মামলা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে স্থানান্তর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সচল ধর্ষকরা উন্নত প্রযুক্তিতেও খোঁজ পাচ্ছে না পুলিশ
ইসমাঈল হুসাইন ইমু, মাসুদ আলম ও সুজন কৈরী : বনানীতে দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত সাফাত ভাইবারে সক্রিয় আছেন। যোগাযোগ করছেন সবার সঙ্গেই। কিন্তু পুলিশ উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেও তার খোঁজ পাচ্ছে না। একই অবস্থা বাকি চার অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও। পুলিশ বলছে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অবশ্য সাফাতের বাসায় একধিকবার পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। এদিকে মামলা দায়েরের পর বনানী থানা পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করলেও গতকাল মামলাটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের সহকারী কমিশনার সাদিয়া আফরিন বলেন, ডিএমপির ক্রাইম বিভাগ থেকে এ আদেশ দেওয়া হয়। আজ থেকে সক্রিয়ভাবে তদন্ত কাজ শুরু হবে। গতকাল ভুক্তভোগী ওই দুই তরুণীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। পরে তরুণীদের তাদের আত্মীয়দের বাসায় পাঠানো হয়।
ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার প্রধান আসামি সাফাতকে গ্রেফতারে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গুলশান-২ এর ৬২ নম্বর রোডের ‘আপন ঘর’ নামক ডুপ্লেক্স বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। বাড়িটির হোল্ডিং নম্বর এন ডব্লিউ (সি)। বনানী থানার এসআই রিপন কুমার ও এসআই মিল্টন দত্তের নেতৃত্বে ৬-৭ জন পুলিশ সদস্য বাড়িতে প্রবেশ করে তল্লাশি চালায়। প্রায় দেড় ঘণ্টা অভিযান চালানো শেষে দুপুর ১টায় পুলিশ সদস্যরা বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। তবে সাফাতকে পাননি তারা। এর আগে গত সোমবারও ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে সাফাতকে খুঁজে পায়নি পুলিশ। পুলিশ বলছে, সাফাতসহ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অভিযান শেষে দুপুর দেড়টার দিকে সাফাতের বাবা ও আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ তার বাসা থেকে বের হওয়ার সময় গণমাধ্যম কর্মীরা তার মুখোমুখি হয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি শুধু বলেন, আমার ছেলে ব্ল্যাকমেইলের শিকার। এরপর আর কোনো কথা না বলে তিনি দ্রুত গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যান।
এদিকে ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলের জেনারেল ম্যানেজার ফ্রাঙ্ক ফরগেট বলেন, পুলিশ তাদের মতো করে তদন্ত করছে, এটা তাদের দায়িত্ব। ইতোমধ্যে তারা হোটেলে এসে সব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গেছে। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজও চেক করেছে। যে মেয়েরা এসেছিল তারা জন্মদিনের পার্টিতে এসেছিল বলেই আমরা জানি। তবে কে কে এসেছিল সেটি আমাদের জানার কথা না। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটার তথ্য আমরা আগে জানতাম না।
অপরদিকে আত্মগোপনের জন্য গত সোমবার সিলেটের রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে গিয়েছিলেন সাফাত বলে জানা গেছে। ওই সময় তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন। রিজেন্ট পার্ক রিসোর্টে সোমবার বিকাল ৫টার দিকে তারা রুম বুকিং করতে চেয়েছিলেন। তবে প্রকৃত তথ্য না দেওয়ায় তাদের হোটেলে থাকতে দেওয়া হয়নি। রিসোর্টের ইনচার্জ হেলাল আহমেদ, ম্যানেজার বখতিয়ার ও রেষ্টুরেন্টের ম্যানেজার মোবারক জানান, সাফাত ও তার সঙ্গীদের সঙ্গে কোনো লাগেজ ছিল না। বুকিংয়ের জন্য আইডি কার্ড চাওয়ায় সাফাত তা দিতে রাজি হননি। এ নিয়ে রিজেন্ট পার্কের রেষ্টুরেন্ট ম্যানেজার মোবারকের সঙ্গে সাফাতের বাকবিত-া হয়। রুম বুকিং না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে তারা রিসোর্ট ত্যাগ করেন।
বনানী থানার ওসি ছুটিতে : দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনা চললেও ছুটিতে রয়েছেন বনানী থানার ওসি বিএম ফরমান আলী। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ৫ দিনের ছুটিতে যান তিনি।
পুলিশের গুলশান বিভাগের এডিসি আব্দুল আহাদ বলেন, ওসি বিএম ফরমান আলী ছুটিতে যাওয়ার কারণ একান্ত পারিবারিক। মূলত পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ৫ দিনের ছুটিতে গেছেন তিনি।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নিতে গড়িমসি করে আসছিল ওসি ফরমান আলী। ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযোগকারীদের চরিত্র হননের চেষ্টা করেছেন তিনি। ধর্ষণের ঘটনায় গত শুক্রবার থানায় মামলা করতে গেলে প্রথম দফায় ওসি বিএম ফরমান আলী থানা থেকে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বের করে দেন। তবে শনিবার সন্ধ্যায় পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নির্দেশে মামলা গ্রহণ করেন ওসি। এরপর থেকে দৃশ্য পাল্টে যেতে থাকে। সম্পাদনা : গিয়াস উদ্দিন আহমেদ