পরিবেশবান্ধব কারখানা বাংলাদেশের সাফল্যের এক অনন্য খাত
মৌসুমী রায় : বাংলাদেশের গার্মেন্টস নিয়ে বিশ্বব্যাপী সরব আলোচনার মধ্যে অনেকটা নীরবেই বিশালসংখ্যক পরিবেশববান্ধব ও কর্মপরিবেশসম্পন্ন (কমপ্লায়েন্ট) কারখানা স্থাপন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও লাভ করেছে। তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র হিসাবে, এ পর্যন্ত ৬৭টি গার্মেন্টস ও টেক্সটাইল কারখানা ‘গ্রীন ফ্যাক্টরি’ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রীন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) স্বীকৃতি পেয়েছে। আরো ২২৭টি কারখানা পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে উঠছে। বলা চলে, পরিবেশবান্ধব কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক ধরনের নীরব বিপ্লব চলছে। তৈরি পোশাক শিল্পমালিকদের দাবি, ইউএসজিবিসি’র তালিকা অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি পরিবেশবান্ধব স্থাপনা এখন বাংলাদেশে! শুধু তাই নয়, পরিবেশবান্ধব কারখানার মান বিচারে বিশ্বের শীর্ষস্থানে থাকা তিনটি কারখানাও বাংলাদেশে। এর মধ্যে দুটি নারায়নগঞ্জে আর একটি পাবনার ঈশ্বরদী ইপিজেডে (রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা)।
আর ইউএসজিবিসির’ তালিকা অনুযায়ী বিশ্বের শীর্ষ দশে থাকা পরিবেশবান্ধব কারখানার সাতটিই বাংলাদেশের।
তাজরীন ও রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের তৈরি পোশাক নিয়ে নেতিবাচক প্রচারণা শুরু হয়। গার্মেন্টসের দরাদরিতে আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের শক্তি কিছুটা খর্ব হয়। তবে গত চার বছরে পরিবেশবান্ধব কারখানার আলোচ্য পরিসংখ্যান আন্তর্জাতিক অঙ্গণে এ খাতের ভাবমূর্তি বাড়াতে ভুমিকা রাখছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিবেশবান্ধব স্থাপনার তালিকায় থাকা ইউএসজিবিসি’র লিডারশিপ ইন এনার্জি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন (এলইইড বা লিড) সনদ পেয়েছে শীর্ষ কারখানা নারায়ণগঞ্জের রেমি হোল্ডিংস। ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে স্থাপন করা বিটপি গ্রুপের এ কারখানাটি নিট পোশাক তৈরি করে থাকে।
উদ্যোক্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পরিবেশবান্ধব কারখানায় পোশাক তৈরির জন্য আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কোন বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পরিবেশবান্ধব ধারণাটি এখন বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে।
প্লামি ফ্যাশন্সের প্রধান ফজলুল হক তার গ্রীন কারখানা প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন, ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার ঠিক পর পরই সিদ্ধান্ত নিলাম ইমেজ পুনরুদ্ধারে কিছু করতে হবে। রানা প্লাজাই যে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করে না, সেটি বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। এর পরই এ কারখানাটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই।
এ ধরনের কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়। তুলনামূলক মাঝারি ও ছোট উদ্যোক্তাদের জন্য এ অঙ্কের বিনিয়োগ করা কার্যত অসম্ভব। ফলে ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও এ ধরনের বিনিয়োগে আসা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। এ জন্য সহজ শর্তে ঋণ ব্যাংকঋণের বিষয়টি বহুল আলোচিত। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রীন ফাইন্যান্সিংয়ের আওতায় সহজ শর্তে (সিঙ্গেল ডিজিট সুদে) ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। তবে এটিও সবার জন্য সুবিধাজনক নয়। প্লামি ফ্যাশন স্থাপনে ঋণ নিয়েছিলেন ফজলুল হক। তিনি বলেন, আট শতাংশ ঋণ এক সময় সুবিধাজনক থাকলেও বর্তমানে বাস্তবতায় তা নয়। এ বিষয়ে নজর দেওয়া দরকার।
পরিবেশবান্ধব কারখানার সঙ্গে কারখানা সংস্কারের চলমান গতি অব্যাহত রাখা এবং অবকাঠামোগত অন্যান্য সুবিধাও তৈরি করতে হবে। ফলে ধীরে ধীরে এর সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে চ্যালেঞ্জের বিষয় হলো এ ধরনের কারখানা স্থাপনে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ এবং পরিবেশবান্ধব শর্ত পরিপালন করতে একটি বড় অঙ্কের খরচ চলমান রাখতে হয়।