসলাম
মাইন্ডফুলনেস কি? আমাদের মন চলে, জীবন চলে ‘অটো পাইলট’-এর মতোন। আমরা মনে, শরীরে কি ঘটে যাচ্ছে পারতপক্ষে সেদিকে নজর দিই না (এমনকি অসুস্থ অবস্থায়ও কষ্ট-বেদনা ছাড়া অন্য সেনসেশন বা অনুভূতিরর দিকে কদাচিৎ খেয়াল করি)। জীবনে, চারপাশে কি প্রতি মুহূর্তে ঘটে চলছে সেদিকেও আমরা কমই নজর রাখি। মন, শরীর, জীবনের চারপাশকে নিবিষ্ট মনোযোগ দিয়ে নোটিস করার চেয়ে জীবনকে অটো চালিয়ে নেওয়া সহজতর। কিন্তু ‘বর্তমানে’ মনোযোগ দিয়ে, নিজের চিন্তা, অনুভূতি, মন-ছবি, শারীরিক সেনসেশনসহ চারপাশের জগতের দিকে তাকালে ভালো লাগা বোধ বাড়বে, জীবনকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা সম্ভব হবে এবং নিজেদের আরও ভালোভাবে চিনতে, বুঝতে পারব।
তাই মাইন্ডফুলনেস হচ্ছে আমাদের ভিতরে ও বাইরে কি ঘটছে তা সচেতনভাবে জানা এবং সেটি মুহূর্তে মুহূর্তে জানা; শরীর ও সেনসেশন এর সঙ্গে নিজকে রি-কানেক্ট করা (দৃশ্য, শব্দ, স্বাদ ইত্যাদি); প্রতি মুহূর্তে মনোরাজ্যে কি ধরনের চিন্তা রাশি, আবেগ-অনুভূতি বয়ে যাচ্ছে সেগুলোর প্রতি সচেতন থাকা। কি কি উপকারÑ
এক. জীবন জগতকে আরও ভালোভাবে উপভোগ করা সম্ভব। দুই. নিজেদেরকে আরও ভালোভাবে বোঝা সম্ভব। তিন. যেগুলো স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হতো সেগুলোর মধ্যেও নতুনের স্বাদ পাওয়া যাবে। চার. চিন্তার স্রোত কিভাবে বয়ে যায় সে সম্বন্ধে অধিকতর সচেতন হওয়া যায় এবং কিভাবে আমরা বাজে, অকার্যকর, ক্ষতিকর চিন্তার জটে নিজেরা ‘আটকে’ পড়ি তা ভালোভাবে বুঝতে পারব। পাঁচ. ক্রমশ কিভাবে চিন্তা আমাদের গ্রাস করে সেটি জেনে ‘চিন্তা শুদ্ধি’ অভিযান চালাতে পারব। ছয়. আমরা বুঝতে শিখব যে চিন্তা ও আমরা এক নই। চিন্তা নিছক ‘মানসিক ঘটনা প্রবাহ’ মাত্র, তাই চিন্তা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বরং আমরাই চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি।
ঘওঈঊ (ঘধঃরড়হধষ ওহংঃরঃঁঃব ড়ভ যবধষঃয পধৎব ধহফ ঊীপবষষবহপব) ডিপ্রেশন প্রতিরোধে মাইন্ডফুলনেস কার্যকর বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
লেখক: অধ্যাপক ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
সম্পাদনা: আশিক রহমান