সন্ত্রাসবাদ ও ফিতনা-ফাসাদ ইসলাম সমর্থন করে না
মাহফুজ আল মাদানী
ইসলাম শান্তির ধর্ম। নিরাপত্তা, মানবতা ও কল্যাণের ধর্ম। পরস্পর কল্যাণ কামনাই এর মলমূন্ত্র। অশান্তি, সন্ত্রাসবাদ, অন্যকে কষ্ট দেওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। প্রকৃত মুসলমান হতে হলে অন্যকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, সে-ই প্রকৃত মুসলমান, যার মুখ ও হাত (এর অনিষ্ট) হতে অন্য মুসলমান নিরাপদে থাকে’ (বুখারি)। মুসলিম শরিফের অন্য বর্ণনায় রয়েছে, একদা এক ব্যক্তি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, মুসলমানদের মধ্যে সর্বোত্তম কে? উত্তরে তিনি বললেন, যার মুখ ও হাত থেকে অন্য মুসলমান নিরাপদ থাকে। ইসলাম ধর্ম অন্যের জান-মাল, সম্মান এমনকি সর্ববিষয়ে নিরাপত্তা প্রদান করতে সর্বদা জাগ্রত। আমাদের প্রিয় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের রক্ত, সম্পদ ও সম্মানে হস্তক্ষেপ করা নিষিদ্ধ’। এমনকি কাউকে কথার মাধ্যমেও আঘাত দেওয়া যাবে না। হত্যা করা তো আরও জঘণ্য। হাদিসের বর্ণনানুযায়ী ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকি তথা পাপাচার এবং হত্যা করা কুফরী’ (বুখারি ও মুসলিম)। এতে পরিস্ফূট হচ্ছে যে, ইসলাম ধর্ম সন্ত্রাসাবাদ বা এহেন কাজে জড়িতদের প্রশ্রয় প্রদান করে না। কেননা, এগুলো অশান্তি সৃষ্টি করে। যা ইসলাম ধর্মের আদর্শের পরিপন্থী। শান্তির ধর্ম ইসলাম কখনো অন্যের প্রতি অস্ত্র উত্তোলন করতে শিক্ষা দেয় না। বরং সর্বদা নিরুৎসাহিত করেছে। এসব কার্যাবলিকে অমুসলমানদের কাজ বা যারা এ কাজ করবে তাকে মুসলমান আখ্যা দেওয়া যাবে না। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমাদের উপর অস্ত্র উত্তোলন করবে, সে আমাদের (মুসলমানদের) দলভুক্ত নয়’ (বুখারি ও মুসলিম)। এতে বোঝা যায় যে, সন্ত্রাসাবাদ মুসলমানদের কাজ নয় এবং মুসলমানরা তা সমর্থন করে না। মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাসরত অমুসলিম যারা বিদ্রাহী নয়, দেশের আইন-কানুন মেনে চলে, তাদের জান-মালের সংরক্ষণ করাও দেশের নাগরিকের উপর আবশ্যক। হাদিসে ঘোষিত হয়েছে, ‘তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতো এবং তাদের রক্ত আমাদের রক্তের মতোই সংরক্ষণযোগ্য’। এটাই হলো ইসলামের শিক্ষা।
সন্ত্রাসের দ্বারা মানবতার উপকার নয় অনিষ্টই সাধিত হয়ে থাকে। তাই, যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকা-কে ইসলাম ধর্মে ফিতনা-ফাসাদ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আর ফিতনা-ফাসাদ হলো যাবতীয় অশান্তির মূল। আল্লাহর মনোনীত ধর্ম ইসলামে বিশৃঙ্খলা, ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টির কোনো অবকাশ নেই। যার হাতে আমাদের সকলের প্রাণ সেই মহান সত্তার সুস্পষ্ট ঘোষণা, ‘নিশ্চয় আল্লাহতায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের পছন্দ করেন না (সুরা আল ক্বাসাস: ৭৭)। ফিতনা-ফাসাদ যা সমাজের ঐক্য বিনষ্ট করে, মানুষের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, ভয়ের সঞ্চার করে। একে অপরে শুরু হয় শত্রুতা। সমাজ হয়ে উঠে বিষফোঁড়ার মতো। এটি হত্যার চেয়েও জঘণ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ‘বস্তুত ফিতনা-ফাসাদ বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করা হত্যার চেয়েও কঠিন অপরাধ’ (সুরা আল বাক্বারা: ১৯১)। যা অমার্জনীয় অপরাধ। ইসলাম কখনোই তা সমর্থন করে না। কুরআনের ভাষ্যমতে, ‘যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকে হত্যা করে (সুরা আল মায়িদা: ৩২)। এখানে নফস বা প্রাণ দ্বারা শুধু মুসলমান উদ্দেশ্য নয়, বরং যেকোনো ধর্মের মানুষের প্রাণ। একটি প্রাণ ধ্বংস করা অনেক জঘণ্য অপরাধ। আর যদি সেই প্রাণ মুসলমান বা মুমিনের হয় তাহলে সেই অপরাধ এর চেয়েও আরও জঘণ্য। আল কুরআনের ভাষায়, ‘যে ব্যক্তি স্বেচ্ছাক্রমে মুসলমানকে হত্যা করে, তার শাস্তি জাহান্নাম, তাতেই সে চিরকাল থাকবে। আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হয়েছেন তাকে অভিশম্পাত করেছেন এবং তার জন্য ভীষণ শাস্তি প্রস্তুত রেখেছেন (সুরা আন নিসা: ৯৩)। পবিত্র ধর্ম ইসলামও এ রকম সীমালঙ্ঘনমূলক কর্মসমূহকে কখনো প্রশয় প্রদান করে না। তাই হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো খারাপ কাজ দেখে তবে সে যেন তার হাত দ্বারা তা প্রতিহত করে। যদি সক্ষম না হয় তার জিহ্বা অর্থাৎ কথার মাধ্যমে প্রতিহত করে। যদি তাতেও সক্ষম না হয় তবে অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করে। আর অন্তর দ্বারা ঘৃণা পোষণ করাই ঈমানের দুবর্লতা।’ আমাদের সকলের উচিত এসব সন্ত্রাসী কার্যাবলিকে প্রতিহত করা।
লেখক: এম ফিল গবেষক, প্রাবন্ধিক, কলামিস্ট
সধযভঁলহন@ুধযড়ড়.পড়স
সম্পাদনা: আশিক রহমান